বৈষম্যহীন দেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশা

7
বৈষম্যহীন দেশ বিনির্মাণের প্রত্যাশা

বিজয়ের তিপ্পান্ন বছর পেরিয়ে চুয়ান্নতে পদার্পণ করল বাংলাদেশ। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে অহংকার ও বীরত্বের গৌরবময় দিন এই ১৬ ডিসেম্বর। কারণ নয় মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোনকে নির্যাতনের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে অর্জিত হয় মহান বিজয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম লক্ষ্য ছিল শোষণ-বৈষম্যমুক্ত ন্যায়নিষ্ঠ সমাজ ও দেশ প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু দেশের বিশিষ্টজনরা আক্ষেপের সঙ্গে বলেছেন, স্বাধীনতার এত বছরেও আমাদের প্রত্যাশিত রাষ্ট্র গঠিত হয়নি। যে কারণে ১৯৯০ ও ২০২৪ সালে গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়ে জনআকাক্সক্ষার দেশ গঠন করার অঙ্গীকার করেছে এ দেশের মানুষ।

জনআকাক্সক্ষার সেই শোষণ-বৈষম্যমুক্ত গণতান্ত্রিক আগামীর বাংলাদেশ গঠন করার প্রত্যাশায় নানা আয়োজনে আজ উদযাপিত হবে বিজয় দিবস। রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর পাশাপাশি সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষ বিজয় উদযাপনের

অংশ হিসেবে আলোচনাসভা, ফুলেল শ্রদ্ধাঞ্জলি, আনন্দ-শোভাযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন। অন্যদিকে দেশের বিশিষ্টজনরা দৈনিক আমাদের সময়ের কাছে তাদের প্রত্যাশার কথাও বলেছেন।

রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের ভয়ংকর অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের রূপান্তর ঘটাতে হবে উল্লেখ করে ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমাদের প্রত্যাশা হবে পুরনো শোষণ ও নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থার অবসান করে জনগণের অভিপ্রায় ভিত্তিক জনগণের জন্য জনগণের প্রয়োজনে এবং জনগণের কর্তৃত্বে প্রজাতন্ত্র নির্মাণ করা। প্রজাতন্ত্রের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা, নির্বাচনে প্রতারণা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠনের ভয়ংকর অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের রূপান্তর ঘটাতে হবে। নতুবা ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ঝুঁকিতে পড়বে। দুনিয়া কাঁপানো অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে অপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তা কোনো হীনস্বার্থে বিনষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

অন্য খবর  সন্ধ্যায় বসছে চাঁদ দেখা কমিটি

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী তিমির নন্দী বলেন, যে লক্ষ্যে মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছেন ও দুই লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়েছেন, তা যেন বৃথা না যায়- বিজয় দিবসে এটাই প্রত্যাশা করি। আমরা যেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভুলে না যাই।

৫৪ বছরেও গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে না পারার আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। তিনি বলেন, আমরা যে যুদ্ধ করলাম, এর কারণ ছিল ওই সরকার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেনি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা পূর্ব পাকিস্তানে বৈষম্যের শিকার ছিলাম। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ৫৪ বছরেও আমরা সেই গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়তে পারিনি। সাম্প্রতিক গণ-অভ্যুত্থানের আগে নব্বইয়ে গণ-অভ্যুত্থানেরও অন্যতম দাবি ছিল বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ে তোলা। এবারের বিজয় দিবসের অঙ্গীকার হবে আমরা একটা অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যমুক্ত দেশ গড়ে তোলা। সে জন্য একটি নীতিনিষ্ঠ রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তুলতে হবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণ-অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূর বলেন, এবারের বিজয় দিবস আমাদের জন্য অনেক প্রত্যাশার এবং সম্ভাবনার। গত দেড় দশক ধরে জাতি ফ্যাসিবাদের যাঁতাকলে পিষ্ট ছিল, সেখান থেকে মুক্ত হতে পেরেছি আমরা। যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলÑ সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে একটা বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা। মুক্তিযুদ্ধের সেই আকাক্সক্ষার আলোকে রাষ্ট্রকে নতুন করে গড়ার সুযোগ এসেছে। দল-মতের পার্থক্য সত্ত্বেও যদি আমরা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং সর্বশেষ চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানের সমন্বয়ে যদি আগামীর বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে পারি, আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে গড়ে তুলতে পারি, তাহলে রাষ্ট্র হিসেবে সামনে আরও সম্ভাবনা তৈরি হবে। আমাদের প্রত্যাশা থাকবে এই অন্তর্বর্তী সরকারকে সব রাজনৈতিক দল সহযোগিতা করবে এবং আগামীর বাংলাদেশ গড়তে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করবে।

অন্য খবর  বাংলাদেশকে নিয়ে চীন-ভারত দ্বন্দ্ব: কী ঘটছে নেপথ্যে?

দিনের শুরুতেই জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, পরে প্রধান উপদেষ্টা শ্রদ্ধা জানাবেন। বিএনপি দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী র‌্যালি, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির। ইসলামী আন্দোলন জমায়েত কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। সকালে জাতীয় পার্টির আলোচনাসভা হবে। এ ছাড়া সিপিবি, গণতন্ত্রমঞ্চ, বামজোটসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নানা কর্মসূচি পালন করবে। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাংস্কৃতিক আয়োজন থাকবে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে। এতে দেশের গুণী শিল্পীরা গান পরিবেশন করবেন।

আপনার মতামত দিন