সারাদেশের মতো অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দোহার-নবাবগঞ্জের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বাজারে। সকালে একদাম তো বিকালে এক দাম; রাতে একদাম তো সকালের আরেক দাম। প্রতিনিয়তই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মুল্যের দাম। যার মাসুল গুনছেন সারা দেশের মানুষের মতো দোহার নবাবগঞ্জের সাধারন মানুষও। ফলে একদিকে যেমন দেখা দিয়েছে পণ্যের কৃত্রিম সংকট, অন্যদিকে পন্য দ্রব্যের দামও বাড়ছে পাগলা ঘোড়ার মতো।
বুধবার সকাল ও রাতে প্যাকেটের ১ কেজি আটার বিক্রয় মুল্যের পার্থক্য ছিল ১৫ টাকা। এই রকম মুল্যের উঠানামা দেখা গেছে অন্যসব পন্যের ক্ষেত্রেও। সয়াবিন তেলের মুল্য লিটার প্রতি ২০ টাকার ঘর ছাড়িয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু এখন সরকার নির্ধারিত মুল্যেও পাওয়া যাচ্ছে না সয়াবিন তেল। ডিলারদের বিভিন্ন শর্ত ও সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম দাবি করার কারনে সাধারন দোকানীরাও এখন নিচ্ছে না সয়াবিন তেল। তাছাড়া সয়াবিন তেলের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির কারনে সাধারন মানুষও এখন আর আগের মতো বাজার করতে পারছেন না। যে ক্রেতা আগে ৫ লিটারের বোতল ক্রয় করতো সে এখন ৩ লিটার তেল কিনছে। ফলে একদিকে যেমন বাড়ছে তেলের দাম ঠিক একই ভাবে সংকোচিত হচ্ছে সাধারন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা। আবার দোকানীরা ৫লিটারের তেলের ক্যান ভেংগে ১লিটার করে বিক্রি করছেন চাহিদা মেটাতে ও বেশি লাভ করতে। এক কেজি রসুন এখন ১৫০ টাকা, মায়ানমারের পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৪৪ টাকা, ১ কেজি গুড়ো দুধের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫/৪০ টাকা, ডিটারজেণ্টের দাম বেড়েছে কেজি প্রতি প্রায় ২৫/৩০ টাকা, বড় সাবানের দাম হয়েছে ৩৫ থেকে বেড়ে রকমভেদে ৪৫/৫০ টাকা।
নবাবগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী সায়ের আলী বলেন, আটার প্যাকেট ভেংগে বিক্রি করলে ৫কেজির প্যাকেটে অতিরিক্ত ৭০/৮০ টাকা বেশি থাকে। তেলের ক্ষেত্রেও তাই। ডিলাররা মাল ঠিকমতো দিচ্ছে না। আবার ডিলাররা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে আমাদেরকে। আমাদেরতো তেমন কিছুই করার নাই। সরকার যদি সিন্ডিকেট বা মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণ না করে, তবে কিছুই হবে না।
মেঘুলা বাজারে বাজার করতে আসা ক্রেতা জাহিদুল বলেন, বাজারেতো আগুন লেগে গেছে ভাই। আমরা যে কিভাবে বাচবো, তা জানি না। আমরা সরকারের উর্ধতন কতৃপক্ষকে অনুরোধ করবো দ্রুত বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে। সবকিছুই কেজি প্রতি ২০/৩০/৪০ টাকা বেশি। এভাবে চললে আমরা যে অসহায় মানুষ আছি, তাদের তো আর বাচার কোন উপায় নাই।
বেগম আয়েশা গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক মাহমুদুল হাসান সুমন নিউজ৩৯ কে বলেন, দ্রব্য মূল্যের উর্ধ গতির কারণে সব কিছুই এখন একটু কমিয়ে কিনতে হচ্ছে। ব্যয় কয়েকগুণ বাড়লেও, আয় বাড়েনি। প্রশাসনের বাজার মনিটরিং এর অভাবে সরকারের নির্দেশনা কেউই মানছে না। এতে কৃত্রিমভাবে সরকারের ইমেজ ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে। আগে ৫ লিটারের সয়াবিন তেল কিনতাম; এখন ৩ লিটারের কিনি। তাছাড়া সব কিছুই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। আমাদের মতো মধ্যবিত্তের সাধারন মানুষের এখন বেচে থাকাই কষ্ট। আর মধ্যবিত্ত হিসেবে সম্মান নিয়ে বাচি বলে, কষ্টের কথা কাউকে বলাও যায় না।
