নিউজ৩৯ এর সাথে আব্দুল মান্নানের একান্ত সাক্ষাতকার

2577

আব্দুল মান্নান, সাবেক বেসামরিক বিমান ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী। বর্তমানে বিএনপি’র সহ-সভাপতি। পড়ালেখা করেছেন যুক্তরাজ্যের লণ্ডনে। তিনি একজন FCMA(UK), FCMA, CGMA। মাত্র ৩৬ বছর বয়সে হয়েছিলেন বিমানের এমডি। ছিলেন একজন সরকারি আমলা। পরবর্তীতে রাজনীতিতে এসেছেন, ৩ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। নবাবগঞ্জের তথা ঢাকা জেলা বিএনপি’র রাজনীতিতে একজন অভিজ্ঞ ও প্রবীন মুখ। নিউজ৩৯ এর সাথে এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি তুলে ধরেছেন তার বিভিন্ন জানা অজানা কথা। পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হলো।

ধারাবাহিকভাবে দোহার-নবাবগঞ্জের রাজনীতিক নেতৃবৃন্দের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করবে নিউজ৩৯। নিউজ৩৯ এর সাথেই থাকুন, আপনাদের সাথে থাকা আমাদের পথ চলার প্রেরণা।

নিউজ৩৯: শৈশব ও কৈশোর নিয়ে কিছু বলেন?

আব্দুল মান্নানঃ আমার ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার চুড়াইন ইউনিয়নের গোবিনপুর গ্রামে জন্মগ্রহন করি। গোবিনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েই আমার শিক্ষার হাতেখড়ি। খালি পায়ে, খাল পেরিয়ে গোবিনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার স্মৃতিগুলো এখনও আমার কাছে অমলিন।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে বর্তমান গালিমপুর রহমানীয়া(পূর্বে গালিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়) উচ্চ বিদ্যালইয়ে ভর্তি হই। তবে এর মাঝে আমি একবছর সোনাহাজরা মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করেছি। এর অন্যতম একটা কারন ছিল ১৯৩৩ সালে আমার জন্মের পূর্বেই আমারা বাবা ও দাদা বোম্বে(এখনকার মুম্বাই) থেকে জাহাজে করে হজ ব্রত পালন করেন। তাদের ইচ্ছা ছিল আমি যেন অন্তত এক বছর মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করি। কোরআন শিখতে পারি।  তাদের সেই ইচ্ছাতেই আমি এক বছর সোনাহাজরা মাদ্রাসাতে পড়াশোনা করি।

এরপর ১৯৫৭ সালে আমি ঢাকা বিভাগ থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই। ঢাকা বিভাগ থেকে একমাত্র আমিই প্রথম বিভাগ অর্জন করি। এরপর আমি ঢাকায় আমার নানার বাসায় চলে যাই। সেখান থেকে ইন্টার পাশ করে আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। কিন্তু আমার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনার জন্য আমি লন্ডন যাবো। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবার।

তাই ১৯৫৭ সাল থেকেই আমার মা আমাকে লন্ডন পাঠানোর জন্য টাকা জমাতো। সেই টাকা দিয়ে আমি ১৯৬২ সালে লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেই। এর মাঝে আমার অনুপ্রেরনা ছিল আতা খান। ১৯৫৯ সালে সে লন্ডন থেকে চার্টার্ড একাউন্টস পাশ করে এসে ঢাকাতেই ২০০০ টাকা বেতনে চাকরি করে, ১৯৫৯ সালে ২০০০ টাকা অনেক বড় ব্যাপার ছিল। আমার ইচ্ছা ছিল বার-এট-ল করার। এর মাঝে আমি একটা স্কলারশিপ পেলাম এ্যারনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর। স্কলারশিপের ধরন ছিল অর্ধেক আমার বহন করতে হবে। কিন্তু আমার মা-বাবার পক্ষে সেটা সম্ভব ছিল না। তাই আমি যেয়েই সেটা চেঞ্জ করে নিলাম।

আমি চেয়েছিলাম বার এট ল করতে, কিন্তু পেশা হিসাবে আইন কিছুটা ঝুকি থাকায় আমার বাবা আমাকে বললো তুমি পড়াশোনা শেষ করে এসে নিজে আয় করবা, নিজে চলবা। আমি লন্ডনের সাউথ ওয়েলস লন্ডন কলেজ অব কমার্স থেকে চার্টার্ড একাউন্ট নিয়া পড়া শুরু করি। আমি সারা জীবন সায়েন্স নিয়ে পড়েছি। লন্ডনে এসে যখন স্কলারশিপ বাতিল করলাম তখন এ্যাম্বাসী থেকে আমাকে বললো তুমি দ্রুত কোথাও ভর্তি হও। ভর্তি না হলে তোমাকে পাকিস্থানে ফেরত পাঠানো হবে।

