ডিম ছাড়ার সুযোগ দিতে ৯ থেকে ৩১ অক্টোবর দেশে ইলিশ ধরা বন্ধ ছিল। শুধু ইলিশ শিকার নয়- ইলিশ আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, কেনাবেচা, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ ছিল এ ২২ দিন। ইলিশ ধরা বন্ধে এ সময় স্থানীয় জেলা-উপজেলা প্রশাসন, নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব, পুলিশ, নৌ পুলিশ এবং মৎস্য অধিদফতর সম্মিলিতভাবে মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করেছে। অভিযানে ইলিশ অধ্যুষিত প্রায় সব জেলাতেই শতাধিক জেলেকে কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া জেলেদের কাছ থেকে জব্দ করা অবৈধ কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ থাকার পরও প্রশাসনের নেওয়া নিরাপত্তা বলয় উপেক্ষা করে অনেক জায়গায় মৌসুমি ইলিশ শিকারীরা ছিল বেপরোয়া। নিষিদ্ধকালীন সময় ইলিশ ধরা বন্ধে তালিকাভুক্ত জেলেদের প্রত্যেককে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হলেও ইলিশ ধরা পুরোপুরি ঠেকানো যায়নি।

মুন্সীগঞ্জ: নিষিদ্ধকালীন ২২ দিনে ২১ টন ৮৯০ কেজি ইলিশ মাছ এবং ৯৫ লাখ ৩৫ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ৫৬০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান জানান, ইলিশ ধরার অপরাধে ৮৭১টি মামলায় ১১ লাখ ১৪ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

বাগেরহাট: জেলার ৯টি উপজেলায় ২০৭টি অভিযানে পরিচালনা করা হয়। এ সময় ১ লাখ ৬০ হাজার ৩ শ’ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে। ৩০টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও কাউকে কারাগারে পাঠানো হয়নি। জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৫ হাজার টাকা। জেলার ৫ হাজার ১ শ’ ৯৪ জন জেলের মাঝে ২০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম: ইলিশ ধরার অপরাধে এক লাখ এক হাজার টাকা জরিমানা করেছে চট্টগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মমিনুল হক বলেন, ইলিশ ধরা বন্ধে একশ’টির বেশি অভিযান এবং ১৫ টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। পাশাপাশি ৯২৮ কেজি মাছ জব্দ করে করা হয়েছে। অভিযানে সাড়ে ৩৪ লাখ টাকার জাল জব্দ করে সেগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হয়।

ইলিশ ধরার জাল পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে কুড়িগ্রাম: জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, ১শ’ ৩৫ টি অভিযান ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১৬টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এক লাখ ৬০ হাজার ৪৬০ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে।

জামালপুর: সরিষাবাড়ী ও দেওয়ানগঞ্জে দুইজনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে। দেওয়ানগঞ্জে ১১ জেলেকে ৫২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেলায় ৩১ হাজার ২ শত মিটার জাল এবং ১৭৪.৫ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়েছে।

দোহার (ঢাকা): ঢাকার দোহারে প্রায় দুই শতাধিক জেলেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একশ’ ২ জনের সাজা এবং ৯০ জনকে জরিমানা করা হয়। জেলেদের কাছ থেকে প্রায় ১৩ লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং সাড়ে ৩ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়েছে। এছাড়া ২ লাখ ৮৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

অন্য খবর  দোহারে বেগম আয়েশা স্কুল এন্ড কলেজে জাতীয় কৃমি নিয়ন্ত্রণ সপ্তাহ শুরু 

লক্ষ্মীপুর: মেঘনা নদীর লক্ষ্মীপুর অংশের ৬০ কিলোমিটার এলাকায় ৯০ জন জেলেকে জেল ও জরিমানা করা হয়েছে। ৩৩ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগের সাজা এবং ৫৭ জনকে মোট দুই লাখ এক চল্লিশ হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া প্রায় দেড় লাখ মিটার কারেন্ট জাল এবং ৯ শ’ ৩৫ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়।

