সংবাদ ও সাংবাদিকতা

6716

News39 Journalism Training Centre : সংবাদ ও সাংবাদিকতা কী? সাংবাদিক কারা: সাংবাদিক বলা হয় কাদের? প্রেস কাউন্সিল এ্যাক্ট-এ সাংবাদিকের একটা সংজ্ঞা দেয়া আছে। এতে বলা হয়েছে : Working journalist means the activity or profession of writing for newspapers, magazines, or news websites or preparing news to be broadcast by a person who is employed as such in, or in relation to, any newspaper establishment and includes an editor, a leader writer, news editor, sub-editor, feature writer, reporter, correspondent, copy tester, cartoonist, news photography, caliograpist and proof reader.

তাহলে স্পষ্টত ধরে নেয়া যায়, সংবাদপত্র অফিসে কর্মরত সম্পাদক, উপ-সম্পাদকীয় লেখক, বার্তা সম্পাদক, সহ-সম্পাদক, ফিচার সম্পাদক, প্রতিবেদক, প্রতিনিধি, লিপিবদ্ধকার, কার্টুনিস্ট, আলোকচিত্রী ও প্রুফ রিডার-সকলেই সাংবাদিক। এঁরা খবরের সন্ধান করেন, খবরের পেছনে ছোটেন, খবর নির্বাচন করেন, সম্পাদনা করেন, সংশোধন করেন। সাংবাদিকরা যা করেন, তা হচ্ছে সাংবাদিকতা। অন্যদিকে সাংবাদিকতা হচ্ছে কাজ। এঁদের কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ করা, প্রতিবেদন লেখা এবং সম্পাদনা করা।

খবর কাকে বলে:

খবর বা সংবাদ-এর নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। তবে এক কথায় বলা যায় সংবাদ হলো চলতি ঘটনার বস্তুনিষ্ঠ বিবরণ, যা পাঠকের আগ্রহ উদ্দীপিত করে। এ কথাটাকে একটু কঠিন করে বললে এভাবে বলা যায়: স্থিতাবস্থার পরিবর্তনে সৃষ্ট ঘটনা, যাতে সমাজে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় এবং যা অবশ্যই সত্য, বস্তুনিষ্ঠ ও গুরুত্বপূর্ণ, তাকে খবর বা সংবাদ বলে। new হচ্ছে নতুন আর সেই new -এর বহুবচন হচ্ছে news। এজন্য সংবাদ বিশ্লেষকরা বলেন, news must be new।

খবরের বিশেষত্ব কী:

আমাদের মনে রাখতে হবে-যা দেখি, তা খবর; যা জানি, তা প্রেক্ষাপট (background) এবং যা অনুভব করি, তা মতামত। খবরের যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিশেষত্ব আছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : ক. সংবাদ কোনো ঘটনা নয়, ঘটনার প্রতিবেদন মাত্র; খ. খবর সাধারণত কোনো নতুন বা সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিবেদন গ. সংবাদ অবশ্যই নির্ভুল হতে হবে ঘ. সংবাদের তথ্যগুলোকে অবশ্যই বস্তুনিষ্ঠ হতে হবে ঙ. প্রতিটি প্রতিবেদনই হবে নিরপেক্ষ বা ভারসাম্যপূর্ণ চ. সংবাদ হতে হবে সংক্ষিপ্ত ও স্পষ্ট।

খবর সম্পাদনা :

খবর যাঁরা সম্পাদনা করেন তাঁদের বলা হয় সহ-সম্পাদক বা subeditor . Subbing মানে হচ্ছে বিন্যাস, আর editing মানে হচ্ছে সম্পাদনা। তাই খবর সম্পাদনা মানে পরিমার্জন, সংশোধন ও সংযোজন। রিপোর্টারদের বলা হয়ে থাকে রণক্ষেত্রের সৈনিক এবং সহ-সম্পাদকদের বলা হয় সংবাদপত্রের অভিনন্দিত নায়ক (Unseen Hero of Newspaper)। খবর নির্বাচন ও বাতিলের ক্ষেত্রে ‘নিউজ সেন্স’ (সংবাদ জ্ঞান)-ই মুখ্য ব্যাপার। সংবাদ জ্ঞানই সংবাদ মূল্য নির্ধারণ করে।