লন্ডনে এসে প্রথমে বার এট লতে ভর্তিও হয়েছিলাম। বাবার কথায় সেখানে ভর্তি বাতিল করে চার্টার্ড একাউন্টে ভর্তি হলাম। ততদিনে আমি কলেজের সেলেবাস থেকে প্রায় দেড় মাস পিছনে পড়ে গেছি। কিন্তু তারপর ফার্স্ট ট্রামে আমি প্রথম হয়েছিলাম। আমি আমার শিক্ষাজীবনে কখনো ২য় হই নি। সবসময় ফার্স্টই ছিলাম। অতঃপর পড়াশোনা শেষ করে আমি ১৯৬৮ সালের মার্চে দেশে ফেরত আসি। লন্ডন থেকে আমি ভোক্সওয়াগন একটা গাড়ি নিয়ে এসেছিলাম। যদিও আমি আসতে চেয়েছিলাম না।

কিন্তু আমার ছোট ভাই ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপরে একটা স্কলারশিপ পেয়েছিল লন্ডনের। আমার মা আমাকে বললো, তুমি না আসলে তোমার ভাইকে আমি যেতে দিবো না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই আমি দেশে ফেরিত আসি। কুয়েত এয়ারলাইন্সের একটা বিমানে লন্ডন থেকে করাচি আসলাম। করাচিতে আমি ৪ দিন থাকলাম আমার লন্ডনের এক সিনিয়র সহপাঠির বাসায়। ঢাকায় ফেরত আসার সাত দিনের মাঝে আমি ২ টা চাকরি পেলাম। এর মাঝে বিয়েও করে ফেললাম। বিয়ের সাতদিন পরই নতুন পোস্টিং এ জয়েন করি। একটা পেলাম এসএম স্ট্যান্ডার্ড, চট্টগ্রামে পোস্টিং। সেই সময় আমার বেতন হলো ৩৭০০ টাকা। সাথে বাড়ি ও গাড়ি। আরেকটা পেলাম ইপিআইডিসিতে। সরকারি প্রতিষ্ঠান। বেতন ১৮০০ টাকা।

আমার পরিবার আমার উপর রাগ। কেন  এসএম স্ট্যান্ডার্ড এজয়েন করলাম না। আমি জয়েন করি নাই তার অন্যতম একটা কারন ছিল তেলের ব্যবসায় আমার জন্য সুইটেবল ছিল না। আমার জন্য সুইটেবল ছিল ইন্ডাস্ট্রিজ। তার উপর আমার ইচ্ছা ছিল সরকারি চাকরি করার।

তারপর ঘুরে ফিরে ৩৬ বছর বয়সে আমি বাংলাদেশ বিমানের এমডি হলাম। এটা একটা রেকর্ড যে ৩৬ বছর বয়সে আমি বিমানের এমডি হয়েছি। এটা আজও কেউ ভাঙ্গতে পারে নি।  প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই আমাকে বিমানের এমডি বানিয়েছেন। তারও কারন আছে। আমি ৩৭০০ টাকার বেতনের চাকরি পায়ে ঠেলে ১৮০০ টাকার বেতনের চাকরি করেছি। হেড অফিস থেকে আমাকে চট্টগ্রাম পাঠানো হলো একটা বন্ধ কারখানা চালু করার জন্য। আমি চালিয়ে দিয়ে আসলাম। এর মাঝে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় এবং আমার শাশুড়ি মারা যায়। আমার শ্বশুর আমাকে বলল তার বাসায় থাকতে। কারন আমার স্ত্রীর দুই বোনের তখনও বিয়ে হয় নি।

নিউজ৩৯: মুক্তিযুদ্ধে আপনার কি ভূমিকা ছিল একটু জানতে চাচ্ছি?

আব্দুল মান্নান: আমি ফ্রণ্ট লাইনের মুক্তিযোদ্ধা না, কিন্তু আমি মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সাহায্যকারী ও সহকারী। তাদের চেয়ে আমার অবদান কোন অংশেই কম না।

নিউজ৩৯: রাজনীতিতে কিভাবে আসলেন?

আব্দুল মান্নানঃ নাজমুল হুদা আমার ফ্রেন্ড, মওদুদ আহমেদও আমার ফ্রেন্ড। লন্ডনে আমার বাসায় এদের সবাইকে নিয়েই আড্ডা হতো। ১৯৯১ সাল। এর মাঝে যেটা হলো ক্যাপ্টেন হালিম সাহেব নমিনেশন পেলেন। আতা খান সাহেব লোকজন নিয়া বিএনপি পার্টি অফিসে গেল। বিএনপির পার্টি অফিস তখন ধানমন্ডি ২৭ এ। তারা সবাই বিএনপি থেকে মনোনয়ন চায়। এদিকে আর মাত্র একদিন বাকি। হালিম সাহেব তখন উপজেলা চেয়ারম্যান। আতা খানও শক্তিশালী প্রার্থী। কিন্তু হালিম সাহেবের জাতীয় পার্টির ইতিহাস ও আতা সাহেবের সমর্থকদের গাড়ি ভাংচুরের কারনে তাকে হতে দিলেন না।