এই চিত্র দোহার-নবাবগঞ্জের সর্বত্রই। সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে শ্রমজীবি মানুষেরা। জয়পাড়া বাজারের রিকশাচালক রুবেল বলেন, তেল-চাল, মাছ-মাংসের দাম যেমনে বাড়ছে, সবই নাগালের বাইরে। এখন মাসে ২/১ দিন পোল্ট্রি কিনি নাইলে সবজি খায়। আর শেষ বাজারে সুযোগ বাইলে সস্তাদরে কিছু মাছ কিনি। গ্যাসের দাম, বিদ্যুৎ এর দাম বাড়ছে, বাজারেতো কোন সিস্টেমই নাই। মাঝে মাঝে তাল না মিলাইয়ে মনে হয় মইর্যা যাই।
প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় করোনার মহামারী সময়েও খুব বেশী প্রভাব পড়েনি জনযীবনে। কিন্ত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় বাজারে অস্থিতিশীলতা, চাকুরীচ্যুতি, কর্মহীনতা, প্রবাসে বেকারত্ব, দেশে সংকট সব মিলিয়ে সংকুচিত হচ্ছে দোহার-নবাবগঞ্জের মানুষের আয়, সংকুচিত হচ্ছে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা। তেল, চাল, চিনি, আটা, সবজি দাম বৃদ্ধি ও একইসাথে মাছ-মাংসের বাজার মনিটরিং এর অভাবে লাগামহীন হওয়ায় এখন দোহার-নবাবগঞ্জবাসী ব্যয় ও বাজার সংকোচনে মনোযোগ দিচ্ছে। প্রতিদিনের আমিষের স্থলে এখন সবজি স্থান পাচ্ছে, নিত্যকার চা-দুধ এর খরচ সীমিত হয়েছে, রান্নাতে কমেছে তেলের ব্যবহার, বিভিন্ন হোটেল-রেস্টুরেণ্টে খরচ উঠাতে মালিকপক্ষ হিমশিম খাচ্ছে। করোনা মহামারীর সময় থেকে এখন পর্যন্ত অনেকেই সঞ্চয় ভেংগে খেয়েছেন, অনেকেই বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আছেন চরম সংকটে।
মজনু, রংপুর থেকে দোহারে এসেছেন রিক্সা চালাতে। কিন্তু যে টাকা আয় করছেন তা দিয়ে নিজের ও রংপুরে থাকা পরিবার চালাতে তার কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বান্দুরা বাজারের রিক্সাচালক সোহেল মিয়া নিউজ৩৯কে জানান তার প্রতি দিনের কষ্টের কথা। তিনি বলেন, সবকিছুই এখন ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। গরিব মানুষের এই দেশে বেচে থাকা কষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিদিন যা কামাই করি তা দিয়ে ৫ সদস্যের পরিবারের ডাল-ভাত জোগার করাই কষ্ট হয়ে গেছে। চাল কিনলে ডাল কেনার টাকা থাকে না, ডাল কিনলে চাল কিনার টাকা থাকে না। এইভাবে বাচবো কিভাবে সেটাই এখন কুল পাচ্ছি না। সন্তানকে যে পড়াশোনা করাবো কিভাবে সেটাই এখন ভেবে পাই না। অনেকেই বলেছে পড়াশোনা বাদ দিয়ে কোন কাজে লাগিয়ে দিতে। সেটাই দিবো বলে চিন্তা করছি।
দোহার-নবাবগঞ্জবাসীর প্রত্যাশা অসম্ভবকে সম্ভব করে ঢাকা-১ সাংসদ তাদেরকে পদ্মা বাধ, গতিশীল হাইওয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি তিনি পরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য নিরসন করেছেন। তিনি যদি বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় নজর দেন, তাহলে দোহার-নবাবগঞ্জবাসীর নিত্যদিনের বাজার সমস্যার সমাধান হবে ।