বিপুল কর্মযজ্ঞ শেষে ৬০ বছরের পুরনো ভবন সংস্কারের মাধ্যমে নতুন আঙ্গিকে আসছে রাজধানীর পাঁচ তারকা হোটেল ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’। অবকাঠামোগত পরিবর্তন এনে যুক্ত করা হয়েছে দেশীয় সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও মোগল স্থাপত্যশৈলীর আবহ।
পর্যটন ও আতিথেয়তা সেবা খাতে নতুন আঙ্গিকে আসছে ঢাকার পাঁচ তারকা হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। ‘শেরাটন হোটেল’ নামেই এটি বেশি পরিচিত। প্রায় তিন দশক পর আবার এর ব্যবস্থাপনায় যুক্ত হচ্ছে ইন্টারকন্টিনেন্টাল। তাই নাম বদলেছে। ১৯৮৩ সালের পর আবারও ‘ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা’ নামে চালু হবে পাঁচতারকা হোটেলটি।
ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর বাকি পাঁচতারকা মানের হোটেলগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হোটেলটি সংস্কার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডের (বিএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মোকাব্বির হোসেন বলেন, ‘আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর দুই মাস পর থেকে হোটেলটির বাণিজ্যিকভাবে কার্যক্রম শুরু হবে। কারণ আন্তর্জাতিক মানের এ ধরনের হোটেলের নিয়মানুযায়ী, উদ্বোধনের পর কিছুদিন পরীক্ষামূলকভাবে অপারেশন করতে হয়। আশা করা হচ্ছে, পরীক্ষামূলক অপারেশনের পর দেশি-বিদেশি অতিথিদের কাছে ফের জনপ্রিয় হয়ে উঠবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা।’
সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রতিটি রুমের আকারের পাশাপাশি বিন্যাসেও এসেছে পরিবর্তন। আগে রাজকীয় প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট ৬টি থাকলেও এখন করা হয়েছে ৫টি। পরিবর্তনের ক্ষেত্রে স্যুট রুম ছাড়াও ডিলাক্স রুমগুলোর আয়তন আগের চেয়ে বেড়েছে। আগে হোটেলে অতিথিদের জন্য ২৭০টি রুম ছিল। সেগুলোকে ভেঙে এখন করা হয়েছে ২২৬টি। প্রতিটি রুমের আয়তন ছিল ২৬ বর্গমিটার। বড় করার ফলে একেকটি রুমের আয়তন দাঁড়িয়েছে ৪০ বর্গমিটার। নতুন টাইলস, আধুনিক স্যানিটারি উপকরণসহ প্রতিটি রুমের বাথরুমে থাকছে নতুন বাথটাব। রুমভেদে ৩২ ইঞ্চি থেকে শুরু করে ৪৮ ইঞ্চি টিভি রাখা হয়েছে। বাইরের ফুলগাছ থেকে শুরু করে ভেতরের আসবাবে রয়েছে পরিবর্তনের ছোঁয়া।
নতুন অবকাঠামোতে সুইমিংপুল নিয়ে যাওয়া হয়েছে হোটেলের ছাদে। এটি এখন হয়ে উঠেছে বিশালাকারের ‘ইনফিনিটি সুইমিং পুল’। থাকছে অত্যাধুনিক স্পা, জাকুজ্জি ও পুলসাইড বার।
আগে বলরুম ও উইন্টার গার্ডেনসহ মিটিং রুমগুলো বিভিন্ন দিকে ছড়ানো-ছিটানো ছিল। সংস্কারের মাধ্যমে ২১ হাজার বর্গফুটের মধ্যে থাকবে মোট ৯টি হল। এগুলোর নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে আগের গ্র্যান্ড বলরুমকে দু’ভাগ করে ‘রূপসী বাংলা উইন্টার গার্ডেন-১’ ও ‘রূপসী বাংলা উইন্টার গার্ডেন-২’ রাখা হয়েছে। আগের বলরুমের জায়গায় স্থান পেয়েছে রান্নাঘর। আছে পাঁচটি সুসজ্জিত রেস্তোরাঁ।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাঁচতারকা হোটেলে যেসব সুবিধা রয়েছে, সবই থাকবে ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকায়। এর মধ্যে রয়েছে প্রশস্ত লবি, মিনি বার, ইন-রুম চা-কফির সেবা, জামাকাপড় ইস্ত্রির সুবিধা, জাতীয় দৈনিক, ইলেক্ট্রনিক নিরাপত্তা, উচ্চগতির ইন্টারনেট সংযোগ, এক্সপ্রেস চেক-ইন, বিজনেস সেন্টার, ওয়াই-ফাই ইন্টারনেট, এক্সিকিউটিভ ক্লাব লাউঞ্জ, ব্যবসা কেন্দ্র, মিটিং কক্ষ, উপহারের দোকান, গাড়ি ভাড়া, লিমুজিন ও এয়ারপোর্ট শাটল সার্ভিস, ফিটনেস সেন্টার, বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণের দিকনির্দেশনা সংবলিত গাইড বই। উচ্চগতির ইন্টারনেটসহ ডিজিটাল সব প্রযুক্তি ও সেবার ছোঁয়া থাকবে এই হোটেলে।
১৯৬৬ সালে শাহবাগে প্রায় সাড়ে চার একর জমির ওপর যাত্রা শুরু করে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল ঢাকা। ১৯৮৪ সালে এটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেয় শেরাটন। ২০১১ সালের এপ্রিলে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ সার্ভিসেস লিমিটেডকে (বিএসএল) বুঝিয়ে দেয় শেরাটন কর্তৃপক্ষ। ওই সময় এর নাম বদলে রাখা হয় ‘রূপসী বাংলা’। পরে ইন্টারকন্টিনেন্টাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের ৩০ বছরের চুক্তি হলে হোটেলটির সংস্কার শুরু হয়। ২০১৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর থেকে সংস্কারের জন্য বিরতিতে যায় এই হোটেল। সংস্কারের কাজ শেষে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলস গ্রুপের (আইএইচএস) কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়।