তরুণদের ভাবনা: আমরা মৃত্যু ঝুকি ঘাড়ে করে ঘুরে বেরাচ্ছি

270
মৃত্যু ঝুকি ঘাড়ে

প্রথম যখন শুনলাম তখন সুদূর চীনে তার অবস্থান। তারপর ধীরে ধীরে সে একটি একটি দেশে তান্ডব চালিয়ে অতপর চলে আসলো বাংলাদেশে। এরপর একটি একটি উপজেলা ইউনিয়ন করতে করতে একসময় আমার ইউনিয়ন পর্যন্তও পৌছে গেলো। সারা বিশ্বের এবং আমাদের দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণি বিখ্যাত মানুষকে কেড়ে নিয়ে চলে এলো আত্মীয়-স্বজনদের আওতার মধ্যে। যদিও নিজ এলাকা এখনো মুক্ত আছে তবে এখন আসলে অবচেতন মনে অপেক্ষায় আছি কোনদিন যেনো শুনবো আমার পাশের বাড়ি বা আমি নিজেই এটিতে আক্রান্ত।  কিন্তু বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এইটাই সত্যি যে সুদূর চীনে অবস্থান কালেও যতখানি সাবধানতা বাঙ্গালী অবলম্বন করেছে ধীরে ধীরে এখন তার ছিটেফোঁটা ও নাই। যদিও এখন আমরা ঘাড়ের উপর আমাদের মৃত্যু ঝুকি নিয়ে চলছি।

কেনো এতো অবহেলা? আমার উপলব্ধির উপরে ভর করে আমি কয়েকটি কারন  ধারনা করি।

১/ মনোবিজ্ঞান/সাইকোলজিক্যালঃ মানুষের ক্ষেত্রে তার সাইকোলজির মজার একটি ব্যাপার হচ্ছে যে সে একবার কিছুতে অভ্যস্ত হয়ে পরলে তারপর সেটাকে আর তার কিছু মনে হয় না। যেমন দেখবেন নিয়মিত ডায়েবেটিস টেস্ট করা মানুষরা সুই এর আচরে তেমন ব্যাথা পায় না। অর্থাৎ একই যায়গায় একই সমপরিমাণ আঘাত নিয়মিত হলে একসময় সয়ে যায়। আসলে আমাদের ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। আমরা ভয় পেয়েছি প্রথমে কিন্তু যেহেতু এখনো আমাদের দেশে ভয়ংকর রূপের মহামারী শুরু হয় নি তাই এখন আমরা এটিকে আর কিছু মনেই করছি না।  এই গুন আমাদের বাঙ্গালী জাতির একটু বেশিই। আমরা শুরু শুরুতে যতটা ভয় পেতাম এখন আর তার বিন্দু পরিমাণ পাই না। তার কারন? ধীরে ধিরে মানুষ এখন এটিতে অভ্যস্ত হয়ে এটিকে এখন আর কিছু মনেই করছে না। তারা এটিকে অবহেলা করছে এখন। তাই স্বাস্থ্যবিধি বা সামাজিক দুরত্বের বালাই আমাদের মাঝে আর নেই।

২/ পূর্বলব্ধ অভিজ্ঞতাঃ পূর্বলব্ধ অভিজ্ঞতা বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি যে। সাধারণ জনগন এখন এটিকে কলেরা, জন্ডিস, যক্ষা, প্লেগ, বসন্ত ইত্যাদি যেসব রোগে গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত সেইরকম তুলনা করছে। তাদের মতে পূর্বেও মানুষ এগুলোকে এমনই ভয় পেত। তখনও এগুলোর চিকিৎসা বা ঔষধ ছিলো না।  তবুও মানুষ তো বেচে ছিলো। এখন এগুলো সাধারণ রোগ হিসাবে ধরা হয়। তাদের ধারনা এটিও একটি বা দুটি প্রজন্মকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তারপর নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই আমাদের এটির সাথে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। কোনো সামাজিক দুরত্ব বা স্বাস্থ্যবিধির দরকার নেই। এটাকে আসলে গোয়ার্তমি বলবো নাকি অসচেতনতা ঠিক বুঝতে পারছি না।

অন্য খবর  তরুনদের ভাবনাঃ দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়; দায়িত্ব আমাদেরও আছে

৩/ অর্থনৈতিকঃ ক্ষুধার জ্বালা সেই বুঝে যে অনাহারে দিন কাটিয়েছে। দুর্ভিক্ষে মানুষ মানুষ খেয়ে ফেলেছে এমন নজিরও আছে। আমরা নিম্ন অর্থনীতির দেশ সব থেকেও কিছুই নেই। ব্যাপারটাই এমন। তাই ব্যাপারটা এমন দাড়িয়েছে যে শুধু মুখে মুখেই অনেক কিছু পেয়েছে জনগন কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ব্যক্তি আর সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে সারাদেশ জুড়ে দেওয়া হয়েছে যথা সাধ্য। কিন্তু আমাদের সব কিছু বন্ধ মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত।  ৩ মাস বন্ধ ছিলো সব। সব মিলিয়ে একটি পরিবার হয়তো ১/১.৫ মাসের খাবার পেয়েছে কিন্তু বাকি ১.৫ মাস সে বা তার পরিবার কি করবে? কিভাবে তারা বেচে আছে? ক্ষুধার জ্বালার কাছে আসলে এইসব ভাইরাস এর ভয় তুচ্ছ, অতি তুচ্ছ। এদেশের মানুষ ক্ষুধার যন্ত্রণার সাথে পরিচিত করোনার যন্ত্রণার সাথে না। তাই ক্ষুধার ভয়েই তারা ঘরে থাকতে চায় না।

