ঢাকার নবাবগঞ্জে থামছে না ফসলী মাটি বিক্রির মহোৎসব। ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নবাবগঞ্জের কৈলাইল, নামা মেলেং খালপাড় মাতাপপুর, কাটাখালী, মালিকান্দা, দৌলতপুর, শোল্লার আওনা চক, চক সিংহরা, চক সিংজোর, নয়শ্রী এলাকার শৈল্যা ও কলাকোপা ইউপির সাহেবখালিসহ শিকারীপাড়া, বাহ্রা ইউনিয়নে কয়েকটি স্পটে চলছে ফসলি জমির মাটি বিক্রির মহোৎউৎসব। প্রশাসনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।
এলাকাবাসীর দাবি, মাছচাষ করার কথা বলে পুকুর খনন করে শত শত বিঘা আবাদী কৃষি জমির মাটি ভেকু দিয়ে কেটে বিভিন্ন ইটভাটা ও স্থাপনা নির্মাণের কারীদের নিকট বিক্রি করছে মাটি বিক্রেতা সিন্ডিকেট। অন্যদিকে কৃষি কাজে জন্য ব্যবহার ভারত থেকে আমদানী করা মাহেন্দ্র দিয়ে দিয়ে মাটি আনা নেওয়ার ফলে অধিকাংশ গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করজে।
এ বিষয়ে সিংজোর গ্রামের অটোরিকসা(সি.এন.জি) চালক আব্দুস সালাম মোল্লা ও মেলেং গ্রামের রিকসা চালক মো. করিম নবাবগঞ্জের একটি চা স্টলে আলাপ কালে বলেন, রাস্তাঘাট যতই ঠিক করা হোক না কেন লাভ নেই, কারন মাটি বিক্রি বন্ধ না হলে মাহেন্দ্র চলাচল বন্ধ হবে না। মাহেন্দ্রর কারনে পাকা সড়কের পিচ উঠে যায় ও গর্তে সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে কাঁচা সড়ক ভেঙ্গে বড় বড় গর্ত হয় যা দেখার ও বলার কেউ নেই।
মাটি উত্তোলন হচ্ছে এমন সব এলাকার জনসাধারণের অভিযোগ, উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সারা বছরই এসব মাটিখেকোরা তাদের অবৈধ মাটি বিক্রির ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে এসব মাটিখেকোদের উৎপীড়নে দিশাহারা হয়ে উঠেছে ফসলি জমির মালিক ও কৃষি শ্রমিকরা।
ভূক্তভোগী কৈলাইল গ্রামের আমির মোহাম্ম্দ ও কাটাখালী গ্রামের মনির মিয়া বলেন, মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাতে প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করতে সদা তৎপর থাকেন একটি প্রভাবশালী চিন্থিত সিন্ডিকেট চক্র। আর এই সিন্ডিকেট চক্রটি যখন যার হাতে ক্ষমতা ও যে দল ক্ষমতায় থাকে সেই দলের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিবছর লক্ষকোটি টাকা।
নবাবগঞ্জের দৌলতপুর গ্রামের অধিবাসী হারাধন বলেন, আমাদের অঞ্চলের ভূমিখেকো ক্ষুদু মেম্বার, মহরচাঁন, যুবলীগের বাবুল, হাবিব(ডয়েস) মেলেং গ্রামের কথিত আওয়ামীলীগ নেতা আব্দুল ওহাব,কৈলাইল গ্রামের আবুল কাশেম, সহিদ সারাবছর মাটি বিক্রি করলেও প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করে না বরংথানার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে এসব ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন, তাদের সাথে পুলিশ কর্মকর্তাদের রয়েছে সুসর্স্পক। মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালায় পুলিশ এমন কথাও বলেন তিনি। ইছামতিনদীর পাড়ের সাইলকা গ্রামের আজাদ খাঁন বলেন, মাটিখেকো ক্ষুদু মেম্বারের কারনে কৈলাইল ও বাহ্রা ইউনিয়নের শত শত বিঘা কৃষিজমি নষ্ট হলেও ক্ষুদু মেম্বারের কিছুই হয়। কারন পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের শীর্ষ ব্যক্তিদের সাথে ক্ষুদু মেম্বারের রয়েছে হটলাইন। প্রশাসনের শীর্ষকর্তারা মাঝে মাঝে বেড়াতে আসেন তার বাড়িতে এমন তথ্যও জানান তিনি।
