সালমা ইসলামকে নবাবগঞ্জ আওয়ামীলীগের সমর্থন

316

সৌম্য রোজারিওঃ শুক্রবার দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে, নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ বর্ধিত সভায় আবদুল মান্নান খানকে বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়ে অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে সমর্থন জানায়। এসময় আওয়ামী লীগ নেতারা আবদুল মান্নান খানকে দেশের শীর্ষ দুর্র্নীতিবাজ হিসেবে আখ্যার্য়িত করে বলেন, দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকা অর্জন করেছেন আবদুল মান্নান। এলাকার মানুষের ভোট নিয়ে নির্বাচিত হয়ে সংসদ সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন, কিন্তু এলাকার উন্নয়নে কোনো কাজ করেননি তিনি। 

সভায় বক্তারা আরও বলেন, শেখ হাসিনা বিশ্বস্ত মনে করে তাকে মন্ত্রী বানিয়েছিলেন। কিন্তু অবৈধ ক্ষুধার তারনায় তার অপকর্ম ও হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি করে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশ পাওয়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাকে নিয়ে লজ্জিত।
বর্ধিত সভায় বক্তব্য দিতে গিয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার হারুন উর রশিদ বলেছেন, আবদুল মান্নান এক সময় বাম রাজনীতি করতেন। তিনি আওয়ামী লীগের পরগাছা। কোনো পরগাছার সঙ্গে আমরা নেই। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সর্বদলীয় সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী করেছেন সালমা ইসলামকে। সালমা ইসলাম মহাজোটের প্রার্থী।

আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য আবদুল বাতেন মিয়া বলেন, আবদুল মান্নান খান ক্ষমতা পেয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে চরম দুর্ব্যবহার করেছেন। তৃণমূল নেতাকর্মীদের তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি একাÍতা ঘোষণা করছি। শেখ হাসিনা আবদুল মান্নানকে বিশ্বাস করে প্রতিমন্ত্রী করেছিলেন। কিন্তু আবদুল মান্নান নেত্রীর বিশ্বাস ভঙ্গ করে দুর্নীতি করেছেন। শেখ হাসিনা কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেন না।

ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক কাজী শওকত শাহীন বলেন, আবদুল মান্নান খান দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। তিনি একজন শীর্ষ দুর্নীতিবাজ। ভণ্ড লোক। নবাবগঞ্জের কোনো উন্নয়ন করেননি। গত ৫ বছরে নেতাকর্মীদের ওপর আবদুল মান্নান স্টিম রোলার চালিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আবদুল মান্নান খান তৃণমূল নেতাকর্মীদের মানুষই মনে করেন না। নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে রেখেছেন। তার দুই ভাই ও ভাগ্নেকে দিয়ে এলাকায় অপকর্ম করাচ্ছেন। থানা নিয়ন্ত্রণও করতেন তারা।
ঢাকা মহানগর কৃষকলীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন বলেন, আবদুল মান্নানকে গতবার ভোট দিয়ে নবাবগঞ্জের ঐতিহ্য ও সম্মান হারাতে বসেছে এলাকাবাসী। অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে নির্বাচিত করে এলাকার ঐতিহ্য ও সম্মান রক্ষা করতে চান বলে মন্তব্য করেন তিনি। গত ৫ বছরে সালমা ইসলাম মানুষের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। তার ব্যবহারে এলাকাবাসী মুগ্ধ হয়েছেন।
বক্তারা বলেন, এবার আবদুল মান্নান খানকে ভোট নয়, নবাবগঞ্জ থেকে শূন্য হাতে বিদায় করতে হবে। নবাবগঞ্জবাসী কোনো দুর্নীতিবাজকে প্রশ্রয় দেয় না। মহাজোটের পক্ষে জাতীয় পার্টির মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে তারা ভোট দিয়ে জয়ী করবেন বলেও দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বর্ধিত সভায় বক্তারা আবদুল মান্নান খানের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, গত পাঁচ বছরে তিনি নেতাকর্মীদের ওপর স্বেচ্ছাচারিতা করেছেন। বিভিন্ন সময় নেতাদের গালাগাল করেছেন। পুলিশ দিয়ে হয়রানিও করেছেন। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে যারা আন্দোলন করেছে, জেল খেটেছে, মামলা-হামলার শিকার হয়েছেন তাদের মূল্যায়ন করেননি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ শুক্রবার বেলা ১১টায় নবাবগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে বর্ধিত সভার আয়োজন করে। সভাপতিত্ব করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন আহমেদ।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু

নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জব্বার ভুইয়া বলেন, আমরা আদর্শিক রাজনীতি করি। কাকে ভোট দিলে নবাবগঞ্জবাসী ভালো থাকবে, এলাকার উন্নয়ন হবে সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের এগুতে হবে। বিগত সময় আমরা শুধু আঘাত পেয়েছি। ওই আঘাতের হাত থেকে আমরা মুক্তি পেতে চাই।
উপজেলা যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও শিকারিপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আলীমুর রহমান খান বলেন, এই বর্ধিত সভা যে সিদ্ধান্ত নেবে সে অনুযায়ী কাজ করব।
নবাবগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমান্ডার ও নবাবগঞ্জ হেডকোয়ার্টার আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোশাররফ হোসেন দিলু বলেন, আবদুল মান্নান ৫ বছরে পূর্ত মন্ত্রণালয়কে নিজের সম্পত্তি হিসেবে ভেবে নিয়েছিলেন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দুর্নীতিবাজকে এলাকাবাসী চায় না। আওয়ামী লীগকে বিক্রি করছেন তিনি। দেশ স্বাধীন করেছি দুর্নীতিবাজের জন্য নয়। আবদুল মান্নানকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, নৌকার মাঝি ভালো না। তাকে বদলাতে হবে। নবাবগঞ্জের উন্নয়নে সালমা ইসলামকে আমরা বেছে নেব।
কৈলাইল ইউপি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৫ বছরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে গেছে।
নয়নশ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান আমজাদ হোসেন বলেন, সালমা ইসলামের জন্য নবাবগঞ্জবাসী এক হয়ে কাজ করবে। আবদুল মান্নান মানুষকে সম্মান করতে জানে না, সালমা ইসলাম মানুষকে সম্মান করেন এবং এলাকার উন্নয়নে তিনি নিবেদিত প্রাণ। আওয়ামী লীগ সরকার ১৪টি ইউনিয়নে ১৪ জন্য মুক্তিযোদ্ধাকে গাভী দিয়েছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গাভী না দিয়ে সেটা অন্যকে দিয়েছেন আবদুল মান্নান।
নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক দেওয়ান মোঃ আওয়াল বলেন, নবাবগঞ্জ থেকে দোহার বিতাড়িত করতে হবে। কোনো দুর্নীতিবাজ এলাকার উন্নয়নে কাজে আসবে না। উন্নয়ন করতে হলে মহাজোট প্রার্থী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামকে নির্বাচিত করতে হবে। কারণ তিনিও তো মহাজোটের অংশ। তাকেই আমরা বেছে নিতে চাই।
সভা শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্ধিত সভার সভাপতি অ্যাডভোকেট জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্ধিত সভায় সর্বসম্মতভাবে আবদুল মান্নান খানকে নির্বাচনে বর্জন করে সালমা ইসলামকে সহযোগিতা করা হবে। তাকে জয়ী করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা ডা. আবদুল হান্নান, নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা আবদুল ওয়াদুদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাইস চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের ভাইস চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক ভাস্কর কান্তি চৌধুরী, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শেখ হান্নান উদ্দীন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকর কমিটির সদস্য আবদুল ওয়াহেদ খান, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রাজ্জাক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবদুর রাজ্জাক, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক দোলোয়ার কবির, উপজেলা যুদ্ধকালীন কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা বদিউজ্জামান, নবাবগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোশাররফ হোসেন খান, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের সাংগঠনিক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা আবদুল বাছেদ প্রামাণিক, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মীর কাশেম, জুড়াইন ইউপি আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আবুল হোসেন মোড়ল, জুড়াইন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জেল হোসেন, বান্দুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সামসুল হক, শিকারিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ডা. কাওসার আহম্মেদ, জয়কৃঞ্চপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হোসেন, জয়কৃঞ্চপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোতালেব খান, শোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ হামিদ লেবু, শোল্লা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক দেলু খান, কৈলাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম, বাহ্রা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ইসহাক আলী, সুবেদউজ্জামান সুবেদ, বকসনগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন খান, বারুয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন মোল্লা, শিকারিপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম, যন্ত্রাইল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট দীপংকর সরকার, বান্দুরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সারোয়ার হোসেন, কলাকোপা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান এবং আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। 

আপনার মতামত দিন