মোঃ আল-আমিন,নিউজ৩৯: দোহারে ২০২০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৩ জন শিক্ষকের বৈশাখী ভাতা লোপাটের অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। আর এই অভিযোগের তীর দোহার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দিকে।
সরেজমিনে দীর্ঘদিনের পর্যবেক্ষণে জানা যায়, ২০২০ সালের ১২ই মার্চ সহকারী শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান ৫৩ জন। পহেলা বৈশাখ উৎসবের জন্য সরকারী কর্মকর্তা অনুসারে তাদের মূল বেতনের ২০ শতাংশ উৎসব ভাতা পাওয়ার কথা। কিন্ত নববর্ষ ভাতা পাওয়ার কথা থাকলেও, দীর্ঘ ১০মাস হতেও চললেও, তা এখনো পায়নি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নতুন সহকারি শিক্ষকরা। আদৌ সেই ভাতা তারা পাবেন কিনা তা তারা জানেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত কয়েকজন শিক্ষক নিউজ৩৯ কে জানান, সব উপজেলায় বৈশাখী ভাতা দেওয়া হয়েছে, আমাদের দোহারে পুরাতন শিক্ষকরা ভাতা পেলেও নতুনরা এখনো পাইনি। সম্ভবতঃ অফিসের কিছু অসাধু কর্মচারী এই অর্থ লোপাট করেছে বলে তারা আশংকা প্রকাশ করেছেন। চাকুরীতে নতুন বিধায় তারা কিছু বলতেও পারছেন না বলে, তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। তাই বৈশাখী ভাতা নিয়ে তারা কোন ঝামেলায় জড়াতে চান না।
এ বিষয়ে দোহার উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা জানান, করোনা সংক্রমণের কারণে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। আমরা বৈশাখী ভাতা পেয়েছি কিন্ত নতুনরা পেয়েছেন কি না তা সঠিকভাবে বলতে পারছিনা ।
দোহার উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সৈয়দা পারভিন নিউজ৩৯কে বলেন, বৈশাখী ভাতা সব দেওয়া হয়ে গেছে। আমার জানামতে কোনটাই বাকি নেই। করোনার কারনে প্রথমে বাজেট তুলে পুরাতনদের দেওয়া হয়। বাজেট ছিলো না বিধায় নতুনদের দিতে দেরি হয়, পরের বাজেটে উৎসব ভাতা, বৈশাখী ভাতা সব একসাথে দিয়েছি।
প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আরো জানায়, সার্ভিস বই ছাড়া বেতনই দেয়া নিষেধ । তবুও করোনাকালীন স্কুল বন্ধ থাকায় এবং ঈদ চলে আসায় সবার বেতন ভাতা দিয়েছি, বৈশাখীভাতা পরে দিয়েছি । অনেকেরই মাসের মাঝামাঝি ও শেষের দিকে চাকরিতে জয়েন হয়েছে। কিন্ত কার্যদিবস অনুসারে ভাতা দিয়েছি। তাই আমাদের পক্ষে শিক্ষকদের টাকা রাখার কারো সুযোগ নেই।
অথচ নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ৫৩ জন শিক্ষকের কেউ বৈশাখী ভাতা পাননি। তাদের প্রশ্ন, তাহলে এই উৎসব ভাত গেলো কোথায়?
এব্যাপারে দোহার উপজেলা প্রশাসনের হিসাবরক্ষক মোঃ জয়নাল আবেদীনের কাছে গেলে, তিনি এই প্রতিবেদকে হিসাব-অডিটর মোঃ আসাদুজ্জামান সবুজের কাছে পাঠান।
দোহার উপজেলার অডিটর মোঃআসাদুজ্জামান সবুজ নিউজ৩৯ কে বলেন শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করতে।
তিনি আরো বলেন, বিল আমাদের কাছে আসলে আমরা পাশ করি, কিন্তু বিল পাঠায় শিক্ষা অফিস থেকে। এখন বিষয়টি প্রক্রিয়ায় আছে, তারাই ভালো বলতে পারবে। তবে নতুন নিয়োগ প্রাপ্তদের বৈশাখী ভাতার জন্য বাজেট চেয়েছিলো, উপজেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে। কিন্ত তারা দেয়নি। তাই, পুরাতন শিক্ষকদের বৈশাখী উতসব ভাতা প্রদান করা হলেও, নতুনদের জন্য কোন বিল পাশ হয়নি। আর পরবর্তী বাজেটে সিনিয়র শিক্ষকদের অন্য ভাতা প্রদান করা হয়েছে, নতুন্দের দেয়া হয়নি।
দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএফএম ফিরোজ মাহমুদ নাইমের কাছে এবিষয়ে জানতে চাইলে নিউজ৩৯কে তিনি বলেন, তথ্যগত কারনে এ সমস্যা তৈরি হতে পারে। তবে, এ কাজ শিক্ষা অফিসের। তবুও, আমি বিষয়গুলো খোজখবর নিয়ে দেখবো। এ টাকার হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই।
ঢাকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার আলেয়া ফেরদৌসি শিখা ১০ জানুয়ারি রবিবার নিউজ৩৯ এর এই প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি আমি জানি না। কেউ অভিযোগও করেনি। আর টাকা লোপাটেরও কোন সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি খোজ খবর নিইয়ে প্রতিকার করবো।
এসব নতুন শিক্ষকদের এখন প্রশ্ন হলো, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তৃণমূলের জাতি গঠনের কারিগর এসব নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের জন্য যে বৈশাখীভাতা দিয়েছিলেন, আদৌ কি তারা পাবেন? নাকি পাবেন না। না পেলে, এই টাকা গেল কোথায়? চাকুরীর শুরুতেই কি এসব নতুন শিক্ষকেরা কি দূর্নীতির শিকার হবেন? নাকি তারা তাদের জন্য প্রদেয় ভাতা পাবেন। আর যারা জড়িত, তারা কি রয়েই যাবেন বিচারের বাহিরে?