এরপর নাজমুল হুদা আমাকে ফোন করলো। দুপুর বেলা। আমি বললাম তোমার গাড়িতে করে তুমি আমাকে নিয়ে যাও। আমি বনানীতে ইলেকশন অফিসে পৌছে গেলাম। ম্যাডাম তখনো আসে নি। আমি তখন রাজনীতিতে একেবারেই অপরিচিত মুখ। নবাবগঞ্জ উপজেলার  বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল কেউ আমাকে চিনতো না। আমি পার্টি অফিসে গেলে তারা বললো আপনি কেন আসছেন। আপনাকে তো আমরা চিনি না। আমিও বললাম আসলেই তো তোমরা কেউ আমাকে চিনো না। আমার ফ্রেন্ড নাজমুল হুদা আমাকে নিয়ে আসছে। মনোনয়ন চাচ্ছি। তোমাদেরও তো একজন প্রার্থী দরকার। তা তোমরা কাকে চাও? তারা বললো আমরা খোরশেদ আলী মোল্লাকে চাই। আমি বললাম তাহলে ঠিক আছে। আমি তাদের বললাম, কেউ যদি না দাড়ায়, তাহলে আমি রেডি আছি। তোমরা চাইলে আমি আসবো, না হলে আসবো না। এর মাঝে খবর পেলাম কর্নেল মুস্তাফিজের বাসায় ম্যাডাম আসবে। নাজমুল হুদা আমাকে সেখানে নিয়ে গেল।

প্রেসিডেন্ট জিয়ার প্রতিটি ফ্লাইটে আমি সফর সঙ্গী হিসাবে থাকায় ম্যাডাম আমাকে চিনতেন। আমাকে দেখে ম্যাডাম জিয়া জিজ্ঞাস করলেন আপনি কি চান? তখন কর্নেল মুস্তাফিজ বললো, ম্যাডাম আপনি চাইলে ও নির্বাচন করবে। আপনি যদি ওকে দেন বাকি সব দায়িত্ব আমার। আমি বললাম, ম্যাডাম আমাকে তো দলের লোকজন চিনে না। ওরা যাকে চায় তাকে দেন। তবে উনি যদি না দ্বারায় তাহলে আমি আছি। তখন ম্যাডাম খোরশেদ আলী মোল্লাকে ফোন দিলেন। তারপর তিনি আমাকে ফোন দিলেন। আমার স্ত্রী আমার নির্বাচনের ব্যাপারে নেগিটিভ ছিল কিন্তু আমার মেয়ে বললো বাবা তুমি দাঁড়াও। আমি এক পক্ষে আর আমার মেয়ে আরেক পক্ষে। তখন ম্যাডাম আমাকে বললেন কাল সকালে পার্টি অফিসে যাবেন, মেম্বারশীপ ফর্ম পূরন করে একটা নমিনেশন পেপার কিনে নিবেন। তিনি আমাকে ধন্যবাদ দেয়ার সুযোগও দেন নি। তার আগেই ফোন কেটে দেন।

ম্যাডামে কাছে আমি সবসময় কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে এই অঞ্চলের মানুষের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দিয়েছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে যদি ম্যাডাম নাজমুল হুদাকে ক্ষমা করে এবং তিনি দোহারে দাঁড়ায়, তাহলে আমি দাড়াবো না। আমি যখন রাজনীতিতে আসি তখন আমি ব্যবসায়ীভাবে শীর্ষে ছিলাম। তারপর রাজনৈতিক ব্যস্ততার কারনে অনেক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান থেকে আমি নিজেকে সড়িয়ে নিতে বাধ্য হই।

নিউজ৩৯: রাষ্ট্রপতি জিয়ার সাথে কোন স্মৃতি থাকলে যদি একটু বলতেন?

অন্য খবর  দোহারে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

আব্দুল মান্নানঃ প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে আমার অনেক স্মৃতি ছিল যা অনেক মন্ত্রীরও নেই। ১৯৭৭ সালে যখন আমাকে বাংলাদেশ বিমানে নিয়োগ দেয়া হয় তখন আমাকে আমার সিনিয়রেরা বলেছিল তোমার যাওয়ার দরকার নেই। কিন্তু তারপরও আমাকে বিমানের এমডি করা হয়। এবং আমার সময়ই বিমানে প্রথম লাভ হয়। এর আগে বিমান কখনই লাভের মুখ দেখে নি।

বিমানে এমডি হওয়ার পর প্রেসিডেন্ট জিয়ার সাথে আমি প্রায় ১০০ বার ফ্লাই করেছি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান খুব কম কথা বলতো। প্রেসিডেন্ট কার্যলয় থেকে বলে দেয়া হয়েছিল যখনই জিয়াউর রহমান ফ্লাই করবে আমাকে তার সাথে ফ্লাইটে থাকতে হবে। আমার একটা অভ্যাস ছিল যেদিন ফ্লাই ক্রবে, তার আগের দিন আমি নিজে এয়ারপোর্টে উপস্থিত থেকে বিমানের কাযে তদারকি করতাম। বেশিরভাগ সময়ই আমাকে সারা রাত জেগে থাকতে হতো। বিমানের কাজ শেষে আমি নিজে বিমান হ্যাংগারে ঢুকিয়ে এয়ারপোর্টেই ঘুমিয়ে পড়তাম।

