ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার কলাকোপা বাগহাটি গ্রামের ২শ বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও ঐতিহাসিক নিদর্শন বহন করে চলেছে দরবেশ ক্ষেপারাণীর আখড়া। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জরাজীর্ণ কুটিরটি। স্থানীয়ভাবে কয়েকবার মেরামত করা হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে পাকা ভবনসহ টিনের ছাউনি। ঐতিহাসিক এ নির্দশনটি সরকারিভাবে রক্ষা করতে জরুরিভাবে সংস্কার দাবি জানান স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয় বাসিন্দা সূর্যকান্ত চক্রবর্তী তার বাবা-দাদাদের মুখে শোনা কাহিনি উল্ল্যেখ করে জানান, বাংলা ১২০০ বঙ্গাব্দের প্রথম দিকে দরবেশ গোসাই বলাই চাঁন এ এলাকায় আবির্ভাব ঘটে। সে সময়ে তিনি কলাপাতার বেড়ার একটি ঝুপড়ি ঘরে বাস করতেন। নানা রোগমুক্তির আসায় এলাকাবাসী তার দারস্থ হতেন। দরবেশ গোসাই বলাই চাঁন রোগীদের আয়ুর্বেদিক প্রদ্ধতির ওষুধ দিতেন। আবার ঝাড়-ফুঁকও করতেন। পরে স্থানীয়রা তার ভক্ত বনে যায়। তার আচার-আচরণ দেখে স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন মুগ্ধ হয়। ১২৫১ বঙ্গাব্দে দরবেশ গোসাই বলাই চাঁন দেহত্যাগ করেন। বছর খানেক পরে স্থানীয় হিন্দু পরিবারের গৃহবধূ ক্ষেপারাণী স্বপ্নের আদেশে দরবেশ তত্ত্ব গ্রহণ করেন। তিনি সংসার ধর্ম ত্যাগ করেন এবং ওই আখড়ার দায়িত্ব নেন। ১৩০৫ বঙ্গাব্দে স্থানীয় কয়েকটি ধনাঢ্য ঘোষ পরিবার আখড়ার জন্য পাকা কুটির নির্মাণ করে দেয়। সেই থেকে এ কুটিরের নাম ক্ষেপারাণীর আখড়া। তার মুখের বাণী আজো এলাকাবাসীর মুখে মুখে রটে বেড়াচ্ছে। রয়েছে সহস্রাধিক ভক্তও।
স্থানীয় বাসিন্দা তারাপদ সাহা জানান, সেই ছোটবেলা থেকে আখড়াটি দেখে আসছিলেন। তারা কখনো কারও সঙ্গে ঝগড়া বা খারাপ ব্যবহার করতেন না। সারাক্ষণ শুধু নীরব ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। তাদের রীতি মতে নিজেরা রান্না করে খেতেন না। অন্যের বাড়ি থেকে যা আসে তা দিয়ে দিন পার করেন। খাবারের একটি দানাও তারা অপচয় করতেন না। তবে তাদের কোনোদিন না খেয়ে থাকতে শুনিনি। এলাকার কারও না কারও বাড়ি থেকে তাদের খাবার আসত।
তিনি আরও জানান, আখড়াটি ওই সময়ের স্থানীয় হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় করেছিল। আজো তাদের দৈনন্দিন জীবন-জীবিকায় এলাকাবাসী তাদের সহযোগিতা করে। সেই বিশ্বাস আজো অটুট রয়েছে স্থানীয়দের কাছে। সেই জরাজীর্ণ কুটিরে আজো বাস করে আসছেন এক অধিষ্ঠিত দরবেশ।
জানা যায়, আশ্রমে একজন করে দরবেশ অধিষ্ঠিত থাকেন। ক্ষেপারাণী ১১৭২ বঙ্গাব্দে দেহত্যাগের পর দরবেশ দামোদর চাঁন, নদীয়ার চাঁন, অলকা রাণী এ আশ্রমে দেহত্যাগ করেছিলেন। এখন দরবেশ মরণ চাঁন আখড়ায় অধিষ্ঠিত আছেন।
দরবেশ মরণ চাঁন জানান, এটি একটি কঠিন ব্রত। আমি দেহত্যাগী প্রয়াত দরবেশদের স্মরণ করে সারা দিন তাদের আত্মার শান্তি কামনা করি। মানবকল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে পেরে আমি গর্বিত। ঈশ্বর সবার মঙ্গল করুন।
স্থানীয়দের দাবি, প্রাচীন এ স্থাপনাটি রক্ষায় সরকারিভাবে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলে ঐতিহাসিক এ নিদর্শনটি কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে। প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম এ প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন বহন করবে প্রাচীন সংস্কৃতি। ধারণ করবে যুগ-যুগান্তরের কল্পকাহিনি।