“বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচাইতে দুর্নীতিগ্রস্ত প্রকল্প হচ্ছে পদ্মা সেতু!”
কি চমকে উঠলেন! এটা আমার কথা নয় এটা ছিল বাংলাদেশের নানা ধরনের জ্ঞানীগুণী সুশীলদের কথা! স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ ছিল এই পদ্মা সেতু নির্মাণ করা। আর এই পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরুর আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল এই সেতু নির্মাণের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র, যে ষড়যন্ত্র করতে বাদ যায়নি তথাকথিত জ্ঞানীগুণী সুশীল এবং বিজ্ঞ বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ।
তাদের কাছে ছিল নানান রকমের কথার ঝুড়ি, ঝুড়ির কথা শেষ হয়ে গেলে পুনরায় পাইকারি দরে দেশ বিদেশ থেকে কথা কিনে এনে ঝুড়ি ভর্তি করতো, পরে আবার সেগুলো উচ্চমূল্যে বাজারে বিক্রি করতো!
যারফলে সেতু নির্মাণের জন্য নানা ঘাত-প্রতিঘাত ও চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারকে।
একটু স্বাভাবিক ভাবে চিন্তা করলেই উত্তর পেয়ে যাবেন;
পদ্মা সেতু কি শুধুই কংক্রিট, ইস্পাত এবং নানা ধরনের যন্ত্র সামগ্রীর সমন্বয়ে নির্মিত একটি অবকাঠামো ! না, পদ্মা সেতু স্বাধীন বাংলাদেশের গণমানুষের এবং বাংলাদেশ সরকারের আত্মমর্যাদা, সক্ষমতা, সম্মান ও কালজয়ী সিদ্ধান্তের এক মূর্তপ্রতীক। আজকের পদ্মা সেতু, যে সেতু যুক্ত করেছে দক্ষিণ বাংলাকে রাজধানী ও সমগ্র বাংলাদেশের সঙ্গে, বাংলাদেশর অর্থনীতির চাকা’কে করছে বহুলাংশে গতিময়, সে সেতু নির্মাণ বন্ধ করতে চলেছিল বিভিন্ন ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা অপপ্রচার, শত প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে পদ্মা সেতু নির্মিত হয়েছে। পদ্মা সেতু এখন আর স্বপ্ন নয় এটি এখন বাস্তব এবং দৃশ্যমান অবকাঠামো।
বাঙালি জাতি, জাতি হিসেবে লজ্জিত হয়েছিল সেইসময়ে , যখন আমাদের এই সেতু নির্মাণে এই দেশেরই কিছু সংখ্যক ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করেছিল, যেন এই সেতু নির্মিত না হয়। একটি ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না পারার আফসোসে একজন ব্যক্তি, আমি পরিষ্কারভাবেই নামটি বলে দিচ্ছি সেই মুখোশধারী “আন্তর্জাতিক সুশীল” ডক্টর ইউনুস, তিনি ষড়যন্ত্র করেছিল সরকারকে বিপাকে ফেলতে, যেন এই পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন না করে, ডক্টর ইউনুসের চক্রান্তে দুর্নীতির মিথ্যা অপবাদ ও অভিযোগ দিয়ে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মান প্রকল্পে তাদের অর্থায়ন করার সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। আর এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের পরেই বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ হাতে নিয়ে সেইসময়ে ঘোষণা করেছিলেন, নিজেদের অর্থেই তৈরি করবেন বাঙালির স্বপ্নের সেতু; পদ্মা বহুমুখী সেতু।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরেই দ্রুত গতিতে শুরু হয়ে যায় পদ্মা সেতু নির্মানের সার্বিক কর্ম পরিকল্পনা। আনুষ্ঠানিক ভাবে সেতুর নির্মান কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর,
দেশি বিদেশি হাজারো দক্ষ শ্রমিক এবং বিচক্ষণ প্রকৌশলী ও পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠানের কয়েক বছরের কর্মযজ্ঞের পরিপূর্ণ রূপ আজকের পদ্মা সেতু।
