দোহার উপজেলা যুবদল, পর্ব-১: ব্যর্থতার দায়ভার কতটুকু নিবেন সাবেক সভাপতি আবুল হাশেম?

1873
দোহার উপজেলা যুবদল

একের পর এক আন্দোলন ব্যর্থতা ও কমিটি গঠনে টাকা আদায় ও টাকার বিনিময়ে পদ লাভ সহ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত ছিল দোহার উপজেলা ও পৌরসভা যুবদল। সম্পূর্ণরুপে স্থবির, নিস্ক্রিয় ও সংগঠনে গতি আনতে না পারার কারণে ঢাকা জেলা যুবদল সভাপতি ভিপি নাজিম স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে দোহার উপজেলা যুবদল কমিটি ভেঙে দেন। এখন অভিযোগ উঠেছে এই নিস্ক্রিয়তার কারণ ছিল বিগত কমিটির সভাপতি আবুল হাশেমের নিষ্ক্রিয়তার, স্বজনপ্রীতি, অযোগ্যতা ও ব্যবসায়ী হওয়ার কারণে তিনি পদ পেয়েছেন সেই কারণটির।

এখন আবার এই বিতর্কিত কমিটিকে ভেঙে নতুন কমিটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে পুরোনো নেতা কর্মীদের দৌড় ঝাপ। অনেকটা হটাৎ করেই দোহার উপজেলা যুবদলের কমিটি ঘোষণা হয়েছিল ২০১৪ সালের শেষের দিকে। দোহার উপজেলার তখনকার মৃতপ্রায় ছাত্রদলের সভাপতি পদ থেকে আবুল হাশেমকে রহস্যজনকভাবে  সরাসরি যুবদল সভাপতি করা হয়। যুবদলের অনেক সিনিয়র নেতার অভিযোগ, ছাত্রদলে যেমন আবুল হাশেম ব্যার্থ ছিলেন একই ধারাবাহিকতায় তিনি ব্যার্থ হন যুবদলের নেতৃত্ব দিতেও। যদিও যুবদলের সভাপতি হওয়ার পূর্বে তিনি গ্রহণ করেন নি যুবদলের সদস্য পদ পর্যন্ত।

এ ব্যাপারে নিউজ৩৯ কে আবুল হাশেম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম। অনেক আগেই কমিটির মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল ; কিন্তু জেলা বা কেন্দ্রেকে বার বার নতুন কমিটি গঠন করার কথা বলা হলেও তারা সে উদ্যোগ গ্রহণ না করায় অনেকে ছাত্রদল ছেড়ে চলে যান। তারা বিভিন্ন দিকে মনোনিবেশ করেণ জীবন জীবিকার তাগিদে। কিন্তু আমি দলের হাল ধরে একা এগিয়ে ছিলাম। সেক্ষেত্রে ছাত্রদল থাকাকালীন সংগঠনকে স্লো মনে হয়েছে কিন্তু নিস্ক্রিয় নয়।

তিনি আরও বলেন, আমি যুবদলের সভাপতি হওয়ার পূর্বে ছাত্রদল থেকে পদত্যাগ করি, যুবদলের সদস্যপদ গ্রহণ করি এবং পরে সংগঠনের ইচ্ছ্বায় সভাপতির পদও গ্রহণ করি।

তবে তার এই কথার সাথে ভিন্ন মত প্রোষণ করেন আবুল হাশেমের পূর্বের যুবদল সভাপতি উমায়ুন ইসলাম খালেক। তিনি নিউজ৩৯কে বলেন, বাংলাদেশে অনেক কিছুই সম্ভব যদি আপনি ক্ষমতায় থাকেন। আবুল হাশেম এক রহস্যজনক কারণে রহস্যজনকভাবে সকল সিনিয়রিটি ভেঙে ছাত্রদল থেকে যুবদলের সভাপতি হন। পরে হয়তো তিনি কাগজপত্র, সদস্যপদ তৈরি করে থাকতে পারেন।

অন্য খবর  দোহারে ২য় পর্যায়ে নতুন ঘর ও ভূমি পেল ৩৪ টি পরিবার

বর্তমানে যুবদলের সভাপতি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন হিটু মোল্লা বলেন, আমরা জানতাম কমিটি ঘোষণা হচ্ছে। দীর্ঘদিন আন্দোলন সংগ্রাম করে সমগ্র দোহার উপজেলাব্যাপী আমরা সবাই-ই যুবদলকে সক্রিয় করেছিলাম। কমিটি যেদিন ঘোষণা হবে আমরা সেদিনও জানতাম যে কে কে সভাপতি, সেক্রেটারি হচ্ছে। হটাৎ জানতে পারি বিএনপি’র শীর্ষ মহলের ফোনে কমিটি স্থগিত করা হয়েছে । পরে একদিন জানতে পারলাম আবুল হাশেমকে ছাত্রদল থেকে যুবদল সভাপতি করা হয়েছে। তাই ত্যাগী নেতারা সংগঠনের প্রতি হতাশ হয়ে নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েন; যাদেরকে আবুল হাশেম ডাকেন নি বা চেষ্টাও করেন নি।