অন্য খবর  শীতকালে অসুখ থেকে শিশুকে রক্ষায় যা করবেন

সাব-এডিটরের কাজ:

সাব-এডিটরের তিনটি কাজ। সেই তিনটি কাজ হচ্ছে তিনটি উ-এর মোকাবেলা। প্রথম ‘c’ carelfy : নাম, সংখ্যা, তথ্য, শব্দ, তারিখ ইত্যাদি নিরীক্ষণ। দ্বিতীয় ‘c’ checking : ভারসাম্য রক্ষা, স্পষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন, বাহুল্য বর্জন, কম কথা, c (পরিভাষা) ও উফধডদণ্র (বারবার ব্যবহারের কারণে ধার নষ্ট হওয়া) এবং সর্বশেষ c’ condence : অপ্রয়োজনীয় অংশ বাদ দেয়া এবং সাবলীল উপস্থাপনা।

সাব-এডিটরের দায়িত্ব:

সাব-এডিটরের দায়িত্ব অন্য অনেকের চেয়ে বহু বেশি। তাঁদেরকে বলা হয়ে থাকে last check post : (শেষ সীমান্ত ফাঁড়ি)। এজন্য সংবাদটি প্রেসে দেয়ার আগে ভালো করে পড়ে নিতে হবে এবং দেখতে হবে-খরবটি সংক্ষিপ্ত ও compact হয়েছে কিনা; ভুল ও বাহুল্য বর্জন করা হলো কিনা এবং অস্পষ্টতা দূর হয়েছে কিনা। খবরের ভালো lord cliff বা শিরোনাম দেয়াও সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব।

সংবাদপত্রের লক্ষ্য :

to infrom বলেছেন : ‘অভ্যাস ও কৌতূহলের কারণে মানুষ সংবাদপত্র পড়ে’। এজন্য সংবাদপত্রে কর্মরত সাংবাদিকদের সংবাদপত্রের লক্ষ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়। আমরা জানি পত্রিকার লক্ষ্য তিনটি : ১. অবগত করা ২ বিনোদনের ব্যবস্থা (to recration) এবং ৩. শিক্ষিত করা (কম educated)। তবে সবক্ষেত্রে আমাদের সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুসরণ করে অগ্রসর হতে হয়।

সাংবাদিকতার নীতিমালা:

সাংবাদিকতার নীতিমালা তৈরি হয় দেশের মানুষের মূল্যবোধ থেকেই। code of ethics (Ethics of journalism)-এ সাংবাদিকের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বলা থাকলেও আইনটা কোনো ব্যাপক নয়, দায়িত্ববোধই মূল ব্যাপার। সাংবাদিকের বিবেকই বলে দেবে-কোনটা ছাপবো, কোনটা ছাপবো না। সাংবাদিকদের সব সময় মনে রাখতে হয় সত্যই এ পেশার মানুষের একমাত্র লক্ষ্য। তবু নীতিমালায় যেসব বিষয় উল্লেখ আছে, তা এখানে সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরছি:

ক. ভাষাকে অবশ্যই শোভনভাবে উপস্থাপন করতে হবে
খ. অপরাধ সম্পর্কে লিখতে গিয়ে মনে রাখতে হবে যেন কদর্য বিষয় সংবাদে চলে না আসে
গ. সংবাদ যেন অতিরঞ্জিত না হয়
ঘ. অপরাধীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হতে হবে
ঙ. ‘গুজব’-এর উপর নিউজ তৈরির আগে তা অবশ্যই যাচাই করতে হবে
চ. কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা যাবে না। ব্যক্তিটি যদি পাবলিক ফিগার হয়, তাঁর জীবনের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করা যাবে
ছ. অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার আছে, তাই তাঁর বক্তব্য বা প্রতিবাদ ছাপানোর ব্যবস্থা করতে হবে
জ. আদালতের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক অপরাধকে সবসময় নিরুৎসাহিত করতে হবে
ঝ. সমাজ গঠনে ভূমিকা রাখতে হবে
ঞ. সংবাদের কোনো তথ্য বা বক্তব্য যেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না করে, সেদিকে নজর রাখতে হবে
ট. প্রভাবিত হয়ে কিংবা উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিউজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে (junket)
ঠ. স্ব স্ব পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি অনুসরণ করতে হবে।