উপজেলার রাজপাড়া এলাকার বাসিন্দা কালাম মিয়া বলেন, আমাদের পাশর্^বর্তী সাহেবখালী দোহার উপজেলার সিমান্তবর্তী ইসলামপুর এলাকায় অবস্থিত সাহেবখালীর জে.বি.সি, জেপিবি, ইটভাটার কারনে সড়ক ও কৃষিজমির ব্যপক ক্ষতি হচ্ছে। ভেকুদিয়ে ফসলি জমির মাটি কেটে মাহেন্দ্র গাড়ি দিয়ে ই্টভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে নেওয়ার কারনে সড়কগুলো যাতায়াতের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে তারা স্থানীয় প্রশাসনের নিরবতাকে দায়ী করেন।
সমরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার শিকারীপাড়া এলাকার ডিএনবি ও চুনাকাটিবিল এলাকায় অবস্থিত জেবিসি, সাহেবখালীর জে.বি.সি, জেপিবি, মাঝিরকান্দা এলাকায় ডি.এন.বি ও শোল্লা পালিঝাপের এস.এসবি ব্রিকস্(এ.এ.বি) কৈলাইল ইউনিয়নে জে.বিসি(এনডিএস)ব্রিকস, এনবিএস, কে.এইচ.বি ,জে.বি.সি(এনডিএস) নামের ব্রিকফিল্ড মালিকরা শতশতবিঘা কৃষিজমির মাটি উত্তোলন করে কৃষি অধ্যুষিত এই অঞ্চলের কৃষককে ভাবিয়ে তুলেছে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা জাতীয় কৃষক সমিতির নেতা আসলাম খাঁন বলেন, কৈলাইল , সাহেবখালী, শিকারীপাড়াসহ উপজেলার বিভিন্ন ইটভাটা সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা জমি হারানোর দুশ্চিন্তায় এখন রাত দিন পাড় করছে। আর এসব আবাদযোগ্য কৃষিজমি বিভিন্ন কৌশলে খরিদ করে বছরের পর বছর মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাচ্ছেন। মাটিখেকো নামে বহুল পরিচিত বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট গ্রুপ। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী পরিচয়ে উপজেলা প্রশাসন ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সারাবছর মাটি বিক্রি করছে বিভিন্ন ইউনিয়নের বিক্রেতা সিন্ডিকেট। উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তাদের সাথে তাদের রয়েছে মহরম দহরম সর্ম্পক। স্থানীয়রা অভিযোগ করেও কোন লাভ হয় না বরং হামলা,মামলার শংঙ্কায় পড়তে হয় তাদের। নয়নশ্রী ইউনিয়নের শৈল্যার চকে ক্ষমতাসীন দলের পরিচয়ে যুবলীগ নেতা খৈমদ্দিনসহ বেশ কিছু নেতাকর্মী মাটি বিক্রির ব্যবসা চালাচ্ছে। এছাড়া শিকারীপাড়া এলাকায় তিনটি স্পটে ইট ব্যবসায়ী বাদলের নেতৃত্বে চলছে মাটি বিক্রি।
এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মনজুর হোসেনের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, লিখিত অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) শরীফ রায়হান কবির মুঠোফোনে বলেন, বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তোফাজ্জল হোসেন কে জানানো হবে এবং তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা কথাও বলা হবে।
উপজেলা কৃষিসম্প্ররারণ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, নবাবগঞ্জে মোট আবাদী জমির পরিমান ১৭৫১১ হেক্টর। যারমধ্যে একফসলি জমি ৬৯৯৩ হেক্টর ,দুই ফসলিজমি ৮৬২৮ হেক্টর, তিন ফসলিজমি ২১৮১ হেক্টর। এছাড়া তিনের অধিক ফসলি জমির পরিমান২৫ হেক্টর আবাদ যোগ্য পতিত জমি ২৪৫ হেক্টর। কিন্ত বর্তমানে প্রতিদিন ২ থেকে ৩শ’ বিষা কৃষিজমি কথিত মাটি ব্যবসায়ীরা বিনষ্ট করছে। পুকুর খনন ও মাছ চাষের কথা বলে মাটি উত্তোলন করছে তারা।