এছাড়া দোহার উপজেলা ছাত্রদল সভাপতি থাকা অবস্থায় তিনি কিভাবে দোহার উপজেলা যুবদল সভাপতি হলেন এই ব্যাপারে আবুল হাশেম নিউজ৩৯কে বলেন, দোহার উপজেলা যুবদলের সভাপতি তাকে বানিয়েছে ঢাকা জেলা যুবদল। তাই এ প্রশ্নের উত্তর ঢাকা জেলা যুবদলের আহ্বায়ক ভিপি নাজিমই ভালো দিতে পারবেন। এছাড়া তিনি যুবদল সভাপতি হওয়ার আগে দোহার উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি থেকে পদত্যাগ করেন। ফলে যুবদলের নিয়মের মাধ্যমেই তিনি দোহার উপজেলা যুবদলের সভাপতি হয়েছেন। এর মাঝে অন্য কোন কারন নেই। আর দোহার উপজেলা ছাত্রদলের কমিটি না হওয়ার ব্যর্থতার দায়ভার ঢাকা জেলা ছাত্রদলকেই নিতে হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এ ব্যাপারে উমায়ুন ইসলাম বলেন, তিনিতো একই সাথে জেলা ছাত্রদলের সিনিয়র সহ-সভাপতি, দোহার উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ও যুবদলের সভাপতি ছিলেন।

যদিও অনেকে বলে বিএনপি’র শীর্ষস্থানীয় এক নেতাকে খুশী করার বিনিময়ে তিনি হস্তগত করেছেন দোহার উপজেলা যুবদলের পদ। অনেকের ভাষায় সেটা পাজেরো আবার অনেকের ভাষায় সেটা ত্রিশ লক্ষ টাকা । আর সেই কমিটিতেই দোহার উপজেলা যুবদল মূলত বানাঘাটা যুবদলে রূপ পায় একই গ্রাম থেকে দোহার উপজেলা যুবদলের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায়।

অন্য খবর  বেপারোয়া ড্রাইভং; পঙ্গুত্বের পথে দুই কিশোর

এ ব্যাপারে আবুল হাশেম নিউজ৩৯-কে বলেন, সেরকম হলেতো বর্তমান কমিটি ভেঙে দেয়ার কথা নয়। এসব গুজব ও ভিত্তিহীন। আর সংগঠনে সক্রিয় যারা তাদেরকেই তো পদে বসিয়েছে জেলা কমিটি, তাই তারাই ভালো বলতে পারবে শুধু বানাঘাটা থেক কেন কমিটি হলো অন্য কোথাও থেকে কেন নয়।

এ ব্যাপারে উমায়ুন ইসলাম বলেন, আমরাও শুনেছি সে কথা। আর ঘুষ যখন লেন-দেন হয় তার কি কোন প্রমাণ থাকে? অবৈধ জিনিস গোপনে ঘটে;  তবে তা থেকে কিছুটা রটে। আর যা রটে তার কিছুটা সত্য হয় বটে।

এ ব্যাপারে তৎকালীন যুবদল নেতা সাজ্জাদ হোসেন হিটু মোল্লা বলেন, আমাদের জানা মতে সমগ্র দোহারে জাতীয়তাবাদী ও এর বাইরের সবাই ই এরকম শুনেছে যে উপজেলা কমিটিতে বড় রকমের লেনদেন ঘটেছে। কিন্তু আসলে কারো কাছেইতো তার প্রমাণ নেই। রাজপথের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের নিয়ে দোহার উপজেলা যুবদলের কমিটি যখন করা হয় ঠিক তখন কোন এক অদৃশ্য কারনে ঐ কমিটির নাম ঘোষণা করা হয় নি। সেই কমিটি তখন জেলা সভাপতির সাক্ষর নিয়ে ঘোষনা করা বাকি। সেই সময় ঢাকা জেলা বিএনপির এক নেতার ফোন পেয়ে কমিটি ঘোষনা বন্ধ করা হয় এবং এর এক মাস পর এই সদ্য সাবেক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

ফলে দোহারের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের হাত থেকে কমিটি চলে যায় সেই অযোগ্য কমিটির হাতে। দোহার উপজেলা যুবদলের নামের পরিবর্তে যুবদল হয়ে পড়ে বানাঘাটা গ্রাম কমিটি। ফলে যা হয়েছে তা এখন দিনের মতোই পরিস্কার। ফলে আন্দোলন আর নেতৃত্বে কাউকেই পাওয়া যায় নি। যার ফলে ব্যর্থ হয়ে নেতৃত্ব থেকেই বাদ পরতে হয়েছে এই কমিটির অধিকাংশ নেতা কর্মীর।

আপনার মতামত দিন