একদিন মেজর জেনারেল সাদিকুর রহমান আমাকে ফোন করে বললো, মান্নান ভাই, আমরা তো যুগস্লাভিয়া যাবো। মার্শাল টিটো মারা গেছেন। তার অন্তস্টিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অংশ নিবেন। তখন আমি বললাম আমি তো যেতে পারবো না। বিমান মন্ত্রী আব্দুল মতিন আমাকে বলেছেন আপনি তিন-চারদিন বাইরে থাকলে এগুলো কে সামলাবে। আপনার যাওয়ার দরকার নেই। আমি প্রেসিডেন্ট সাহেবকে বলে রাখবো। আপনার যাওয়ার দরকার নেই। সে একজন মন্ত্রী। আমি বললাম ঠিক আছে।

তখন সাদেকুর রহমান বললেন, আপনি কি অফিসে। আমি বললাম হ্যা। তখন তিনি বললেন কোথায় যাবেন না। অফিসেই থাকেন। কিছুক্ষন পর  সাদেকুর রহমান আবার ফোন দিয়ে বললেন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, হি মাস্ট কাম। আপনাকে যেতেই হবে।

এর কিছুক্ষন প্রেসিডেন্ট জিয়া আমাকে সরাসরি ফোন দিলো। আমি তখনো অফিসেই। তিনি আমাকে বললেন- আপনি নাকি আসবেন না? আমি বললাম স্যার আপনি বললে আমি অবশ্যই আসবো। তিনি বললেন ইউ মাস্ট কাম। এর কিছুক্ষন পর আব্দুল মতিন সাহেব আবার আমাকে ফোন করেছে। তিনি বললেন আমি চিন্তা করলাম আপনি না গেলে প্রেসিডেন্ট সাহেবের অসুবিধা হবে। আপনি যান। সে আর বলে নাই যে প্রেসিডেন্ট তাকে ধমক দিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যুগোস্লাভিয়া থেকে আসার পর আব্দুল মতিন সাহেবকে ট্রান্সফার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিলেন।

এরপ ১৯৭৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ বিমানের পক্ষ থেকে একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা হয়। ক্যালেন্ডারের বিষয়বস্তু ছিল বাংলাদেশের বিয়ে। বিমানের পক্ষ থেকে তার হাতে যখন ক্যালেন্ডার তুলে দেয়া হয় তিনি তখন মুচকি হেসে আমাকে বলেছিলেন, – বাংলাদেশের সবাইকেই তো আপনি বিয়ে দিয়ে দিলেন। সেই ছবিটি এখনও আমার ড্রয়ং রুমে আসে এবং সেটিই সম্ভবত প্রেসিডেন্ট জিয়ার একমাত্র হাসির ছবি।

বিমানের তরুন এমডি হিসাবে আমার উপর আস্থা রেখেছিলেন প্রেশিডেন্ট জিয়া। আমার উপর আস্থা রেখে তিনি এক মাসের মধ্যে পুরোনো এয়ারপোর্ট থেকে নতুন এয়ারপোর্টে সব কাগজ ও যন্ত্র নিয়ে আসার জন্য দায়িত্ব দিয়ে ছিলেন। এক মাসের আগেই আমি সব দায়িত্ব পালন সম্পন্ন করি ফলে আমি তার আরো ঘনিষ্ট জনে পরিনত হই। উনি আস্থা রেখেছিলেন বলেই, নির্মানাধীন বর্তমান শাহজালাল বিমানবন্দর (ততকালীন জিয়া ইন্টারন্যাশনাল) এ প্রথম অভ্যন্তরিন ফ্লাইট ছিল না। অভ্যন্তরীন ঢাকা-কুমিল্লা ফ্লাইটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তখনও রানওয়েতে কোন লাইট ছিল না। সেই ফ্লাইটের উদ্ভোধনের দিনে ভিআইপি লাউঞ্জে বসে প্রেসিডেন্ট জিয়া আমাকে বললেন, মান্নান তুমি ছোট এয়ারক্রাফট না কিনে, ৫০০ সিটের বোয়িং কিনো। আমি বললাম স্যার এতো টাকা পাবো কোথায়। আমি তো ঋণ নিয়ো শোধ করতে পারবো না। তিনি বললেন আমি তোমাকে সহযোগীতা করবা। সেটা ছিল বিমানের প্রথম বোয়িং ৭০৭।

এরপর ১৯৮১ সালে আমাকে ফরেন মিনিস্ট্রিতে বদলি করা হলো। আমাকে কোথাও নিয়োগ দেয়ার আগেই উনি শহীদ হলেন। আমার নিয়োগ আটকে যায়। আমাকে সামরিক বাহিনী কোন এক অজানা কারনে তাদের কাস্টডিতে নিয়ে যায়। এক মাস আটক রাখার পর আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এরপর আমি সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর চাকরি করবো না। আমার জিদ চেপে গেল।

