দোহার-নবাবগঞ্জ (ঢাকা): দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে প্রার্থী সাতজন। তবে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান এমপি সালমান এফ রহমান (নৌকা) ও জাতীয় পার্টির (জাপা) প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি সালমা ইসলামের (লাঙল) মধ্যে। অবশ্য সালমানের জয়ের পাল্লা কিছুটা ভারী বলে মনে করছে সুধীসমাজ।
সালমান এফ রহমান প্রধানমন্ত্রীর শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা আর সালমা ইসলাম জাপার কো-চেয়ারম্যান।
দুই প্রার্থীই শিল্পপতি। গণসংযোগসহ নির্বাচনী প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেছেন। উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আবারও ভোটারদের নৌকায় ভোট দেওয়ার আহবান জানিয়েছেন সালমান।
আর সালমা ইসলাম অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে আবারও তাঁকে বিজয়ী করতে ভোটারদের আহবান জানিয়েছেন ।
২০০৮ সালের নির্বাচনের সময় দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার দুটি আসনকে একটি আসন (ঢাকা-১) করা হয়। আসন দুটি একসময় বিএনপির ‘ঘাঁটি’ ছিল। আসন দুটি থেকে একাধিকবার এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন বিএনপির প্রয়াত নেতা আব্দুল মান্নান ও নাজমুল হুদা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির আব্দুল মান্নানকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান খান বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে নেন।
আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মান্নান খান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পায়। তবে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মান্নান খানকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন জাপার সালমা ইসলাম।
আওয়ামী লীগের একাংশ মান্নান খানের বিরোধিতা করায় এবং বিএনপির সমর্থন পাওয়ায় সালমা বিজয়ী হয়েছিলেন বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে জোটের প্রার্থী হন সালমান।
আর দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সাবেক মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী সালমা। বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী সালমান। তবে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হন সালমা।
সালমান এফ রহমান এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর পদ্মা রক্ষা বাঁধ, কালীগঙ্গা বাঁধসহ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বদলে গেছে দৃশ্যপট। বিএনপির ‘দুর্গ’ আওয়ামী লীগের শক্ত ‘ঘাঁটিতে’ পরিণত হয়েছে। সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ একাট্টা। মাটি কাটাসহ বিভিন্ন অপরাধ দমনে এমপি সালমানের ভূমিকার প্রশংসা করছেন ভোটাররা। তাই ঢাকা-১ আসনে অনেকটা এগিয়ে আওয়ামী লীগ।
সুধীসমাজ মনে করে, সালমান এফ রহমান ও সালমা ইসলামের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে।
তবে শেষ হাসির সম্ভাবনা সালমানের। কারণ, সালমানের নেতৃত্বে দোহার ও নবাবগঞ্জ আওয়ামী লীগ আগের চেয়ে অনেকটা সুসংগঠিত। আওয়ামী লীগের দলীয় ভোট পুরোটাই তিনি পেতে পারেন। অন্যদিকে জাপা বা সালমা ইসলামকে এবার সমর্থন দেবে না বিএনপি।
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ ঝিলু, সাধারণ সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ ও দোহার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, নানা কাজের মাধ্যমে সালমান এফ রহমান সর্বস্তরের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছে তিনি জনপ্রিয়। ভোটাররা আবারও তাঁকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবেন।
ঢাকা-১ আসনের মধ্যে দোহার উপজেলায় রয়েছে একটি পৌরসভা ও আটটি ইউনিয়ন। এই উপজেলায় মোট ভোটার দুই লাখ ১১ হাজার ৫৫৭ জন। আর নবাবগঞ্জ উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। এই উপজেলায় মোট ভোটার ৩ লাখ ২ হাজার ৫২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫২ হাজার ১২ এবং মহিলা ভোটার এক লাখ ৯৩৪ জন। এ ছাড়া ৩ জন তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন। দুই উপজেলায় ভোটার সংখ্যা ৫ লাখ ১৩ হাজার ৬০৯।