ম্যাজিস্ট্রেট বউয়ের কথায় নিজের গর্ভধারিনী মাকে রেলস্টেশনে ফেলে রেখে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে এক বিসিএস কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। গত ২৯ মার্চ বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন ব্যারিস্টার এস এম ইকবাল চৌধুরী।
তার পোস্টটি তুলে ধরা হলো-
‘কয়েকদিন পর্যন্ত শারীরিক অবস্থা ভালো যাচ্ছে না। ব্লাডপ্রেসার ডিস্টার্ব করছে। আর বন্ধুরা বলে, আমার মাথার মাদারবোর্ড নাকি কাজ করছে না- হা হা হা। তারপরও রেলস্টেশন গিয়ে দু’জন হাঁটাহাঁটি করছি। কারণ আমাদের একজন সিনিয়র কলিগকে রিসিভ করতে অর্থাৎ ট্রেনের অপেক্ষায়। কিছুক্ষণ পর একটি জায়গায় বসে আছেন এক বৃদ্ধা, যার বয়স সত্তর।’
তিনি একজন মা। মায়ের মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে- ‘খোকা কোথায় গেলি বাবা’। মায়ের কাছে জানতে চেয়েছি, খোকা কে?
তিনি বললেন,আমার একমাত্র ধন (ছেলে)। তার সঙ্গে একটা ছোট ব্যাগ আছে। আমরা তার অনুমতি নিয়ে ব্যাগের বাহ্যিক পকেটে হাত প্রবেশ করালাম যাতে কোনো ফোন নম্বর পাওয়া যায় কিনা। একটি চিঠি পেয়েছি তাতে কী লেখা ছিল নিম্নে সন্নিবেশিত।
ততক্ষণে ট্রেন উপস্থিত আর অতিথিসহ সিদ্ধান্ত নিলাম মাকে কোনো বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করিয়ে দেয়ার। স্টেশন মাস্টারের রুমে প্রবেশ করে নিজেদের পরিচয় দিলে তিনি যথার্থ সম্মান দেন। পরে আমরা মায়ের দুর্ঘটনার কথা বলাতে তিনি মাকে নিজ চেয়ারে বসালেন।
মায়ের সন্তান একজন বিসিএস কর্মকর্তা। লোকের বাড়িতে কাজ করে আর রাতে কাপড় সেলাই করে বিসিএস ক্যাডারকে পড়িয়েছেন। আমি চেয়েছিলাম, সেই বদমাশ ছেলের নামসহ বিস্তারিত তুলে ধরতে। কিন্তু মায়ের অনুরোধ যাতে তা না করি। মায়ের মতে, সন্তান ও বৌমা ম্যাজিস্ট্রেট আর তাদের সামাজিক মর্যাদা আছে। হায়রে মা…সন্তানের সম্মান মায়ের কাছে কতো মূল্য আর কুলাঙ্গারের কাছে মা কতো ‘বিপদ’!!
মায়ের বর্তমান ঠিকানা বৃদ্ধাশ্রম। তাকে বৃদ্ধাশ্রমে ভর্তি করার সময় অভিভাবকের কলামে আমার নাম লিখাতে পেরে গর্বিত।
একদিন বৃদ্ধাশ্রম থেকে ফোন আসলে রিসিভ করি। অপর প্রান্তে মায়ের কণ্ঠে- ‘খোকা, আমার মন ভালো নেই, যদি পারো একটু দেখতে এসো।’
ছুটে গেলাম জননীর কাছে। খোকা হয়ে তখন দেখি মাকে ডাক্তার অবজারভেশনে রেখেছেন। মায়ের কপালে হাত রাখতেই তিনি চোখ খুলে মুচকি হেসে পানি চাইলেন এবং আমি তাকে পানি খাওয়াই।
তিনি বলেন, খোকা বেঁচে থাকবি সিংহ হয়ে। একদিন মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে জান্নাতগামী হলেন।
গতমাসে ঘটনাটি ঘটলেও আজ (২৯ মার্চ) এ বিষয়ে লিখছি কারণ চোখের ঝর্ণাপ্রবাহ লেখার ক্ষমতাকে প্লাবিত করে যার ফলে বারবার বাধা পাচ্ছিলাম। কোনো মায়ের পরিণতি যেন এমন না হয়।