৪/ সমাজের সমন্বয়হীনতাঃ সমন্বয়হীনতা বলতে আমি বোঝাতে চাচ্ছি আমাদের দেশের দৃষ্টিভঙ্গির ব্যাপারে। যেমন এদেশের ধনী এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত পর্যায়ের কোনো চিন্তা নেই। তাদের যথেষ্ট রয়েছে আর দরিদ্র শ্রেণীর মানুষেরা অন্যের সহায়তা পাচ্ছে কমবেশি। কিন্তু বড় সমস্যায় আছে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত। তাদের না আছে অনেক সম্পদ না আছে জমা সঞ্চয়। তাছাড়াও তারা সাহায্য সহযোগিতা খুব কম পাচ্ছে কিংবা লজ্জায় সম্মানের কারনে নিতেও পারছে না। এই শ্রেণীর হয়ে পড়েছে দিশেহারা। এরা এখন জীবনের চেয়ে জীবিকা বড় করে দেখছে যেটি স্বাভাবিক বলেই মনে করেন তারা। আসলে তাদের আর কিছু যে করার ও নেই। মানুষের কাছে যা ছিলো সব কিছু দিয়েই এতোদিন আয় না করে চলেছে। এখন তো সেগুলোও শেষ। মানুষ এখন দিশেহারা বিভ্রান্ত কিভাবে কি করবে তা বুঝতে পারছে না! অর্থনৈতিক এই ধসের ধাক্কা সামাল দিয়ে উঠতে কতো সময় যে লাগবে তা এখন আর ধারণাও করা যাচ্ছে না।

৫/ অসচেতনতাঃ আসলে জাতি হিসাবে আমরা কখনোই সচেতন না। এটি আমাদের এই করোনা মহামারীকে অবহেলা করার অন্যতম কারন।  আমরা তো মনে করি আমরা করোনার চেয়েও শক্তিশালী। তাই আমাদের দেশে লকডাউনে দোকান খুলতে না পারায় শুকনো পুকুরে চা বিক্রি করা হয় এবং আড্ডা দেওয়া হয়। দেশে মানুষ অনাহারে মরলেও আমাদের ঈদ উদযাপন থেমে থাকতে পারে না। সে দেশে এখনো ভয়ংকর ভাবে মহামারী শুরু হয়নি এটি আল্লাহর অশেষ রহমতের নিদর্শন।

অন্য খবর  বাহ্রা-অরঙ্গবাদ বাঁধের নাম-বিতর্ক প্রসঙ্গে

৬/ধর্মীয় কারনঃ প্রতিটি ধর্মের কিছু কিছু ভুল অপব্যাখ্যা বের করে একদল মানুষ এটি সম্পর্কে মানুষের মাঝে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। ইসলামের একটি হাদিসের অর্ধেক নিয়ে অপব্যাখ্যা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। আর ধর্মভীরু মুসলমানদের বিভ্রান্ত করে সচেতনতা নষ্ট করছে। এছাড়াও তারা তাওয়াক্কুল এরও অপব্যখ্যা করে মানুষকে ধর্মীয় গোমরাহির দিকে ঠেলে দিচ্ছে সাথে সাথে বিভ্রান্তি ও অসচেতনতা সৃষ্টি করছে।

তবে এগুলো বাংলাদেশ এর জন্য  “ট্রাম্প কার্ড” হয়ে যেতে পারে। কারন যেহেতু এ রোগের কোনো ভ্যাক্সিন এখনো নেই। তাই শরির নিজে থেকে এন্টিবডি তৈরি না করলে তার থেকে নিস্তার পাওয়া বড় কঠিন। আর এই জায়গাটি আমাদের মন্দের ভালো হয়ে ধরা দিলেও দিতে পারে। অর্থাৎ যেহেতু আমরা এখন আর এটিকে বড় জ্ঞান করছি না। তাই আমাদের মস্তিষ্ক আর এটিতে ভীত নয়। তাই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করতে আমাদের মস্তিষ্ক এবং শরীর অবচেতন ভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

আসলে আমাদের তো উন্নত সব দেশের মতো অকল্পনীয় পরিমাণ রিজার্ভ নেই। তাই আমাদের জীবন জীবিকার নিশ্চয়তা এখন একমাত্র মহান রব্বুল আলামীন ব্যতীত কেউ নিবে না। আর তার জন্যই আমাদের এই ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে অথবা তার সাথে মানিয়ে নিয়েই জীবন জীবিকা চালিয়ে যেতে হবে যতদিন না ভ্যাক্সিন মানুষের হাতে চলে আসছে।

কিন্তু তবুও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করেই সব কিছু করতে হবে। মনে রাখতে হবে ভাইরাস খালি চোখের জন্য  অদৃশ্য তাই কে কখন কিভাবে আক্রান্ত হবো তার কোনো ঠিক নেই। নিজের ও নিজের পরিবারের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমাদের সুরক্ষা আমাদেরই নিশ্চিত করতে হবে।

পরম করুনাময় মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের সহায় হোন। তার রহমত বর্ষন করে এই গজব তুলে নেওয়ার দোয়া করতে হবে সর্বদা। মনে রাখতে হবে। মহান সৃষ্টিকর্তা ব্যাতিত আসলে কারও কোনো সাধ্য নেই এখান থেকে মুক্তি পাবার। ইনশাল্লাহ রহমানির রাহিম তার রহমতের চাদরে আচ্ছদিত করে আমাদের সকলকে ক্ষমা করে দিবেন।

সাজিদ ইসলাম অর্ক
শিক্ষার্থী, জয়পাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ
দোহার ঘাটা, দোহার, ঢাকা।

আপনার মতামত দিন