কামরুজ্জামান টুটুল/ মো: সোহেল : ২০০৯ সালের সরকার কর্তৃক প্রদত্ত পে-স্কেলের দাবীতে বেগম আয়েশা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে সকল শিক্ষক-কর্মচারীরা আন্দোলন করেন। শিক্ষক-কর্মচারীদের এই নীতিগত আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক হারুন-অর রশিদ। তাদের দাবীর প্রতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা এক-নায়কতান্ত্রিকতা, স্বেচ্ছাচারী মনোভাব, উদাসীনতা এবং অবহেলা প্রদর্শন করছেন বলে তারা মনে করেন। যার ফলে শিক্ষক-কর্মচারী কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তারা বলেন যে, বিদ্যালয়ের ফান্ডে পর্যাপ্ত পরিমানের অর্থ থাকা সত্বেও তাদের দাবী পূরণ করা হচ্ছে না। তাদের দাবী মেনে নেওয়ার জন্য পর পর পাঁচ বার সভা ডাকা সত্বেও নানা অজুহাতে সভায় উপস্থিত না থেকে সভা পন্ড করেছেন। অতি সম্প্রতি, চলতি মাসের দুই তারিখে তিনি নিজে সভা ডাকেন, কিন্তু ব্যাক্তিগত সমস্যা দেখিয়ে প্রধানশিক্ষিকা সভায় উপস্থিত ছিলেন না। এছাড়াও গত তিন তারিখে সকল শিক্ষক-কর্মচারী, সকল পরিচালনা কমিটির সদস্য থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা, থানার ওসির স্বাক্ষর সম্বলিত আবেদনপত্র দেওয়া হয় যাতে উল্লেখ করা হয় যে তাদের দাবী পাঁচ তারিখের মধ্যে মেনে না নেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবেন। তারা অভিযোগ করেন যে, সকল শিক্ষক-কর্মচারী, পরিচালনা কমিটির সকল সদস্য থানা নির্বাহী কর্মকর্তা, শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির নির্দেশ আমলে না নিয়ে ‘স্বেচ্ছাচারী’ মনোভাব প্রদর্শন করছেন বলে তাদের অভিমত। তারা আরও অভিযোগ করেন যে তিনি বিদ্যালয়ে ব্যাপক দূর্নীতি করেছেন। বিদ্যালয়ের অডিট কমিটির নিকট গত চার বছরের আয়-ব্যয় হিসাব দিতে পারেন নি। পরিচালনা কমিটির সদস্য জনাব শাজাহান মিয়া বলেন, তিনি কোন হিসাবই দেখাতে পারেন নি এবং বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির কাছে কোন হিসাবও উপস্থাপন করেন নি। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার দূনীর্তির উদাহারন টেনে বলেন, ‘এক মিটিং-এ প্রধান শিক্ষিকা ৭৭০টি ভাউচার পাশ করান যা অসম্ভব বলে মনে করেন তিনি।‘ এছাড়া প্রধান শিক্ষিকার নিয়োগ অবৈধ ও বিধি সম্মত নয় বলে তারা অভিমত পেশ করেন। জনাব শাজাহান মিয়া আরও বলেন যে, তার বিরুদ্ধে দূ্নীর্তির ব্যাপারটি পরিচালনা কমিটি খতিয়ে দেখছে।
প্রধান শিক্ষিকা কুলসুম বেগমের অভিমত জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন যে, এই আন্দোলন অযৌক্তিক। মেয়েদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয় এমন কোন কিছুই তিনি চান না। তিনি বলেন, ‘আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন দোহার থানার অন্য যেকোন বিদ্যালয় থেকে বেশী আর বিদ্যালয়ের ফান্ডে পর্যাপ্ত পরিমানে অর্থ নেই।‘ তিনি আরও বলেন যে ছাত্রীদের বেতন পরপর দুইবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। তিনি ছাত্রীদের বেতন আর বাড়াতে পারবেন না এবং শিক্ষকদের বেতন পূর্বের পে-স্কেল অনুযায়ী ফেব্রুয়ারি মাস থেকে বেতন দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন যে, উক্ত সভায় যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে তা তিনি মেনে নেবেন এবং উক্ত সমস্যার সমাধান হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
ছাত্রীদের অভিমত জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন যে, যদি শিক্ষকদের দাবী ন্যায্য হয় তবে তা মেনে নিয়ে আমাদের সুষ্ঠুভাবে পড়ালেখার পরিবেশ যাতে তৈরি হয় বিদ্যালয় সেদিকে নজর দিবে। দশম শ্রেণীর ছাত্রীরা জানান যে, তাদের বেতন বার বার বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাদের বেতন যাতে আর বৃদ্ধি না করে কমানো হয়, এবং ছাত্রীরা প্রধান শিক্ষিকার প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে।
পরবর্তীতে জানা গেছে ছয় তারিখের মিটিং-এ যা পাঁচ তারিখে হবার কথা ছিল সেখানে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা, পরিচালনা কমিটির ও শিক্ষকদের মিটিং-এর পর শিক্ষকদের ন্যায্য দাবী মেনে নিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়াও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকাকে বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতিতে তারা মনোযোগ দিতে তাকে নিদের্শ দেন।