ক্রাইম রিপোর্টার্স, news39.net: ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের চিঠির নির্দেশকে উপেক্ষা করে দোহার উপজেলায় পদ্মা নদীর তীরবর্তী বিলাশপুর ইউনিয়নে অবৈধ নৌঘাট স্থাপন করে প্রতিদিন হাতিয়ে নিয়েছে লাখ টাকা। একইসাথে সরকারও হারিয়েছে প্রায় কোটি টাকার বার্ষিক রাজস্ব। ঈদের পরে ঘাটটি সাময়িক বন্ধ থাকলেও, সুবিধাভোগী প্রভাবশালী মহল ঘাটটি পুনরায় চালুর ব্যাপারে সক্রিয় রয়েছে। এই ঘাট পুনরায় চালুর অপতৎপরতার অভিযোগের তীর বিলাশপুর ইউনিয়নের বিপরীতে ফরিদপুর চরভদ্রাসন উপজেলার শাহীন আনোয়ার উরফে বাবুল সিকদার ও তার ছেলে আরাফাত হোসেনের বিরুদ্ধে। তাদের এই কর্মকান্ডে স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীচক্র জড়িত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এই অনুমোদনহীন অবৈধ লঞ্চঘাট নিয়ে ফরিদপুরের চরভদ্রাসন এবং ঢাকা জেলার দোহারের মৈনট ঘাট আন্ত:জেলা ঘাট ইজারাদারদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
মৈনটঘাট টু চরভদ্রাসন আন্ত:জেলা লঞ্চ ও ফেরিঘাটে ইজারাদার আব্দুল আলী মৃদ্ধার দাবি, দোহার বিলাশপুর এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্রের সাথে চরভদ্রাসনের বাবুল সিকদার ও তার ছেলে আরাফাতের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। এই বছর করোনাকালীন লকডাউন সময়ে সরকারি বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে বিলাশপুর টু সদরপুরের আকোটচরে স্পিডবোটসহ বিভিন্ন নৌযানের মাধ্যমে লোকজন পারাপার শুরু করে। এই ঘাট নিয়ে সরকারের কোন অনুমতি নেই। বরং হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতিদিন লাখ টাকা। এরফলে পাঁচ কোটি আটাশ লাখ টাকায় নেয়া ইজারাকৃত মৈনট ঘাট টু চরভদ্রাসন আন্ত:জেলা লঞ্চ ও ফেরিঘাটের ইজারাদারসহ ঘাট সংশ্লিষ্ট সকলেই ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির কবলে পড়েছে। আর বিলাশপুরে ঘাটটি সরকারি অনুমোদন ও নিয়ন্ত্রণ না থাকায়, সেখান দিয়ে অবৈধ পণ্য ও মাদক চোরাকারবারিরা সহজেই যাতায়াত করছে ।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার( রাজস্ব) বরাবর একটি অভিযোগ করেছেন বলেও জানান আব্দুল আলী মৃধা।
বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা বিলাশপুরের অবৈধ ঘাটের বিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দোহার ও ফরিদপুরের চরভদ্রাসন, সদরপুরকে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
news39.net টিম সরেজমিনে গিয়ে দেখতে পায়, ফরিদপুর জেলার সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার সীমান্তবর্তী আব্দুল সিকদারে ডাঙ্গী এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম সদরপুরের আকটেরচর টু জোয়ার নারিশা এলাকা ঘাট ইজারা নেয়।
কিন্তু পিয়াজখালী টু দোহারের নারিশা জোয়ার মাদ্রাসাঘাটটি আরাফাতের নামে ইজারা হলেও, সে জোরপূর্বক আন্ত:জেলা ঘাটের এলাকা বিস্তৃত করে, বিলাশপুর ঘাটে যাত্রী পারাপার করছে।
এখানে আরাফাতের পক্ষে শাহীন ও আনোয়ার এসব অবৈধ কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকেন।
স্থানীয় বাসিন্দা আল আমিন বলেন, আমরা জানি যে মৈনটঘাট থেকে মানুষ স্পিডবোটে করে ফরিদপুর যায়। কিন্তু বিলাশপুর যে ঘাটটি নতুন তৈরী করেছে, এটা আগে ছিল না। এখন কি করে হলো, তাও জানি না।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা যায়, নুরুল ইসলাম পাটনির পক্ষে বাবুল সিকদার তাদের নিজ ইজারাকৃত এলাকার ঘাট স্থাপন না করে, স্থানীয় প্রভাবশালী লোজনদের মাধ্যমে, দোহারে বিলাসপুরে অবৈধ ঘাট স্থাপন করে লোকজন পারাপার করছেন।
এবিষয়ে দোহার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ.এফ.এম ফিরোজ মাহমুদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিলাসপুর ঘাটটি অবৈধ। আমরা কমিশনার অফিসের একটি লিখিত নির্দেশ পেয়ে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকবার পুলিশ পাঠিয়ে তাদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছি। এছাড়া সদরপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কথা বলেছি।
বিলাশপুরে অবৈধ নৌঘাট স্থাপন করে প্রতিদিন লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন, এমন অভিযোগের বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে, বাবুল সিকদার বলেন, আমি বিলাশপুর ঘাট ইজারা নিয়েছি। তাই, ঘাট দিয়ে লোকজন পারাপার করছি।
কিন্তু তার এই কথার সত্যতা মেলেনি। সরকারি কাগজপত্রে তাদের ইজারাকৃত এলাকা হচ্ছে, পিয়াজখালী-চরবলাশিয়া টু মাদরাসাঘাট, কৃষ্ণদেবপুর, বাঁশতলা, নারিশা জোয়ার আন্ত:জেলা ঘাট। কিন্ত তিনি এসব এলাকা ব্যবহার না করে, ফরিদপুরের চরভদ্রাসন আন্ত:জেলা ঘাট সংলগ্ন এলাকা ও দোহার উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তি বিলাসপুরে অবৈধ ঘাট বসিয়ে ছেলে আরাফাত হোসেনসহ তার বেতনকৃত কর্মচারীদের মাধ্যমে টোল আদায় করছেন প্রতিদিন।
এ বিষয়ে ফরিদপুর সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পূরবী গোলদার বলেন, আমি শুনেছি বিভাগীয় কমিশনারের অফিস থেকে তারা বিলাসপুর ঘাট ইজারা নিয়েছে।
বিলাশপুর ঘাটের ব্যাপারে প্রশাসনের কোন অনুমতি নেই, তাহলে কিভাবে তারা ইজারা নিলেন? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই বিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ বিষয়ে বিলাশপুর ইউপি চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন মোল্লা news39.net কে বলেন, বিলাশপুরে পদ্মা নদীর কোনো পারাপারের খেয়াঘাট নেই। কেউ এটা করলে তা সম্পূর্ণ অবৈধ।
মৈনট ঘাটের ইজারাদার ম্যানেজার কাশেম মেম্বারের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা কোটি টাকা নিয়ে ঘাট ইজারা নিয়েছি। কিছু প্রভাবশালী লোক আমাদের বিপরীতে অন্য একটা ঘাট বসিয়ে, ইতঃমধ্যে আমাদের প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ক্ষতি করেছে। আমরা আইন মেনে সরকারিভাবে ঘাট নিয়েছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমরা সব জায়গায় চিঠি দিয়েছি। এখন দুই উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগ ঘাটটি সাময়িকীভাবে বন্ধ রয়েছে। তবে এটি কতদিন বন্ধ থাকবে সেটা আমরা জানি না।
বিলাশপুর অবৈধ ঘাটে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায় ঘাটটি বর্তমানে বন্ধ রয়েছে।