নিউজ৩৯: রাষ্ট্রপতি এরশাদকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আব্দুল মান্নানঃ প্রেসিডেণ্ট জিয়া মারা যাবার পর এরশাদ তখন প্রেসিডেন্ট, আমাকে ডেকে বললো তোমাকে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বানাবো। কিন্তু আমি বললাম, স্যার আমি চাকরি করবো না। তখন আমাকে ততকালিন উপ প্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহমেদ যিনি লন্ডনে আমার সিনিয়র সহপাঠি ছিলেন, আমাকে ডাকলেন। তিনি আমাকে বললেন তুমি অফিসে আসো। আমি গেলাম আমাকে সিইও পদে নিয়োগ দেয়া হলো। চট্টগ্রাম পোস্টিং। ঢাকাতে কার্যালয় হবে। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লোন দিচ্ছে না। তিনি আমাকে বললেন, তুমি আসো। তোমাকে ছাড়া এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাংক লোন দিবে না। আমি গেলাম। সাত দিনের মাঝে ম্যানিলায় চলে গেলাম এবং সেখান থেকে লোন পাশ করিয়ে নিয়ে আসলাম। এর মাঝে এরশাদ সাহেব আমাকে খোঁজ করেছে। তিনি জামাল উদ্দিন সাহেবকে চার্জ করলেন যে আমি তাকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বানিয়েছি আপনি তাকে ম্যানিলায় পাঠিয়েছেন কেন? জামাল উদ্দিন সাহেন বললো, আমি তো জানি না। সে আমার কাছে এসেছিল আমি তাকে সেখানে নিয়োগ দিয়ে ম্যানীলা পাঠিয়েছি।  একথা শোনার পর আমি চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলাম আমি আর সরকারি চাকরিই করবো না। তখন আমি আমার তিন বন্ধুকে নিয়ে একটা ব্যবসায় শুরু করি। আমি তার চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি। বেঙ্গল গ্রুপ।

নিউজ৩৯: কেন জাতীয়তাবাদী রাজনীতিতে এলেন?

আব্দুল মান্নানঃ প্রেসিডেণ্ট জিয়া, ম্যাডাম জিয়া আর দেশকে ভালোবেসে।

নিউজ৩৯: ৯১ ও ২০০১ সালে মন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে নাজমুল হুদার সাথে দ্বৈরথের কারন?

আব্দুল মান্নানঃ আসলে নাজমুল হুদার সাথে আমার কখনই কোন দ্বন্ধ ছিল না। সে আমার খুব কাছের বন্ধু। তুলশীখালী-মরিচা সেতু উদ্ভোধন নিয়ে তার সাথে আমার কোন দ্বন্ধ ছিল না। আসলে ১৯৯১ সালে নাজমুল হুদা আমাকে ডেকে নিয়ে বিএনপির নমিনেশন দেন। ১৯৯১ সালে আমি হলাম বিমান প্রতিমন্ত্রী আর তিনি খাদ্য প্রতিমন্ত্রী। আমরা দুইজন তো সমান হয়ে গেলাম। এতে মনে হয় নাজমুল হুদা কিছুটা ঈর্ষাকাতর হয়ে পড়েন বলে আমার ধারনা। কারন আমি তখন ম্যাডামের অনেক কাছাকাছি পৌছে গেছি। এই সময় তিনি আমাকে ডেকে খন্দকার আবু আশফাকের কথা বললেন। আবু আশফাক তখন দল থেকে বহিস্কৃত। তিনি আবু আশফাককে ডেকে আমার কাছে নিয়ে আসলেন। তিনি খন্দকার আবু আশফাককে নবাবগঞ্জের রাজনীতিতে প্রবেশের সুযোগ দিলেন। আমি যদি তাকে স্পেস না দিতাম তাহলে খন্দকার আবু আশফাক নবাবগঞ্জে বিএনপির রাজনীতিতে কখনই ঢুকতে পারতো না। আমি ভবিষত রাজনীতির কথা ভেবে আশফাককে দলে ফিরিয়ে আনি।

নিউজ৩৯: নাজমুল হুদার বিএনপি থেকে পদত্যাগের পর ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পান আপনি। সেই সময় আপনি সভাপতির দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ ছিলেন বলে অনেকে মনে করে। কেন?

আব্দুল মান্নানঃ কেন্দ্রের প্রতিটি কর্মসূচিতে আমার নেতা-কর্মী গিয়েছে, কর্মসূচী পালন করেছে। আর ২০১৪ সালের আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণ নেতৃত্বের দূর্বলতা, আমাদের গাইড লাইনের অভাব। আমার ঢাকার বাসায় ৭ বার আক্রমণ হয়েছে। গুলি হয়েছে, বোমা নিক্ষেপ করেছে। আর কোন নেতার বাসায় কি হয়েছে? আমি ও আমার স্ত্রী ২ বার আহত হয়েছি।

নিউজ৩৯: জিয়া পরিবারের সাথে আপনার একটা ব্যক্তিগত সম্পর্ক আছে বলে জানি। সেই ব্যাপারে কিছু বলেন?

