দীর্ঘ দিন ধরে বৃষ্টি আর এই বৃষ্টি শেষ হতে না হতেই মশার উপদ্রবে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন দোহার পৌরবাসী। স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও মশার উপদ্রব বেড়েছে প্রায় দ্বিগুন । বৃষ্টির পানিতে বদ্ধ জলাশয় ও ড্রেনের আবর্জনার স্তূপ ঠিক মতো পরিষ্কার না করায় কিউলেক্স মশার রাজত্ব চলছে। দিনরাত মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পরছে দোহার পৌরবাসী। বাসাবাড়ি-কর্মস্থল, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবখানেই মশার দাপট, কোথাও নিস্তার পাওয়া যাচ্ছে না মশার হাত থেকে।
প্রায় প্রতি দিনই বৃষ্টি হওয়ার কারনে বিভিন্ন স্থানে পানি জমে থাকার জন্য কিউলেক্স ও ডেঙ্গু মশার প্রজননের খুবই উপযোগী সময় এখন । আবহাওয়ার কারণে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারী, মার্চে কিউলেক্স মশা এবং জুন ও জুলাই মাসে বাড়ে ডেঙ্গু । এ সময় বদ্ধ জলাশয়, কাভার্ড ড্রেন, বক্সকালভার্ট, প্লাস্টিক বর্জ্য ও ডাবের খোসায় জমে থাকা পানিতে কিউলেক্স মশার বংশবিস্তার ঘটছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে,দোহার পৌরসভার বিভিন্ন ওয়াডে সড়কের আশপাশে যত্রতত্র উন্মুক্ত অবস্থায় ময়লা-আর্বজনার স্তুপ। সময়মতো রাস্তাঘাট ও খোলা জায়গা থেকে ময়লা তুলে না নেওয়ায় বাড়ছে মশার উৎপাত। দিন নেই,রাত নেই চলছে এদের অত্যাচার। বাসাবাড়ি, অফিস, খেলা মাঠসহ সর্বত্রই মশার উপদ্রব। মশা অত্যাচার বাদ যাচ্ছে না হাসপাতালগুলোও। মশার উৎপাত এত বেশী যে কয়েল, স্প্রে বা মশা মারার ব্যাট কোন কিছুই কাজ হচ্ছে না। মশার অত্যাচার অতিষ্ঠ জনগণ। তেমনি বাড়ছে মশা বাহিত রোগের ঝুঁকিও। গতবছর আশঙ্কাজনকভাবে দেখা দিয়েছিল চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব। মশা নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে করোনার সাথে এই ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়ার প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে জনমনে বিরাজ করছে আতঙ্ক।
দক্ষিন জয়পাড়া রাসেল বলেন, কার্যকারী পদক্ষেপের অভাবে দোহার পৌরসভায় মশার উপদ্রব অনেক বেড়েছে। স্বাভাবিকভাবে কাজ করা যাচ্ছে না। কয়েল জ্বালিয়ে বা অ্যারোসল স্প্রে করেও রেহাই পাচ্ছি না। রাত বা সন্ধ্যায়ই নয়, দিনের বেলায়ও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে মশা নিধনে কতৃপক্ষের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। আর তাছাড়া ধীর্ঘ দিন বৃষ্টির কারণে যেনে মশা আরো বেশি বেড়েছে। একেকেটা মশা যেন মনে হয় বল্লার মত বড়।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারজানা বেগম বলেন, সন্ধ্যার আগেই বাসার দরজা-জানালা বন্ধ করা হয়। তার পরও মশার কামড় থেকে রক্ষা নেই। ছেলেমেয়েরা লোকডাউনে তেমন পড়তে বসে না যদিও বসে তাও আবার মশার কামড়ে উঠে যায়। রান্নাঘরে কাজ করতে গেলে কানের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করে মশা। রাতে মশারি টানিয়েও রেহাই পাওয়া যায় না।মশা মারতে কয়েল, স্প্রে, বৈদ্যুতিক ব্যাট সবই কিনেছি, কিন্তু তাতেও মশার উপদ্রব থেমে রক্ষা পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে পৌরসভার পক্ষ থেকে যে ওষুধ দেয় তাতে তো মশা মরে না, খালি ধোঁয়া হয়। এভাবে নামমাত্র স্প্রে না করে মশা মারার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে এটাই প্রত্যাশা।
এ বিষয় ৩নং ওয়ার্ডে বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, মশার তীব্র যন্ত্রনায় খুবই বিরক্তিকর অবস্থায় সবাই, ঘরের আনাচে কানাচে মশা দিয়ে ভর্তি, জানালা খুললেই ঢুকছে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা। জানালায় থাই ফ্রেমের নেট থাকা অবস্থায় মশা আসতেছে। সন্ধ্যার পরেতো কথাই নাই। প্রত্যেক ঘরে কয়েল, এরসল দিয়েও শান্তি নাই। সদর দরজার বাইরেও দিতে হচ্ছে কয়েল, যাতে পরিবারের কোন সদস্যের সাথে মশা না ঢুকে পড়ে। আরো আছে মশা বাহিত রোগের ভয়। এতো এতো ভয়, যন্ত্রণার এর কোন সমাধান নেই। আমি দেখছি না পৌরসভা থেকে মশা নিধনের কোন ব্যবস্থা। এতে করে আমাদের জনজীবন আছে হুমকির মুখে। তাই প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্শন করছি তারা যেন এই সমস্যার একটা সমাধান করেন।
স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মোঃ আবুল গনি বলেন, দেশে লকডাউন চলতেছে। তাই বাহিরে যেতে পারিনা আবার অন্য দিকে ঘরে থেকে মশার কামড় খেতে হয়। মশা গুলো যেন বল্লারমত একেকটা বড় বড় কয়েল বা স্পের দিয়েও কাজ হয় না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দোহার পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার মশিউর রহমান বলেন ,১৭ মার্চ থেকে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে আমরা পৌরসভার প্রতিটি ওর্য়াডে কাউন্সিলরদেরকে অবহিত করে মশা নিধনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা বর্তমানে চারটি ফগার মেশিন ও তিনটি স্পে দিয়ে মশা নিধনের কাজ করছি। আমরা এই কর্মসূচি মাস ব্যাপি করেছি এবং পর্যায়ক্রমে আমরা এই মশা নিধনের কার্যক্রম বছর ব্যাপি করবো সেই প্লানিং করেছি। আর এখন যেহেতু বৃষ্টির মৌসুম বৃষ্টি হচ্ছে তার জন্য আমার মশার নিধনের কাজ বন্ধ রেখেছি। কারন বৃষ্টিতে মশার ঔষধ কাজ করে না। বৃষ্টি কমলে আমরা আবার মশা নিধনের কাজ শুরু করবো আবার এখন লকডাউন চলতেছে আমাদের কাছে যে ঔষধ ছিল তা শেষ হয়ে গিয়েছে। লকডাউন শেষ হলে দোকান খুললে আমরা ঔষধ এনে পূর্নরায় নিধনের কাজ চালু করবো।