নয়াবাড়ি-কুসুমহাটিতে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ নির্মাণ

286

বর্ষা এলেই নদী ভাঙনের শিকার হাজার হাজার মানুষ। দিনের পর দিন গৃহহারা হচ্ছে অনেকেই। আবার অনেকে সংগ্রাম করে টিকে আছে। বিশ্ব যেখানে এগিয়ে গেছে সেখানে আমাদের দেশে সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দিনবদল হয়নি। এবার বর্সার আগেই ভেঙেছে। বাঁধ দিয়েও ঠেকানো যাচ্ছে না ভাঙন। 

দোহার উপজেলা দীর্ঘ দিন ধরে পদ্মা নদীর ভাঙনের শিকার। অব্যাহত ভাঙনে এ পর্যন্ত হাজার হাজার পরিবারকে পৈতৃক ভিটেমাটি হারাতে হয়েছে। শুধু ভিটেমাটি নয়, ভাঙনের ফলে ছিন্ন হয়ে গেছে শত বছরের পারস্পরিক মেলবন্ধন। ছিটকে গেছে চেনাজানা পরিচিত মুখ, শৈশব-কৈশোরের খেলার সাথীকে। আবার কেউ বসত ভিটেমাটি হারিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করছেন। পদ্মা ভাঙনের ফলে বসতবাড়ি ফসলিজমি পাকা-আধাপাকা স্থাপনাসহ গত দুই যুগে মূল্যবান সব সম্পদ নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলেই বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা পদ্মাপারের সরল সহজ মানুষগুলোকে ভোট ব্যাংক মনে করে বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পর আর কোনো খবর থাকে না তাদের। বর্ষার ভরা মওসুমে ভাঙন তীব্রতর হলে প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাকে নদী ভাঙন পরিদর্শনে এসে ডিমওয়ালা ইলিশ নিয়ে আনন্দের সাথে বাসায় ফিরতে দেখা যায়। কিন্তু নিয়ম রক্ষার জন্য হলেও কোনো ধরনের কাজ হয়নি এই অবহেলিত পদ্মাপারের ভাঙনকবলিত মানুষের কল্যাণের জন্য। ভাঙনের ফলে প্রতি বছরই অনেক পরিবার প্রিয় জন্মস্থান থেকে নিরুপায় হয়ে অন্যত্র গিয়ে বসতি শুরু করছেন। তাই রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা বারবার প্রতারিত হওয়ায় এবার পদ্মাপারের মানুষ পদ্মা ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার জন্য নিজেরাই বাঁধ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। দোহার উপজেলার ৮-১০টি গ্রাম পদ্মা নদীর ভাঙনের মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে। প্রতি বছর বর্ষা মওসুমে শত শত পরিবারকে ভাঙনের শিকার হতে হয়, ভাঙন রোধের জন্য এ বছর উপজেলার শিকাকোঠা মাদরাসার মুহতামিম আব্দুর রহিম মিয়া এলাকার সবাইকে একত্র করে নিজেদের উদ্যোগে পদ্মায় বাঁধ নির্মাণের কথা ব্যক্ত করেন। এ সময় স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ এলাকার সর্বস্তরের জনগণ তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে হাতে হাত কাঁধে কাঁধ রেখে কয়েকটি এলাকার সব শ্রেণী-পেশার মানুষ এগিয়ে আসেন। দলমত নির্বিশেষে সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই একত্র হয়েছেন বাঁধ নির্মাণের জন্য। এর জন্য কেউ বাঁশ, কেউ টাকা আবার কেউ শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

অন্য খবর  নারিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আলমগীরের ফ্রি হেলথ্ ও ব্লাড গ্রুপিং প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত

জানা যায়, ভাঙনপ্রবণ এলাকা থেকে বাহ্রাঘাট থেকে চরপুরুলিয়া খাল পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমটিার এলাকা নিয়ে বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এ কাজ বাস্তবায়িত হলে এ কাজের পরিধি আরো বাড়ানো হবে বলে জানা যায়। এ বাঁধ নির্মাণ হলে দোহার উপজেলার শিলাকোঠা, আন্তা, বাহ্রা, বাংলাবাজার, শিলাকোঠা, চরপুরুলিয়া এলাকার হাজার হাজার বাড়িঘর ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাবে। গত ১০ এপ্রিল শুক্রবার দোয়া মোনাজাতের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এ কাজের উদ্বোধন করা হয়। এ সময় এলাকার সর্বস্তরের জনগণ উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনের দিন থেকে প্রতি দিন বাঁধের কাজ চলছে। এ কাজে সহযোগিতা করছেন উপজেলার অন্যান্য এলাকার বিত্তশালী মানুষজন। এ কাজের জন্য একটি আহ্বায়ক কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে এলাকার সবার আস্থাভাজন ব্যক্তি আব্দুর রহিম মিয়াকে। তিনিই সার্বিক তত্ত্বাবধান করছেন। এলাকা থেকে কয়টি বাঁশ, কে কত টাকা আর প্রতিদিন কতজন শ্রমিক কাজ করছে সবই সুচারুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ নিয়ে এলাকার কারো কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই। এ ব্যাপারে নয়াবাড়ী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শামীম আহমেদ হান্নান বলেন, এই উদ্যোগকে আমি আমার পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। বাঁধকে কেন্দ্র করে সবাই ঐকমত্যে পৌঁছেছে, এ বিষয়টি আমার কাছে ভালো লেগেছে। সবাই এক সাথে কাজ করলে অন্য রকম আনন্দ পাওয়া যায়। এতে হার-জিত বলে কোনো কিছু নেই। এ ছাড়া দুই ইউনিয়নের সর্বস্তরের জনগণ এ কাজের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত। কাজেই সবার অংশগ্রহণ থাকায় বিষয়টি আমার কাছে একটু ভিন্ন রকম মনে হয়েছে।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার রোধে কর্মশালা

এ ব্যাপারে আন্তা গ্রামের সৌদিপ্রবাসী মনিরুল ইসলাম বলেন, এ বাঁধ নির্মাণ হলে নয়াবাড়ী ও কুসুমহাটি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবার নদীর করাল গ্রাস থেকে রক্ষা পাবে, সে সাথে এ অঞ্চলের মানুষের যে মেলবন্ধন সেটি অটুট থাকবে। কুসুমহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফেজ আব্দুর ওয়াহার দোহারী বলেন, বর্ষা মওসুম ছাড়াও অন্যান্য সময় নদীর ঢেউ তীরে আছড়ে পড়ায় প্রতিদিন নদীতে বিলীন হচ্ছে ফসলিজমিসহ অন্যান্য স্থাপনা। বাঁশ দিয়ে অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলে অন্তত এ ধরনের ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। বর্ষা মওসুমের আগেই এ বাঁধের কাজ সম্পন্ন হবে বলে মনে করছে এলাকার জনগণ। তবে আশার কথা হলো বাঁধকে কেন্দ্র করে এলাকার মানুষের মধ্যে যে ঐক্য তৈরি হয়েছে তা যেন আগামীর জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে এ প্রত্যাশা সবার।

পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি ভাঙলেও ভাঙবে না তাদের মন। সম্মিলিতভাবে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে তা সবার জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে নিঃসন্দেহে। 

আপনার মতামত দিন