নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটের মাঠে তৎপর ঢাকা-১ এর সম্ভাব্য প্রার্থীরা

898

বাংলাদেশের অন্যতম আলোইত সংসদীয় আসনগুলোর একটা ঢাকা-১ সংসদীয় আসন। হেভিওয়েট প্রার্থী দিয়ে বোঝাই এই সংসদীয় আসনের দিকে নজর সারা বাংলাদেশের। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক কৌতুহল।

২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসে পর দোহার ও নবাবগঞ্জ দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত হয় (ঢাকা-১) আসন। এর আগের নির্বাচনে দোহার ও নবাবগঞ্জ পৃথক আসনে নির্বাচন হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক এডভোকেট আবদুল মান্নান খান বিএনপি প্রার্থী সাবেক বিমান ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী ও বর্তমান চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল মান্নানকে পরাজিত করেন। কিন্তু ২০১৪ সালের নির্বাচনে সারা দেশে আওয়ামী লীগ মনোনীত মহাজোটের প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হলেও এ আসনে মান্নান খান জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সালমা ইসলামের কাছে পরাজিত হন। আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রচার রয়েছে- দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়।

গত ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১, দোহার থেকে বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও ঢাকা-২, নবাবগঞ্জ উপজেলা থেকে সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান টানা তিনবার নির্বাচিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন । ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ এডভোকেট সালমা ইসলামকে সমর্থন দেয়। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এডভোকেট মান্নান খান এই আসনে পরাজিত হন।

বর্তমান সময়ে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ঢাকা-১ আসনের এমপি এডভোকেট সালমা ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কর্তব্য পালন করে আসছেন। এলাকায় তার জনপ্রিয়তাও পূর্বের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি পুনরুদ্ধারে মরিয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এ আসন থেকে বারবার নির্বাচিত বিএনপি।

অন্য খবর  ঢাকা-নবাবগঞ্জ সড়ক ডাকাতের দখলে!

অপরদিকে জাতীয় পার্টিও আসনটি হাতছাড়া করতে চায় না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির দুজন, আওয়ামী লীগের তিনজন ও জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী মাঠে নেমেছেন।

বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক বিমান প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান ও ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাক। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মান্নান খান, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্মল রঞ্জন গুহ, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ। বিএনপি থেকে একাধিকবার নির্বাচিত ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করায় দোহার-নবাবগঞ্জ আসনে আগামী নির্বাচনে তার চাচা সালমান এফ রহমানকে সমর্থনের ঘোষণা দেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে জানা যায়। তিনি ঢাকা গুলশান থেকে নির্বাচন করবেন বলেও শোনা যাচ্ছে। অপরদিকে যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুলের সহধর্মিণী এডভোকেট সালমা ইসলাম ও সংসদ সদস্য হিসেবে এলাকার ভোটাদের সঙ্গে যোগাযোগ অক্ষুন্ন রেখে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। নিয়মিত গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া এলাকায় তিনি সরকারি ও বেসরকারিভাবে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন। যার ফলে দোহার ও নবাবগঞ্জে তার ব্যক্তিগত ইমেজ বৃদ্ধি পেয়েছে।

নির্বাচনের ক্ষণ যতই এগিয়ে আসছে প্রার্থীরা মাঠের রাজনীতিতে মনোনিবেশ করছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন।

অন্য খবর  খানেপুর স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত হলেন সম্পাদক আসাদুজ্জামান

বিএনপির প্রার্থী আবদুল মান্নান, খন্দকার আবু আশফাক। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর মধ্যে এডভোকেট আবদুল মান্নান খান নিয়মিত এলাকায় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী তিন প্রার্থীর মধ্যে এডভোটেক আবদুল মান্নান খান, সালমান এফ রহমান ও নির্মল রঞ্জন গুহের বাড়ি ঢাকার দোহার উপজেলায়। অপর প্রার্থী পনিরুজ্জামান তরুণের বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলার কোমরগঞ্জ। অন্যদিকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দুজনেরই বাড়ি নবাবগঞ্জ উপজেলায়। ভোটের ক্ষেত্রে নিজ এলাকার প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার প্রবণতাও রয়েছে এলাকার সাধারণ ভোটারের মধ্যে।

প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট শিল্পপতি সালমান এফ রহমান বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত মোতাবেক, দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমরা ইতোমধ্যে মাঠ পর্যায়ে সভা করছি।

ঢাকা-১ আসনের বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট সালমা ইসলাম বলেন, বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সার্বিক সহায়তায় আমি এই অঞ্চলের জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে জাতীয় সংসদে দোহারের পদ্মার ভাঙনরোধ, বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক সংস্কার, তৈরি, নদীতে ব্রিজ, কালভার্ট নির্মাণ, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়েছি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ ও মসজিদ, মন্দির, মাদ্রাসা, কবরস্থানে সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে এই অঞ্চলে উন্নয়ন করেছি। আমার ভূমিকা কতটুকু তা এই অঞ্চলের মানুষ বলবে।

তা ছাড়া আমি আগামীতেও এই এলাকার জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করবে বলে আমি মনে করি। আগামী দিনে এই অঞ্চলে উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শরিক হতে চাই। এ জন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করি।

আপনার মতামত দিন