পদ্মার অব্যাহত পানি বৃদ্ধিতে ঢাকার দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চল এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের গত ৪ দিনের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে, প্রতিদিন প্রায় গড়ে ১০ সেমি পানির উচ্চতা বাড়ছে। প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। ফলে দোহার উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে ভাঙ্গনের তীব্রতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মাহমুদপুরে রাস্তায় ভাঙ্গন শতাধিক পরিবার হুমকির মুখে।
ইতিমধ্যে দোহার উপজেলার মানচিত্র থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে রানীপুর গ্রামটি। বসত ভিটে হারিয়ে প্রায় দুই হাজার মানুষ সড়ক এবং বিভিন্ন উচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। মানবেতর জীবন যাপন করছে ভাঙ্গন কবলিত ও পানি বন্দি মানুষ।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা গেছে, দোহার উপজেলার বিলাশপুর ইউনিয়নের প্রায় ১৫শত ঘরবাড়ি,মসজিদ.মন্দির ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে না পাড়ায় বর্তমানে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। মধুরচর গ্রামের বাসিন্দা গৃহবধু সাবিনা আক্তার (৪৫) বলেন, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পদ্মার পানিতে আমাদের ঘড়বাড়ি তলিয়ে যায় আমাদের দেখার কেউ নাই। মাওলানা মো. হোসেন বলেন, শুনেছি পদ্মার ভাঙ্গন রোধে বাধঁ নির্মান করা হবে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমাদের ঘরবাড়ি কখন যেন পদ্মায় চলে যাবে জানি না। একই অবস্থা মাহমুদপুরের নারায়নপুর, চরপুরুলিয়া, হরিচন্ডী, মাহমুদপুর ও চর বিলাশপুর গ্রামে। উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ফসলী জমিসহ ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় জিনিসিপত্র নিয়ে দূগর্তরা স্বজনের বাসা ও উচু স্থানে আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে। এদিকে মাহমুদপুর ইউনিয়নের কাটাখালের পারের সড়কটির অধিকাংশ পানির চাপে ভেঙ্গে পড়ছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, একাধিকবার দোহার উপজেলা প্রশাসনকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এ সড়কটি ভেঙ্গে গেলে প্রায় শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ভেসে যাবে। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যাপক এলাকা। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি বলেন, সড়কটি মেরামতে প্রায় তিন মাস আগে এক লাখ টাকার প্রকল্প পাস হলেও কাজ হয়নি। ফলে এলাকার বাসিন্দারা ঘরবাড়ি হারানোর ভয়ে আতংকে রয়েছে। এছাড়া নারিশা ইউনিয়নের মেঘুলা, রানীপুর পানিতে তলিয়ে গেছে। পাল্লা দিয়ে ভাঙ্গন ও বাড়ছে।
দোহার উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা কে এম আল আমিন বলেন, খোঁজ নিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
এদিকে নবাবগঞ্জ উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাশিয়াখালী বেঁড়ীবাধের বাইরে বাহাদুরপুর, আশয়পুর, পানিকাউর, চারাখালি, ঘোশাইল, আরঘোশাইল গ্রামের বেশীরভাগ বাড়িতেই পানি ঢুকে পড়েছে। পদ্মার তীর ঘেঁষা এসব এলাকায় ভাঙ্গন আতংকেও রয়েছে শত শত পরিবার। এছাড়া বাঁধের পশ্চিম পাশে পানির চাপ বেশী থাকায় বেড়ীবাধটিও হুমকির মুখে আছে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের পরামর্শক্রমে ওই এলাকা পরিদর্শন করেন উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা জামান। ইউএনও বলেন, এমপি স্যারের সাথে কথা বলে বাঁধ রক্ষায় সব ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।