একসময়ে মাছে – ভাতে বাঙ্গালীর পরিচয় নিয়ে বেড়ে উঠা পদ্মার পাড়ের মানুষ , আজ যেন তা ইতিহাসেই পরিণত হয়েছে । দোহার – নবাবগঞ্জের মধ্য আয়ের মানুষেরা চড়া দামে মাছের স্বাদ পেলেও নিম্ন-মধ্যবিত্তরা তাও পায় না । ভারতের ইচ্ছামতো পানি প্রত্যাহার, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব আর প্রভাবশালীদের অবৈধ দখল ও ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলনের মহোৎসবের কারণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে পদ্মা। এক সময়ের খরস্রোতা পদ্মা ছিল মানুষের জীবিকার বাহন। পদ্মার পাড়ের জেলেরা মাছ ধরে জিবিকা নির্বাহ করত ।
গত কয়েক বছরে পদ্মার পাড় ভাঙ্গনের ফলে অনেকেই হয়েছে নিঃস্ব। বর্ষার মৌসুমে অতিমাত্রায় পানি আর শুকনা মৌসুমে হয়ে যায় ধু ধু বালুর মাঠ । ফারাক্কার হিংস্র ছোবলে পদ্মাসহ দেশের বড় বড় নদী গুলো তাঁর নাব্য হারিয়ে ধু ধু বালুচরে পরিণত হয়েছে। এখন এই নদীগুলো শুধুই ইতিহাস। পদ্মা নদীতে এক সময় ইলিশের ছড়াছড়ি থাকলেও এখন পানি শূন্যতার কারণে ইলিশ তো দূরে থাক স্বাদু পানির মাছও কমে গেছে। বর্ষা মৌসুমে মাছের দেখা মিললেও শুকনো মৌসুমে মাছের আকাল পড়ে যায়। দোহার-নবাবগঞ্জের কোল ঘেঁষে বয়ে যাওয়া প্রায় অধিকাংশ পদ্মা এখন শীর্ণকায় খালে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট ট্রলার ছাড়া বড় লঞ্চ বা কার্গো এখন চলে না। এ নদী এখন বালু খেকোদের দখলে চলে যাওয়ায় বিরান ভূমিতে পরিণত হয়েছে। উন্মুক্ত নদীতে মাছ শিকার করতে না পেরে হাজার হাজার জেলে ও মৎস্য শিকারি বেকার হয়ে তাদের পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
নদী আছে, পানি নেই। শুধু পদ্মাই নয় । দেশের বড় বড় নদীগুলোরও একই অবস্থা । ফলে এ অঞ্চলের পরিবেশ এবং কৃষক ও জেলেদের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। বালিয়াকান্দির এ নদীগুলোর উৎসমুখ পদ্মা নদীতে হওয়ায় আজ বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে পদ্মার সঙ্গে সঙ্গে এর শাখা নদী গড়াই, চন্দনা, হড়াই, চত্রা নদী হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে। বর্ষাকালে এসব নদীতে কিছুদিনের জন্য পানি থাকলেও প্রায় সারা বছরই থাকে পানিশূন্য। আর এসব নদী মরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দু’পাশ দখল করে নিয়েছে একশ্রেণীর দখলবাজরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে,অনেক জায়গায় নদীগুলোর বুক দিয়ে বয়ে চলছে বালু বোঝাই ট্রাক ও ট্রাক্টর। অনেক কৃষক আবার জেগে ওঠা চরে ইরি-বোরো ধান রোপণ করছে। শুধু দেখা মেলেনি নদীতে মাছ ধরার সারিসারি নৌকা ও জেলেদের জাল। নদীগুলো মরে যাওয়ায় এ অঞ্চলের কৃষি, বাণিজ্য, মৎস্য সম্পদও পরিবেশ হয়েছে পড়েছে বিপন্ন। হারিয়ে গেছে দেশীয় প্রজাতির অর্ধশতাধিক মাছ। এসব নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের কারণ হিসেবে এলাকাবাসী আন্তর্জাতিক নদীগুলোর সুষ্ঠু পানিবণ্টন ব্যবস্থাপনা না থাকা এবং ফারাক্কা বাঁধের নেতিবাচক প্রভাবকেই দায়ী করছেন।