বান্দুরা বাজার অগ্নিকাণ্ড: আহত ৩ জনের মৃত্যু

735

আসিফ শেখ♦ গত ১৯ অক্টোবর শনিবার নবাবগঞ্জ উপজেলায় নতুন বান্দুরা বাজারে আগুন লেগে শিশুসহ ৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাদের ৫ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দীর্ঘ ৫ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জালড়ে ২৪ অক্টোবর বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টায় হাসি (৩০), ২৬ অক্টোবর সকালে গোপাল (৩৫) ও ২৬ অক্টোবর দুপুরে নুরুল হক (৩২) মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকলকে ফাঁকি দিয়ে চলে যায় না ফেরার দেশে।

হাসি: পুরো নাম হাসিদুল ইসলাম হাসি সে নতুন বান্দুরার হারু-অর-রশিদের ছেলে। দু’বোন ও এক ভাই’র মধ্যে হাসি ছিলো সকলের বড়। হাসির ৬ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। হাসি নিজেকে বাঁচাতে শরীরে আগুন লাগার পরপরই পুকুরে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। পুকুরের পানিতে আগুন নিভলো ঠিকই। কিন্তু হাসিকে বাঁচানো গেলো না।

গোপাল: পুরো নাম গোপাল চন্দ্র দাশ নতুন বান্দুরা টেনু চন্দ্র দাশের ছেলে গোপাল চন্দ্র দাশ। কানু দাশ নামে গোপালের ৮ বছরের একটি ছেলে আছে। গোপাল পেশায় রিক্সাচালক। মামুনের জ্বালানী তেলের দোকানের পাশ দিয়ে আসার সময় পেট্রোলের গ্যালন (কাতি) বিষ্ফোরণ হয়ে তার শরীরের আগুন লাগে।

নুরু: পুরো নাম নুরুল হক নতুন বান্দুরা গ্রামের সাকাত আলী বেপারীর ছেলে নুরুল হক। সে ইঞ্জিতচালিত রিক্সা চালক ছিলো। গ্যালন (কাতি) বিষ্ফোরণের পেট্রোল ছিটকে এসে তার শরীর আগুনে ঝলসে যায়। নুরুল হকের ৪ বছর বয়সী এক মেয়ে এবং ৩ মাস বয়সী এক ছেলে আছে।

অন্য খবর  প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদে দোহারে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদ সম্মেলন

অগ্নিকান্ডে মোট ৫ জন অগ্নিদগ্ধ হয়। ইতোমধ্যে ৩ জন মারা গেছে। বাকি ২ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছে। তারা হলেন হোটেল মালিক রতন  চন্দ্র দাস (৩০) ও রতন চন্দ্র দাশের শিশু মেয়ে পূর্ণিমা (৫)।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন হাসি তার মামা মামুনের জ্বালানি তেলের দোকানে (যেখানে পেট্রোল, অকটেন, ডিজেল ও কেরোসিন মজুত থাকতো) একটি পেট্রোলের ড্রাম থেকে পাইপ দিয়ে ছোট গ্যালনে (কাতিতে) ভরার উদ্দেশ্যে মুখ দিয়ে পাইপে টান দেয়। এ সময় হাসির হাতে থাকা সিগারেটের আগুন অসাবধানবসত পেট্রোলের সংস্পর্শে এলে পেট্রোলের ড্রামটি বিকট শব্দে বিষ্ফোরণ ঘটে। বলাবাহুল্য, অগ্নিকান্ডের কিছুক্ষণ আগে হাসি নুরুল হককে (নুরুল হক মারা গেছে) দিয়ে সিগারেট কিনে আনান।

পেট্রোলের ড্রাম বিষ্ফোরণ হলে হাসির শরীরে পেট্রোল ছিটে মুহূর্তেই আগুন ধরে যায়। শরীরে আগুন নিয়েই সে নিজেকে বাঁচানোর উদ্দেশ্যে পুকুরে ঝাঁপ দেয়। পুকুরে ঝাপ দিলেও ততোক্ষণে তার মুখ ও মাথা ব্যাতীত দেহের অন্যান্য অংশ আগুনে ঝলসে যায়। স্থানীয় জনতা তাৎক্ষণিকভাবে হাসিসহ বাকী ৪ জনকে উদ্ধার করে প্রথমে নবাবগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়। পরোক্ষণেই চিকিৎসকরো তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। হাসপাতালে ৫দিন পর বৃহস্পতিবার হাসি, ৭দিন পর শনিবার গোপাল দাশ ও নুরুল হক মারা যায়।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা

উল্ল্যেখ, ১৯ অক্টোবর শনিবার নতুন বান্দুরা বাজারে মামুনের (পেট্রোল, ডিজেল ও অকটেন) জ্বালানী তেলের দোকান থেকে এ আগুনের সূত্রপাত ঘটে। অগ্নিকান্ডে মামুনের তেলের দোকানসহ ৯ টি দোকান ও বসত ঘড় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। স্থানীয়রা পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলে আগুনের তীব্রতা আরো বেড়ে যায়। পরবর্তীতে মাটি ও বালু দিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়।

এ সময় ব্যবসায়ীরা কেরাণীগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে ২ ঘন্টা পরে ফায়ার সার্ভিস দল ঘটনাস্থলে পৌঁছোলেও ততক্ষণে তেলের দোকান, হোটেল, চালের দোকান, বসত ঘড় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। দোকান-ঘরবাড়িসহ আগুনে পুড়ে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা দাবি করেন।

অগ্নিকান্ডের পরপরই উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেওয়ান মাহবুবুর রহমান, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াসমিন আক্তার ও স্থানীয় চেয়ারম্যান হিল্লাল মিয়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। অগ্নিকান্ডের ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থিত সাধারণ জনগণ নবাবগঞ্জে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জোর দাবি জানান।

আপনার মতামত দিন