অন্য খবর  শেখ হাসিনা-কে পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করার লক্ষ্যে বীর মুক্তিযুদ্ধের প্রতিনিধি সভা।

সম্পাদকীয় নীতি :

সম্পাদকীয় নীতি বা editorial policy -তে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এই বিষয়গুলোর উপর নির্ধারিত হয় সম্পাদকীয় নীতিযেমন :

১. প্রচলিত আইন : প্রতিটি কর্মরত সাংবাদিককে দেশের প্রচলিত আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হয়।

২. মালিকের স্বার্থ : মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থ যেন অক্ষুণ্ন থাকে সে ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

৩. মালিকের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি : মালিকের ব্যবসায়িক স্বার্থের সাথে তাঁর রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিতে হয়। রাজনীতি বিষয়ে তিনি কী মত পোষণ করছেন, সেই মতানুসারে সংবাদের ট্রিটমেন্ট জড়িত।

৪. প্রেসার গ্রুপ : সংবাদপত্রে কাজ করতে গেলে কোনো সময় কোনো না কোনো গ্রুপের প্রেসারে থাকতে হয়। এই গ্রুপের সাথে যথাসাধ্য চেষ্টার মাধ্যমে সমঝোতা বজায় রেখে নিউজ ছাপতে হয়।

৫. পাঠকের চাহিদা : পাঠকই সংবাদপত্রের মূলধন। এদের চাওয়া-পাওয়া, ভাবনা-চিন্তার প্রতি সাংবাদিকদের শ্রদ্ধাশীল হতে হয়। এরা কী চায়-তা বুঝে নিয়ে পত্রিকাকে ওভাবে সাজাতে হয়।

সহ-সম্পাদকের গুণাবলী:

‘সাংবাদিকতার অন্য অর্থ-হচ্ছে সর্ব বিষয়ে ধারণা রাখা’-কথাটি আবুল মোমেনের। রাজনীতি-অর্থনীতি-সংস্কৃতি-সাহিত্য-ক্রীড়া-ভূগোল-ইতিহাস-সব বিষয়ে আগ্রহ থাকা এবং যথাসাথ্য এগুলো দখলে রাখা একজন সাংবাদিকদের জন্য জরুরি ব্যাপার। ১৯৯৭ সালে পিআইবির একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অধ্যাপক মোহাম্মদ খালেদ ক্লাশ নেয়ার সময় বলেছিলেন : ‘সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় দরকার sense of responsibility(দায়িত্ব জ্ঞান) সমাজ, দেশ, জাতি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ মনোভাব থেকে কাজ করতে হবে। আত্মমর্যাদাবোধ ও সততা থাকতে হবে’।

অধ্যাপক সাখাওয়াত আলী খান বলেছিলেন, “সাংবাদিকদের দ্বিমুখী মন ( bifocal mind ) থাকতে হবে এবং থাকতে হবে সমানুভূতি (empathy)।”

অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম নাসিম সহ-সম্পাদকদের গুণাবলী সম্পর্কে বলেছিলেন,

ক. মানসিক আবেদন, অনুভূতি, রসবোধ, কোনো কোনো বিষয়ে মুক্তবুদ্ধি এবং বিষয়ের গভীরে যাওয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে।
খ. সুবিন্যস্ত মনের শৃঙ্খলাবোধ থাকতে হবে।
গ. মাত্রাজ্ঞান থাকতে হবে।
ঘ. ঠাণ্ডা মাথায় পরিস্থিতি সামাল দেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে
ঙ. দ্রুত অথবা নির্ভুল কাজ করতে হবে
চ. সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকতে হবে
ছ. পাঠকের দৃষ্টিকোণ থেকে খবর পর্যালোচনা করতে হবে
জ. সত্য-মিথ্যা বিবেচনার ক্ষমতা থাকতে হবে
ঝ. সংবাদ বিষয়ক আইন ও নীতিমালা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে এবং
ঞ. শারীরিক সুস্থতা থাকতে হবে।

আপনার মতামত দিন