আব্দুল মান্নান: ম্যাডামকে যখন ক্যাণ্টনমেণ্ট বাসা থেকে উচ্ছেদ করা হয়, তখন আমি হাসপাতালে কিডনী রোগে আক্রান্ত। ফোন এলো, ম্যাডাম আমার মেয়েকে যেতে বলেছেন, সেদিন রাত ১২টায় আমার মেয়ে গেলো। সে ম্যাডামের পাশে ছিলো সার্বক্ষণিক।

আর একটি ঘটনা, খন্দকার দেলোয়ার যখন মহাসচিব হবেন তা কেউ জানতো না। ম্যাডামকে যখন আদালতে হাজির করা হয়, তখন ম্যাডামকে মেহেনাজকে ডেকে একটি কাগজ দেন, তখন সেখানে লিখা ছিল মহাসচিব হিসাবে খন্দকার দেলোয়ারের নাম। তারেক রহমান জানেন, তার বাবা এবং মা আমাকে দিয়ে কি রকম দায়িত্বপালন করিয়েছেন। তিনি জানেন, আমি কি রকম।

আর একটি ঘটনা, আশফাক যেদিন আমার নামে ম্যাডামের কাছে অভিযোগ করেন, সেদিন মির্জা আব্বাস , সাদেক হোসেন খোকাকে স্বাক্ষী রেখে ম্যাডাম বলেছিলেন, আমি জানি সে কি করেছে। আজ হরতাল। তার অপারেশন ছিল। কিন্তু সে আগে হরতাল করেছে, মিছিল করেছে, লাঠিচার্জ করেছে এরপর এই সন্ধ্যায় সে হাসপাতালে তার হার্টের অপারেশনের জন্য এসেছে। সে কি করে আমি জানি।

নিউজ৩৯: একজন খ্যাতিমান সরকারি আমলা হিসাবে আপনি কি গণমানুষের রাজনীতিবীদ হতে পেরেছেন? অনেকের অভিযোগ আপনার সাথে তৃনমুলের ভোটারদের সম্পর্ক নেই? বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখেন।

অন্য খবর  ইকরাশিতে ডিস ইনচার্জারকে কুপিয়ে জখম

আব্দুল মান্নানঃ তৃণমূলের নেতাদের কর্মিদের সাথে সবার সাথেই সকল স্তরের যোগাযোগ আছে। এখন যারা বিভিন্ন কমিটি , উপ-কমিটিতে নেতৃত্বে আছে তাদের সকলের সাথেই আমার যোগাযোগ আছে প্রতিনিয়ত। দোহার নবাবগঞ্জ কলেজের ২ ভিপি, ভিপি হারুন, ভিপি পলাশ, গালিমপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তপন মোল্লা আছেন আমাদের সাথে, কৃষকদল ঢাকা জেলা, ঢাকা জেলার মধ্যে মাত্র ৩ জন আছে যারা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান, তারা ৩ জনই নবাবগঞ্জের এবং আমার। আর দোহারের যারা তৃণমূলের তারা সবাইই আমার সাথে আছেন। আর কিছু লোক যারা পদ পদবীর জন্য, রুটি হালুয়ার জন্য এদিক সেদিক চলে গেছে। আবার মান্নান ভাই নমিনেশন পেলে এরা সবাই আবার আমার নিকট চলে আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

নিউজ৩৯: আপনার পর নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির উত্তরসূরী কাকে মনে করেন?

আব্দুল মান্নানঃ দোহার নবাবগঞ্জে যারা তরুণ তারা সবাই ই আমার ভবিষ্যৎ উত্তরসূরী। এই যে হারুন, পলাশ, রশীদ বা আবেদ এরাইতো আগামী দিনের কান্ডারী। আর পরিবারের ভিতরে আছে আমার মেয়ে – মেহেনাজ মান্নান। সে তো ব্যারিস্টার। এছাড়া মার মেয়ের জামাইও তো ব্যারিস্টার এবং বিএনপি’র নেতা। এরা আসতে পারে। এখনো তারা সক্রিয় থেকে দলকে সাহায্য করছে।

নিউজ৩৯: ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক খন্দকার আবু আশফাককে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আব্দুল মান্নানঃ খন্দকার আবু আশফাককে আমরা সবাই মিলে নবাবগঞ্জের বিএনপির রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করি। ২০০৯ সালে আমরা সবাই মিলে তাকে প্রথম বারের মতো নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করলাম। ২০১৪ সালে সে পাশ করে না। সেই সময় মির্জা আব্বাসের বাসায়, গয়েস্বর বাবুর সামনে তাকে আমরা নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী করি। যদিও আগলা ইউপি চেয়ারম্যান ও তৎকালীন নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি সভাপতি আবেদ হোসেনকে বসিয়ে আমরা তাকে প্রার্থী ঘোষনা করি। সেই সময় খন্দকার আবু আশফাক ঘোষনা দিলেন, যতদিন পর্যন্ত মান্নান ভাই চাইবেন তিনি সংসদ নির্বাচন করবেন। আমি তার প্রতিদ্ধন্দিতা করবো না। এরপর আমরা সবাই নবাবগঞ্জে এসে তার নির্বাচন করলাম এবং নির্বাচনের পর সে আমার সাথে আর দেখা করতেও আসে নি। গালিমপুর, শোল্লা, নবাবগঞ্জ ও বাড়ুয়াখালীতে তাকে নিয়ে আমি নির্বাচনের প্রচারনা চালাই এবং তাকে বিজয়ী করি।

নিউজ৩৯: দোহার-নবাবগঞ্জের বিএনপি কর্মীদের অভিযোগ, বিগত সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে ও মামলা-হামলায় আপনাকে কাছে পায়নি? এই ব্যাপারে কি বলবেন?