জাতি হিসেবে আমরা কতই না দুর্ভাগা পদ্মা সেতু নির্মাণের পূর্বে, নির্মাণকালে এবং নির্মাণের পরে কতই’না অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হতে হয়েছে সরকারকে এবং এই সেতু প্রকল্প ও সংশ্লিষ্টদের। বাংলাদেশের তথাকথিত বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং বিএনপি’র শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে কত ধরনের বক্তব্য ও মিথ্যাচার এবং গুজব সৃষ্টি করেছিল সেটি দেশবাসী বিভিন্ন সময়ে লক্ষ্য করেছেন, এমনকি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এই পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে তার ঐতিহাসিক বেশ কয়েকটি ভবিষ্যৎবাণীও করেছিলেন, যেমন “আওয়ামী লীগের আমলে পদ্মা সেতু হবে না!” “বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুটো পদ্মা সেতু করবে!” “আর আওয়ামী লীগ সরকার যদি জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেও ফেলে সে সেতুতে কেউ উঠবেন না! অনেক রিস্ক আছে!” ইত্যাদি। এখন একটু হেসে নিন কেননা বাংলাদেশের একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে দাবি করা বিএনপি’র চেয়ারপার্সন হয়ে এবং বাংলাদেশের একসময়ে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি হিসেবে তিনি কি ধরনের ঠাট্টা মশকরাটাই না ঐসময়ে করেছেন এবং কি ধরনের বক্তব্য জাতির উদ্দেশ্যে তিনি দিয়েছিলেন, সেটি স্মরণ করুন একবার। অন্যদিকে যে দুর্নীতির অসত্য অভিযোগ এনে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মান প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ করেছিল, এই প্রকল্পে যে কোন দুর্নীতি হয়নি সেটা কিন্তু, বাংলাদেশের আদালতে না, কানাডার আদালত প্রমাণিত হয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি সেটি আজ প্রমাণিত সত্য বিশ্ব দরবারে, সেইসঙ্গে সেতুও নির্মিত হয়ে গেছে। কিন্তু দেখুন দুর্নীতির অপপ্রচার, অপবাদ ও অভিযোগে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল, এই দেশপ্রেমিক গুণী মানুষটি এখন আর পৃথিবীতে নেই কিন্তু পদ্মা সেতু আজ স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে আছে প্রমত্তা পদ্মার বুকে, পদ্মা সেতু যত দিন থাকবে সৈয়দ আবুল হোসেনের ত্যাগ ও সেতু নির্মানে তাঁর প্রচেষ্টা এ জাতি সব সময় স্মরণ করবে শ্রদ্ধার সঙ্গে।
এরপরে আসুন পত্র-পত্রিকা এবং মিডিয়াতে যেসমস্ত ব্যক্তি, জ্ঞানীগুণী, রথীমহারথীদের এ দেশের সুশীল সমাজ মনে করা হয় সেই সুশীলেরা নানাবিধ কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য দিয়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন, যেমন “সুজন”এর বদিউল আলম মজুমদার বলেছিলেন “লাগামহীন দুর্নীতির বড় উদাহরণ পদ্মা সেতু ”। আবার যখন বাংলাদেশ আওয়ামী সরকার পরিষ্কার ভাষায় বলেছিলেন পদ্মা সেতু প্রকল্পে কোন দুর্নীতি হয়নি সেজন্য ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতো লোক খুবই বেজার হয়েছিলেন এবং মনে দুঃখও পেয়েছিলেন। টিআইবি মতো প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের উদ্ভট প্রশ্ন তুলে সংবাদ সম্মেলন তো থাকতোই। আর এতসব ষড়যন্ত্র চক্রান্ত ও প্রতিবন্ধকতা এবং বাধাবিঘ্নকে জয় করে যখন ২০২২ সালের ২৩ জুন পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হলো তখনই বিএনপি এবং ঐসব ষড়যন্ত্রকারীদের গালে চপেটাঘাত পড়লো।
অবশেষে ২৫ জুন ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যখন পদ্মা সেতু, যাতায়াতের জন্য উদ্বোধন করলেন তখনই বিশ্বের বুকে প্রমাণিত হয়ে গেল বাঙালি পারে, বাঙালি পেড়েছে এবং বাঙালি জাতি সেটা করে দেখিয়েছে। আর নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মানের এই কালজয়ী সিদ্ধান্ত নিয়ে যিনি স্বপ্ন জয়ের মহান স্বপ্ন সারথি, আলোর পথযাত্রী হয়েছেন তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা।
তাই কবি সুকান্তের ভাষায় বলতে হয়
“সাবাশ বাংলাদেশ,
এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়
জ্বলে পুড়ে মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।।”
বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে এবং বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলতে, অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশরত্ন শেখ হাসিনা’তেই আস্থা রাখুন।
”শেখ হাসিনার সালাম নিন
নৌকা মার্কায় ভোট দিন ”।।
শিহাব-উর-রহমান শিকদার
সহ-সভাপতি
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা জেলা দক্ষিণ শাখা।