দোহারে নদী ভাঙনে পদ্মায় বিলীন ৪শ বাড়ি

273

গত এক মাসে পদ্মার ভাঙনে দোহার উপজেলার নারিশা, সুতার পাড়া, মধুরচর বিলাশপুর, মাহমুদপুর, নয়াবাড়ি, নারিশা ইউনিয়নের প্রায় চার শতাধিক বসতবাড়ি আর বিস্তীর্ণ ফসলের জমি নদীতে চলে গেছে।

ভাঙনের বর্ণনা দিতে গিয়ে রোববার আবেগাপ্লুত ৬৫ বয়সী বৃদ্ধ মোসলেম জানান, গত এক মাসে প্রচুর স্রোত, বাতাস ও বৃষ্টির কারণে ঢেউয়ের ব্যাপকতা এতই বেশি ছিল যে নিমিষেই ভেঙে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। নদী তীরবর্তী এলাকার লোকজন তাদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার সময়টুকু পায় নি। অসহায়ের মতো কান্নাকাটি করা ছাড়া তাদের আর কোনো উপায় ছিল না।

বর্তমানে ভাঙন এলাকার মানুষ মেঘুলা ধোঁপাড়ির খেলার মাঠে গবাদি পশুর সঙ্গে একসাথে বসবাস করছে। এলাকায় বিশুদ্ধ পানি তীব্র সঙ্কটের কারণে ছড়াচ্ছে নানা রোগ জীবাণু। তিনি বলেন, “এই পর্যন্ত সরকারের কোনো লোক বা চেয়ারম্যান মেম্বার আমাগো খোঁজখরবও নিবার আহে নাই। নারিশা পশ্চিম চর এলাকার অনেকরই ভাষ্য ক্যামনে খাওন জুগামো কোতায় থাকমু হেই চিন্তায় আছি। বসতভিটা হারা মানুষের আকুতি আমাগো ইটটু জাগার ব্যবস্থা কইরা দেন।”

দোহার উপজেলা মধুরচর এলাকার বছরের বৃদ্ধা আম্বিয়া বেগম বলেন, “ইলেকশন আইলে নেতারা আমাগো কয় এইব্যার পাস করলে পদ্ধায় বান দিয়া দিমু, বাড়ি বানাইয়া দিমু. আরও কত কি। হেগো কতা হুইনা ভুট দেই, ভুটের পরে হেগো আর খরর থাহে না।”

অন্য খবর  পালামগঞ্জ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন বছরের বই বিতরন 

আম্বিয়ার মতো হাফেজ মাওলানা শফিকুল ইসলাম, নারিশা ইউপি সদস্য আব্দুল হক মাদবর, শাহআলম মাদবর, হাবিব সরদার, কুদ্দুস নুর ইসলামসহ সবার একই ধরনের অবস্থা। আশা নিয়ে ঘর বাঁধেন সে ঘর চলে পদ্ধার পেটে। তারা নিজেরাও বুঝতে পারে না কোথায় কখন ভাঙা শুরু হবে।

নারিশা ইউনিয়নের বাসিন্দা বসির আহমেদ বলেন, “নারিশা পশ্চিম চর এলাকার প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে।” প্রতিবছর ভাঙনে পদ্ধার গতিমুখ পরিবর্তন হওয়ায় এ বছর এলাকাটিতে ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

স্থানীয়দের অভিমত স্থায়ীভাবে নদীর বাঁধ নির্মাণ করা ছাড়া দোহারকে রক্ষার কোনো উপায় নেই। তারা আরো বলেন, নারিশা পশ্চিম চর মধুরচর এলাকায় গত এক মাসের ভাঙনে দুই ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদীতে চলে গেছে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান সরকারি রাস্তাঘাটসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।

ভাঙনকবলিত সর্বস্বহারা এসব মানুষজন খেলার মাঠে ঝুপড়ি বানিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। কেউবা খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপন করছে। ঢাকা জেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমাদের দোহারের প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন এ কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনী ওয়াদা ছিল দোহার-নবাবগঞ্জকে পদ্ধার ভাঙন থেকে রক্ষা করবেন। আমরা এলাকাবাসী এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওয়াদার বাস্তবায়ন চাই।”

অন্য খবর  কাজী রাইয়ানকে বাঁচাতে প্রয়োজন আর্থিক সহায়তার

তিনি বলেন, ভাঙন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদ নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনুরুল করিম ভুঁইয়া বলেন, “দোহারের প্রধান সমস্যা নদী ভাঙন। অস্থায়ী ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করে দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।”

ঢাকা জেলা প্রশসক মোফাজ্জল হোসেন বলেন, “ভাঙন কবলিত আমি পরিদর্শন করেছি। ভাঙনের অবস্থা ভয়াবহ ও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পুনর্বাসনের জন্য আমি জলবায়ু ট্রাস্ট এর কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলছি এবং ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে আলোচনা করেছি। দ্রুত সম্ভব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আপনার মতামত দিন