আব্দুল মান্নানঃ আমি সবসময়ই ছিলাম, যোগাযোগ রেখেছি। তৃণমূলের নেতৃত্বে যাদের হাতে, দলের যারা সিনিয়র নেতা তাদেরকে জিজ্ঞেস করেন আপনি জানতে পারবেন আমার সাথে তাদের কতোটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক। আমি সুখে দুখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। কিন্ত আমরা এক হলে বা কোন জায়গায় গেলে তো সরকারই আমাদের বসতে দেয় না, মামলা দেয়, আটক করে।

নিউজ৩৯: আগামী নির্বাচনে ঢাকা- ১ আসনে কে মনোনয়ন পাবেন কিনা?

আব্দুল মান্নানঃ আমি মনে করি, ঢাকা-১ থেকে তো আমিই মনোনয়ন পাব। জিয়া পরিবারের সাথে আমার গভীর সম্পর্ক, আমার ক্লিন ইমেজ আছে, দোহার-নবাবগঞ্জের অধিকাংশ নেতা কর্মীই আমার সাথে আছে। মনোনয়ন আমিই পাব। তবে দল যাকেই মনোনয়ন দিক। আমি তার সাথেই আছি। তার পক্ষেই কাজ করবো।

নিউজ৩৯: সালমান এফ রহমান ও সালমা ইসলামকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

আব্দুল মান্নানঃ যিনি আসেন, এই ঘাটি বিএনপি’র। এখানে বিএনপি’র ই জয় সুনিশ্চিত ইনশাল্লাহ।

নিউজ৩৯: নাজমুল হুদা বা তার প্রতিনিধি যদি আপনার প্রতিদ্বন্দি হয়, তখন আপনি কি করবেন?

আব্দুল মান্নানঃ তাহলে তো ভালই হয়, বন্ধু বন্ধু নির্বাচন হবে। কোন টাকার খেলা হবে না। সুষ্ঠ নির্বাচন  হবে।

নিউজ৩৯: আপনি বা আশফাক বা অন্যকেউ যদি নির্বাচন করে, তবে দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে কিনা?

আব্দুল মান্নানঃ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হিসাবে যেই মনোনয়ন পাক আমি তার পক্ষে কাজ করবো আর আমি পেলে কেউ কি বিরোধিতা করবে কি না, সেটা তাদের মানসিকতার ব্যাপার। তবে দল এবার কঠোর অবস্থানে। এই ধরনের কোন বিশৃঙ্খলার সুযোগ এবার দেয়া হবে না।

নিউজ৩৯: দোহার-নবাবগঞ্জের ভোটের রাজনীতিতে কি কি ইস্যু প্রভাব ফেলতে পারে?

আব্দুল মান্নান: দোহার নবাবগঞ্জে নির্বাচনে লোকাল ইস্যু প্রাধান্য পাবে। সেগুলো হলো শান্তি, উন্নয়ন, সামাজিক নিরাপত্তা, কেস মামলা এসব। আমার ২০ বছরে আমি ১ দিন থানায় গিয়েছি। আমার সময়ে সকলে শান্তিতে ছিলো। সবাইকে জিজ্ঞেস করেন।

এছাড়া আমরা যুবকদের কর্মসংস্থান চাই, নিরাপদে বা শান্তিতে ঘুমাইতে পারবে সকল জনগণ। আমি আমার সময়ে সমাজের অনগ্রসর জনগণকে বিশেষ প্রনোদনা দিয়েছি বিশেষ করে তাতী সম্প্রদায়কে।

মহিলা ভোটার এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য আমি সবার আগে তাদের অধিকার এবং সামাজিক সম্মান ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করবো। মেয়েরা মায়াবতী, তারাই পারে সামাজিক নৈতিকতা আর সু-সমাজ গড়তে।  তাদের জন্য এবং এর পূর্বেও সামাজিক, রাষ্টীয় ও ব্যাক্তিগতভাবে কাজ করেছি।

নিউজ৩৯:  তরুনরা রাজনীতিতে কেন আসবে?

আব্দুল মান্নানঃ তারা আসবে দেশ গড়তে, তারা জাতীয়তাবাদো শক্তিতে বলীয়ান হয়ে দেশপ্রেমে উজ্জ্বীবীত হয়ে দেশ বাচাতে, মানুষ বাচাতে এগিয়ে আসবে রাজনীতিতে। যেখানে থাকবে শান্তি, গণতন্ত্র ও সামাজিক সুরক্ষা। থাকবে না মামলা, হামলা, ভয় বা অপরাজনীতি।

নিউজ৩৯:  ১৯৯১ সালে মন্ত্রীর হওয়ার পর নবাবগঞ্জের উন্নয়নে আপনার ভুমিকা কি ছিল?

