দোহার – নবাবগঞ্জে জমে উঠেছে ত্রিমুখী লড়াই

506

প্রতিবার নির্বাচনের একেবারে শেষ মুহূর্তে কিছু জমজমাট নাটকীয়তার সৃষ্টি হয়। আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও এর ব্যতিক্রম নয়। নির্বাচনী আসনগুলোতে চূড়ান্তভাবে কারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন সেটা নিশ্চিত হয়েছে নানা সংশয় ও নাটকীয়তার পর। ঢাকা-১ আসনও এর ব্যতিক্রম নয়। ঢাকা জেলার দোহার ও নবাবগঞ্জ নিয়ে গঠিত এই আসনটিতে ধানের শীষ প্রতীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক। গত শুক্রবার ২০৬ জনের চূড়ান্ত মনোনয়নের যে তালিকা প্রকাশ করে বিএনপি সেখানে তাঁর নাম ছিল না। মামলার কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন বাতিল করায় ওই তালিকায় তিনি ছিলেন না বলে জানা যায়। ইসিতে আপিল করে প্রার্থিতা ফেরত পান আশফাক। এরপর গত রোববার তাঁর মনোনয়ন নিশ্চিত করে বিএনপি। অন্যদিকে এই আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন সালমান এফ রহমান। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন সালমা ইসলাম।

ঢাকা-১ আসনে সালমা ইসলাম এবং সালমান এফ. রহমানের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। তবে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাকের শক্ত অবস্থান জমজমাট ভোটযুদ্ধকে শ্বাসরুদ্ধকর লড়াইয়ে পরিণত করছে। সালমা ইসলাম মহাজোটের অন্যতম অংশীদার জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যও তিনি। তবে সালমা ইসলামের সবচেয়ে বড় পরিচয় হলো তিনি দৈনিক যুগান্তর ও যমুনা টেলিভিশনের অন্যতম কর্ণধার। শিল্পপতি ও যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল তাঁর স্বামী।

অন্য খবর  সুতারপাড়ায় সড়ক দূঘটনায় সাবেক যুবদল সেক্রেটারি আহত

জাতীয় পার্টি ও মহাজোটের নানা হিসাব নিকাশের কারণে সালমা ইসলাম নিজ দল থেকে মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়ছেন তিনি। বলাই বাহুল্য, দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে নির্বাচনের মাঠে সালমা ইসলাম দুর্বল হয়ে পড়বেন এমনটা নয়। প্রবল পরাক্রমেই তিনি নির্বাচনী যুদ্ধে নেমে পড়েছেন।

ঢাকা-১ আসনটি জাতীয় সংসদের ১৭৪ তম আসন। আসনটির মোট ভোটার ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪০৭জন। স্বাধীনতার পর থেকে ৯০ এর আগে পর্যন্ত এই আসনে কোনো দলেরই একক আধিপত্য ছিল না। তবে ১৯৯১ সাল থেকে টানা তিনটি নির্বাচনে জিতে এই আসনটিকে নিজের রাজত্ব বানিয়ে ফেলেন বিএনপির সাবেক নেতা ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে সেই রাজত্বের অবসান ঘটে। ওই নির্বাচনে ঢাকা-১ আসন থেকে জয় পান আওয়ামী লীগের প্রার্থী আব্দুল মান্নান খান। তিনি বিএনপির আবদুল মান্নানকে প্রায় ৩৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। দুই দশক পর আসনটির দখল পায় আওয়ামী লীগ। তবে ২০১৪ সালে তা আবারো হাতছাড়া হয় তাদের।

জনপ্রিয়তার দিক থেকে সালমান, সালমা এবং আশফাক তিনজনই প্রায় সমানে সমান। এর আগে সালমান এবং সালমা দুজনই ঢাকা-১ আসন থেকে একবার করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হয়ে সালমা আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান খানকে পরাজিত করেন। অন্যদিকে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির নাজমুল হুদার কাছে হেরে গিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান। সেই নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দোহারে এক রকম অবাঞ্ছিতই হয়ে পড়েছিলেন সালমান এফ রহমান। এরপর পেরিয়ে গেছে অনেকগুলো বছর। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও বদলে গেছে। বিএনপি থেকে বেরিয়ে নাজমুল হুদা আলাদা দল গঠন করেছেন। এই নির্বাচনে তিনি ঢাকা-১ আসনে সালমান এফ রহমানকে সমর্থন দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

অন্য খবর  মুজিব বর্ষ ও স্বাধীনতা দিবস উৎযাপন নিয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভা

ত্রিমুখী লড়াইয়ের কারণে ঢাকা-১ আসনের ভোটযুদ্ধ এবারের নির্বাচনে বাড়তি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। জয় পেতে তিনজন প্রার্থীই তাদের সব শক্তি প্রয়োগ করবেন, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এই লড়াইয়ে শেষ হাসি কে হাসবেন সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।

আপনার মতামত দিন