পদ্মার তীর সংরক্ষণকাজে ধীরগতি আতঙ্কে দোহারের মানুষ

1681
https://news39.net/17991-2/

 

ঢাকার দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর তীর সংরক্ষণ কাজের ধীরগতি ভাবিয়ে তুলেছে পদ্মাপাড়ের মানুষকে। পদ্মাপাড়ের বাসিন্দারা জানিয়েছে, সর্বনাশী পদ্মার ভাঙনে গত দুই যুগে ২০ হাজার পরিবার আবাসস্থল হারিয়েছে। বাস্তুহারা এসব পরিবারের চোখের জল নদীর সঙ্গে মিশে আছে। তাদের একসময়ের ফসলি জমি, বসতভিটা সব গ্রাস করেছে পদ্মা। সে কারণে বর্ষা এলেই নদীপাড়ের বাসিন্দারা থাকে ভাঙন আতঙ্কে।

২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দোহারে একটি নির্বাচনী জনসভায় পদ্মার ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। তারই ধারাবাহিকতায় দোহারের অরঙ্গবাদ থেকে বাহ্রাঘাট পর্যন্ত পদ্মা নদীর সাড়ে তিন কিলোমিটার তীর সংরক্ষণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২১৭ কোটি ৬২ লাখ টাকার প্রকল্প একনেকের সভায় পাস হয়। ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় নয়াবাড়ী ইউনিয়নের বাহ্রাঘাট থেকে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, তীর সংরক্ষণের কাজ ধীরগতিতে করায় পদ্মাপাড়ের মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে। তাদের মতে, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে কাজ বন্ধ থাকলে এটি আরও দীর্ঘসূত্রতায় পড়বে।

নির্মাণাধীন প্রকল্পের সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘হোসেন অ্যান্ড সন্স’-এর স্বত্বাধিকারী এমএ হালিম জানান, ২০১৬ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর তারা কার্যাদেশ পেয়ে কাজ শুরু করেন। ২০১৮ সালের ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পের আওতায় সাড়ে তিন কিলোমিটার বাঁধে ১৬ লাখ বালির বস্তা ফেলে ডাম্পিংয়ের কাজ করার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে এক বছরে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় পাঁচ লাখ বালির বস্তা ফেলা হয়েছে। বাকি বাঁধের কাজ দ্রুতগতিতে চলছে বলে দাবি করেন তিনি।

অন্য খবর  মধুরখোলায় চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে আহত

নয়াবাড়ী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার সামসুদ্দিন অভিযোগ করেন, কাজ ধীরগতিতে চলছে। এভাবে কাজ চললে সামনে বর্ষা মৌসুমে আবার নয়াবাড়ীবাসী পদ্মার ভাঙনের মুখে পড়বে। ঠিকাদার শ্রমিকদের মজুরি নিয়ে টালবাহানা করায় কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।

জুয়েল নামে এক শ্রমিক জানান, সর্দার তাদের ঠিকমতো মজুরি দেন না। মজুরি না দিলে তারা কীভাবে বাঁচবেন, কীভাবে চলবে সংসার। প্রকল্পের সর্দার কহিন জানান, মূল ঠিকাদার তাকে টাকা না দিলে তিনি শ্রমিকদের কোথা থেকে টাকা দেবেন।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ কাজে ধীরগতির কথা স্বীকার করে জানান, কাজের মান নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে ব্লক তৈরিতে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যান তিনি।

স্থানীয় বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা আব্দুল আলীম বলেন, কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করায় আগামী বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই ভেঙে যেতে পারে নির্মাণাধীন বাঁধের বিভিন্ন অংশ। এতে করে আবারও ক্ষতিগ্রস্ত হবে পদ্মাপাড়ের মানুষ।

ক্ষোভ ঝাড়লেন বাহ্রা গ্রামের বাসিন্দা সালেহা বেগম। তিনি বলেন, ‘সরকার আমাগো বাঁধ দিল, তাইলে হেই বাঁধ বানাইতে এত দেরি কেন? এইবার বন্যায় কি আমাগো বাড়িঘর ভাইঙ্গা যাইবো?’

অন্য খবর  চির বিদায় নিয়েছেন সিদ্দিক স্যার

শুক্রবার সরেজমিন জানা যায়, স্বল্পসংখ্যক শ্রমিক দিয়ে কাজ চলছে। ১৬ লাখ বালির বস্তা ফেলে ডাম্পিংয়ের কাজ করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত মাত্র পাঁচ লাখ বস্তা ফেলা হয়েছে। এরই মধ্যে পদ্মা নদীতে বাড়তে শুরু হয়েছে পানি। ফলে আতঙ্কে রয়েছে নয়াবাড়ী ইউনিয়নের বাসিন্দারা।

নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হোসেন অ্যান্ড সন্সের স্বত্বাধিকারী এমএ হালিম জানান, তিনি এখন ব্যস্ত আছেন, দু-তিন দিন পর কাজের সাইডে আসবেন। তখন দেখা করতে বলেন তিনি।

দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন জানান, বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের, তার পরও যদি কেউ তার কাছে অভিযোগ করে, তিনি বিষয়টি দেখবেন।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কেএম আল-আমিন জানান, বিষয়টি নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।

ঢাকা-১ আসনের সংসদ সদস্য আডভোকেট সালমা ইসলাম জানান, গুণগত মান ঠিক রেখে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে তাগিদ দেওয়া হবে।

আপনার মতামত দিন