আব্দুল মান্নানঃ ১৯৯১ সালে মন্ত্রীর হওয়ার পর নবাবগঞ্জকে আমি তিলে তিলে গড়ে তুলেছি। তখন এই নবাবগঞ্জ ছিল না। যারা মুরব্বি আছেন তারা জানেন তখন নবাবগঞ্জে কিছুই ছিল না। ঢাকা থেকে বান্দুরা যাওয়ার এই রাস্তাটি আমিই তৈরি করেছি এবং পাকা করেছি। আরসাদআলী চরে, বেনুখালি সিরাজদিখানে খাল বা নদীর উপর যেসব ব্রীজগুলো আছে সব আমার সময়ে তৈরি। পরবর্তীতে আবার মন্ত্রী থাকাকালিন সময়ে ২০০৫ সালে আমি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে দিয়ে তুলশীখালী ও মরিচা ব্রীজ উদ্ভোধন করিয়েছি। ঢাকা থেকে বান্দুরা সড়ক নির্মান না হলে আমি মন্ত্রী থেকে পদত্যাগ করবো বলে জানিয়েছিলাম তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী কর্নেল অলি আহমেদকে।

নবাবগঞ্জে আমি ১২০টি প্রাইমারী স্কুল পাকা করেছি, দুইটি কলেজের ভবন নির্মান করেছি, অধিকাংশ স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদ ও মন্দিরেকে আমি কাঁচা থেকে পাকা ভবন বা নতুন ভবন তৈরি করে দিয়েছেন। আধুনিক নবাবগঞ্জ গড়তে প্রান্তিক জনগোষ্টীর কাছে বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছি। দত্তখন্দ, বালুখন্ড দিয়ে আমি মানিকগঞ্জ পর্যন্ত বিদ্যুৎ লাইন নিয়ে গেছি।  চাড়াখালী ও ভাঙ্গাভিটা পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌছে দিয়েছি। আমার সময়ই নবাবগঞ্জকে রক্ষা করার জন্য কাশিয়াখালি বেরিবাধ তৈরি করা হয়। এছাড়া নবাবগ্নজ, পাড়াগ্রাম, শোল্লা হয়ে কেরানীগঞ্জের হযরতপুর পর্যন্ত পাকা রাস্তা আমি নির্মান করে দিয়েছি। আমি বান্দুরা থেকে জামসা হয়ে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত সড়ক নির্মান করেছি। এছাড়া পাড়াগ্রাম ব্রীজ, শোল্লা-তাসুল্লা ব্রীজ আমি করে দিয়েছি।

১৯৯৭ সালে পাচগ্রাম ও দুধঘাটা স্কুলের ভবন নিজস্ব অর্থায়নে নির্মান করে দিয়েছি এবং মাঠ একোয়ার করে দিয়েছি। আমি আমার প্রভিডেণ্ট ফান্ডের সব টাকা দিয়ে ইছামতি কলেজ প্রতিষ্ঠিত করি ১৯৭২ সালে আর সাথে ছিলেন আর এক জন। তখন শিক্ষক পাওয়া যেতো না, তাই আমার স্ত্রী হলেন শিক্ষক, আর আমি আমার এক বন্ধুকে নিয়ে আসলাম ইংরেজির প্রভাষকরুপে। কমিউনিটি ক্লিনিক, রেড ক্রিসেণ্টের মা ও শিশু সনদ আমি নবাবগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত করি।

নিউজ৩৯: মন্ত্রী হিসাবে নিজেকে সফল মনে করেন?

আব্দুল মান্নান: সফল আমলা ছিলাম , আমি সাদাসিধে সরল জীবন করেছি। আমি সফল মন্ত্রী ছিলাম বলে মনে করি। আমিই বিমানকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে গিয়েছিলাম, আমি সিভিল এসোসিয়েশনসহ, গার্মেণ্টস নীতিমালা করে দিয়ে এসেছি। বস্ত্রমন্ত্রী থাকাকালে এটার রপ্তানী পণ্য হিসাবে আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টীর জন্য চেষ্টা করেছি। 1/11 এর সময় অনেকেই এরেস্ট হলেও আমি গ্রেফতার হয়নি বা মামলার শিকার হইনি। আমি পরীক্ষিত নেতা। সমস্যা হলো নতুন জেনারেশন আমার আগের কাজ জানে না, কিন্তু আজ যে অবকাঠামোগত উন্নয়নের নবাবগঞ্জ তা আমার অবদান। জনগণ বিচার করবে রাজনীতিবীদ হিসাবে আমার অবদান।

নিউজ৩৯ঃ সর্বশেষ কোন কথা নিউজ৩৯ এর পাঠদের উদ্দেশ্যেঃ

আব্দুল মান্নানঃ আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আমি দোহার – নবাবগঞ্জ বাসীর নিকট যে ভালোবাসা পেয়েছি তাতে আমি অভিভূত। আমি তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামী নির্বাচনে আমি যদি আবার মনোনয়ন পাই তাহলে আপনারা পুনরায় আমাকে নির্বাচিত করে আপনাদেরকে সেবা করার সুযোগ দিবেন, এই আশা ও দোয়া চাই। একই সাথে আপনারা কোন দল তা ভুলে সবাই এক হয়ে দোহার-নবাবগঞ্জে সু-শাসন ও উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করবেন, সবাই মামলা বা হামলা নয় শান্তিতে এক হয়ে বসবাস করবেন সেটাই আমার প্রত্যাশা। ভালো থাকবেন। দোয়া করবেন। নিউজ৩৯ কে অশেষ ধন্যবাদ। আসসালামু আলাইকুম।

সাক্ষাৎকার গ্রহনেঃ আছিফুর রহমান ও জুবায়ের হাসান

আপনার মতামত দিন