মোবারক হো মাহে রমজান: জীবনযাপন বদলে দেয়ার মাস

389

“মোবারক হো মাহে রমজান”। এসেছে সিয়াম সাধনার মাস মাহে রমজান। সোমবার সন্ধ্যায় চাঁদ দেখার সঙ্গে সঙ্গে জনজীবনে এসেছে পরিবর্তন। সবখানেই চলছে সেহরি, ইফতার আর তারাবির প্রস্তুতি।

 সন্ধ্যার পর থেকেই কর্মব্যস্ত মানুষ বাড়ি ফিরতে শুরু করেন। উদ্দেশ্য তারাবির নামাজ। এ কারণে দোহার-নবাবগঞ্জ সহ দেশের অন্যান্য মফস্বল শহরেরও রাস্তাঘাট অনেকটা ফাঁকা হতে থাকে।

রমজানের দিনগুলো আর অন্য সময়ের চেয়ে একেবারেই আলাদা। সেহরি খাওয়ার পর ফজরের নামাজ পড়ে সবাই ঘুমিয়ে পড়েন। ওঠেনও একটু দেরিতে। আর রমজান উপলক্ষে অফিসের সময়সূচিতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন। স্কুল-কলেজ তো বন্ধ থাকবে বলে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে। অবশ্য পুরো রমজানে বন্ধের বিষয়টি অনেকদিন পর এবারই প্রথম। এর আগে ১৫ রমজান পর্যন্ত স্কুল-কলেজ খোলা ছিল। তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তের মূলে যানজট। রমজানে যানজট কমাতেই এ ধরনের উদ্যোগ।

অফিসের সময়সূচি এবার নয়টা থেকে সাড়ে তিনটা। নির্ধারিত সময়ের আগে অফিস ছুটি। কারণটাও স্পষ্ট, ইফতারি। সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েন ঘরে ফিরতে। শুরু করেন ইফতারের প্রস্তুতি।

ইফতার ঘিরে ব্যবসাও জমজমাট। নানা রকমের পসরা সাজিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। অদ্ভূত ব্যাপার হলো, ইফতারির এত বেশি আইটেম করার পরও সবগুলোই বিক্রি হয়, ‍উদ্বৃত্ত থাকে না। 

অন্য খবর  মিজানুর রহমান শমশেরীর কবিতা: জীবনটা এক ছোট্ট নদী, কালের বাল্মীকি

ইফতারের পর মসজিদে মসজিদে চলে তারাবির নামাজ। মসজিদে থাকে উপচে পড়া ভিড়। অবশ্য রমজানের শেষদিকে এ ভিড় আর থাকে না। এভাবেই রমজানের দিনগুলো কাটে অনেকটা রুটিনমাফিক। বদলে যায় দৈনন্দিন জীবনযাত্রার নিয়মাবলি।

লক্ষণীয় বিষয় হলো, রমজানে তুলনামূলক অপরাধ কমে আসে। মানুষের মাঝে আসে পরিবর্তন। তবে ঈদের আগে আগে হঠাৎ করেই অপরাধ বেড়ে যায়। এ মাসেই আবার অনেকের মেজাজটা যেন একটু চড়া থাকে। হালকা বাকযুদ্ধে নেমে পড়েন অনেকে।

যারা রোজা থাকেন, তারা তো সেহরি থেকে ইফাতর পর্যন্ত পানাহার থেকে বিরত থাকেনই। তবে যারা রোজা থাকেন না, প্রকাশ্যে খাওয়া থেকে বিরত থাকেন তারাও। বেশিরভাগ হোটেল-রেস্তোরাঁই বন্ধ থাকে। তবে যেগুলো খোলা থাকে, সেগুলোতে প্রবেশের মুখে থাকে পর্দা টাঙানো।

সবাই কথায়, কাজে, চিন্তাভাবনায় ও আচার-আচরণে সংযমী থাকার চেষ্টা করেন।

শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকাকেই রোজা বলে না, প্রবৃত্তি ও রিপুকেও দমন করতে হয়। তা করে আত্মশুদ্ধি লাভের চেষ্টায় থাকেন সবাই। এরই মাধ্যমে মহান আল্লাহর কৃপা ও অনুকম্পা লাভের সৌভাগ্য ও সুযোগ গ্রহণে সচেষ্ট হন ধর্মপ্রাণ মুসলমান।

অন্য খবর  আজ ২০ ফেব্রুয়ারি: ইতিহাসের এই দিনে

পবিত্র কুরআনের উক্ত আয়াতে সেহরি ও ইফতারের সময় আল্লাহ পাক নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন।

তোমরা পানাহার করো, যে পর্যন্ত না তোমাদের কাছে ভোরের কালো রেখা থেকে সাদা রেখা প্রকাশ পায়। অতঃপর রাত পর্যন্ত সিয়াম বা রোজা পালন করো। (সুরা বাকারা: ১৮৭)

বুখারি ও মুসলিম হাদিসে হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, ‘সূর্যাস্তের পর যখন পূর্বদিক থেকে অন্ধকার হয়ে আসে এবং দিনের আলো পশ্চিম দিক থেকে সম্পূর্ণ চলে যায় তখন রোজাদারদের জন্য ইফতারের সময়’ (আরো দেখুন তফসিরে ইবনে কাসীর, দ্বিতীয় খ-, পৃ. ৯৮ ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ)।

আল্লাহ পাক আমাদের বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করুন এবং পবিত্র কুরআনের আদেশ-নিষেধ মেনে চলার তৌফিক দান করুন। আমিন।

আপনার মতামত দিন