নদী ভাঙ্গনে বিলিনের পথে মিনি কক্সবাজার

199
নদী ভাঙ্গনে বিলিনের পথে মিনি কক্সবাজার

দোহার (ঢাকা) প্রতিনিধি শরীফ হাসান : ঢাকার দোহার উপজেলার মাহমুদপুর ইউনিয়নের মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটঘাটসহ আশপাশের এলাকায় পদ্মা নদীর পানি হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া ভাঙনের দেখা দিয়েছে। গত কয়েক দিনে পদ্মার ভাঙনে ফলে মিনি কক্সবাজারখ্যাত মৈনটঘাটের প্রায় ১শ থেকে দেরশত দোকান, মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এই ভাঙ্গনের ফলে বিলিনের পথে গরিবের মিনি কক্সবাজার খ্যাত মৈনটঘাট।

তীব্র নদী ভাঙ্গনের ফলে যেকোনো সময় ঢাকা গুলিস্তানগামী যমুনা পরিবহন ও দ্রুত পরিবহণের বাস কাউন্টারটি পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে বলেও মনে করছেন স্থানীয়রা জনসাধারণেরা। এই তিব্র নদী ভাঙ্গনের ফলে অস্তিত্বের মুখে এখন মিনি কক্সবাজার নামক বিনোদন কেন্দ্রটি।

হঠাৎ পদ্মার পানি বৃদ্ধির কারণে এ ভাঙন শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন ঐ স্থানের ব্যবসায়ীরা।এরি মধ্যে নদীর তীরবর্তী অসংখ্য নিচু জমি পদ্মার পানিতে তলিয়ে গেছে। এর ফলে স্থানীয় জনসাধারণ ও মাহমুদপুর ইউনিয়নের লোকজনের মধ্যে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত কয়েকদিনে বাহ্রাঘাট মিনি পতেঙ্গা থেকে মৈনটঘাট মিনি কক্সবাজার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটারব্যাপী এ ভাঙনের দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম আসার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়। এ বছরও চলমান মৌসুমে ভাঙনের প্রাদুর্ভাব শুরু হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি পদ্মার ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই দোহার উপজেলার মানচিত্র থেকে মাহমুদপুর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

অন্য খবর  বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ মোয়াজ্জেম হোসেনের ইন্তেকাল

শুক্রবার বিকালে সারজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আগের মৈনটঘাট মিনি কক্সবাজার আর এই সময়ের মৈনটঘাট অনেক ছোট। ভাঙ্গনের ফলে আগের থেকে ছোট হয়ে গিয়েছে এই মৈনটঘাট। গত সপ্তাহেও ছিল দর্শনার্থীদের অনেক ভির। মিনি কক্সবাজারের এক থেকে দেড়শত দোকান ভেঙ্গে নদীতে চলে গিয়েছে। ঐ স্থানে থাকা ভাসামান রেস্টুরেন্ট নদী গর্ভে চলে গিয়েছে।

ঐস্থানে থাকা মসজিদটিও ভেঙ্গে নদীতে চলে গিয়েছে। নদী ভাঙ্গন রোধের কাজে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীদের কাজ করতে। উপজেলার মিনি কক্সবাজার এলাকার মৈনটঘাটে অবস্থিত লঞ্চ টার্মিনাল ও প্রায় ১শ থেকে দেড়শত ভ্রাম্যমাণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের দোকানপাট গত কয়েক দিনে পদ্মা নদীর গর্ভে চলে গেছে।
মৈনটঘাট এলাকার ৫০ বছর বয়স্ক এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো: আক্কাস বলেন, মৈনটঘাটে দোকান করে কোনোমতে পরিবার-পরিজন নিয়ে জীবনযাপন করতাম। এ বছর পদ্মার ভাঙনে হয়ত আর ব্যবসা করতে পারব না। যেকোনো মুহূর্তে আমার দোকান নদীগর্ভে চলে যাবে।

মৈনটঘাটে ব্যবসায়ী আব্দুর কাদের বলেন, গত কয়েক দিনে দোকান ঘরটি তিনবার সরিয়েছি। জানি না আবার কী হবে। এভাবে ভাঙতে থাকলে আর ব্যবসা করতে পারব না।

ভাসমান রেস্টুরেন্টের মালিক আব্দুল জলিল জানান,গত বুধবার সন্ধ্যায় নদীপাড়ের ভাসমান রেস্টুরেন্ট জল-জোসনার সব স্থাপনাসহ স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এতে আমাদের প্রায় ৫ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শামিম বলেন, তাদের কোনো জমি বা জায়গা নাই, অল্প একটু বাড়িভিটে ছিল তাও নদীগর্ভে চলে গেছে। বর্তমান বাড়িটি চলে গেলে আমাদের আর কিছুই থাকবে না। এ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

অন্য খবর  হাসনাবাদের রাস্তা: শত দূর্ভোগের পরও উন্নয়ন নেই

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা শামিমা আক্তার বলেন, ঢাকার পাশে মিনি কক্সবাজার হওয়া প্রায়ই আমরা ঘুরতে আসি কিন্তু আজকে এসে দেখি আগে মিনি কক্সবাজার আর এসময়ে মিনি কক্সবাজার অনেক পার্থক্য। ভাঙতে ভাঙতে এত ছোট হয়ে গিয়েছে এখন আর মিনি কক্সবাজার নাই শুধুই রাস্তা আর কিছু কৃষি জমি রয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন দোহার উপজেলা চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম, পৌর মেয়র আলমাছ উদ্দিন ও শুক্রবার দোহার সার্কেলের এ এসপি আশরাফুল আলমও মিনি কক্সবাজার পরির্দশন করেন।

সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে মো: কুতুব জানান আমরা নদী ভাঙ্গা রোধে কাজ করে যাচ্ছি। আগের থেকে অনেক কমে গিয়েছে নদী ভাঙ্গা। আমরা আরো ২-৩ সপ্তাহ কাজ করবো। তিনি আরো জানান, প্রয়োজন হলে আমরা আরো বেশী কাজ করবো। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যেখানেই কাজ করে কাজের সফলতা আসে।

দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবাশ্বের আলম বলেন, পদ্মার ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে জরুরিভিত্তিতে সেনাবাহিনী কাজ করছে। ইতোমধ্যে দুইশ আশি কেজি ওজনের জিওব্যাগ ভাঙনরোধে ফেলা হচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। যেকোনো জরুরি অবস্থায় প্রশাসন জনসাধারণের পাশে আছে বলেও জানান তিনি।

আপনার মতামত দিন