মানিকগঞ্জ: জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. মুনিরুজ্জামান জানান, ইলিশ শিকারের দায়ে ৪৯৪ জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৫৭ জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ১৯২ জন জেলেকে মোট ৫ লাখ ২২ হাজার ৬ শত টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেলেদের কাছ থেকে সাড়ে ৩ টন মা ইলিশ জব্দ করা হয়। এছাড়া প্রায় ৫৩ লাখ ঘনমিটার কারেন্ট জাল জব্দ করা হয়েছে। এদিকে যমুনা নদীতে অভিযান পরিচালনার সময় মা ইলিশ শিকারিরা নৌ-পুলিশের ওপর হামলাও করেছে। অভিযানের শেষ দিন বুধবার (৩০ আগস্ট) সকালে শিবালয়ের আলোক দিয়া চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পাবনা: সুজানগর ও আমিনপুরে ইলিশ শিকারের অপরাধে দুই শতাধিক জেলের কারাদণ্ড ও জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। জব্দ করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ও জাল। আমিনপুরের ঢালার চর, কাজিরহাট, নটাকোলাসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮৯ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ২৮ জনের নামে মৎস্য আইনে সাতটি মামলা দায়ের, ২৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা এবং ৩৩ জনের কাছ থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে জব্দ করা হয় দুই লাখ ৫ মিটার জাল ও ৫ শ’ ৫০ কেজি ইলিশ জব্দ করা হয়। একইভাবে সুজানগর উপজেলার পদ্মা নদীর সাতবাড়িয়া, মালিফা, হাসেমপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ শ’ ৫০ জনকে আটক করা হয়। তাদের মধ্যে ১৪ জনের নামে মামলা, ১ শ’ ৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা, ৩০ জনের কাছ থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। অভিযানে ৬ লাখ ৫৫ হাজার মিটার জাল ও ৭ শ’ ৮৮ কেজি ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়।

পটুয়াখালী: জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ২৫৮ জন জেলের কাছ থেকে ৭ লাখ ২৯ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এছাড়া মোবাইল কোর্ট ও অভিযান পরিচালনা করে ৩ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ এবং ৩৯ লাখ ৮০ হাজার মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।

শরীয়তপুর: পদ্মা ও মেঘনা নদী থেকে ১৯ শ’ ২ জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় জানায়, অভিযানে ১৮ শ’ ৩৮ টি মামলা করা হয়েছে। ইলিশ ধরার অপরাধে ১৯ শ’ ২ জন জেলেকে আটক করা হয়। ১৫ শ’ ৪২ জন জেলেকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ সময় ৮২টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা ও ৪১ টি স্পিড বোট জব্দ করা হয়। ৭৭ লাখ ২০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে পুড়িয়ে ফেলা হয়।

অন্য খবর  নিষেধাজ্ঞা শেষ : পদ্মায় ইলিশের বন্যা

ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জ সদর, কাজীপুর, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলায় ২ শ’ ৭৭ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে বিনাশ্রম সাজা দেওয়া হয়েছে। ৮ থেকে ৯ জনকে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। প্রায় ২১ লাখ মিটার কারেন্ট জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।

টাঙ্গাইল: যমুনা নদীর তীরবর্তী টাঙ্গাইল সদর, কালিহাতী, নাগরপুর, ভূয়াপুর ও গোপালপুর উপজেলায় অভিযান চালিয়ে ৩৩ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৭১ হাজার দুইশ’ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এছাড়া ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ৪৯০ কেজি ইলিশ ও ৫ লাখ ২০৯ মিটার জাল জব্দ করা হয়।

নাটোর: নাটোরে চারজন জেলেকে জরিমানা ও দুইজনকে জেল দেওয়া হয়। ৪৫ কেজি ইলিশ ও প্রায় ২ লাখ মিটার জাল জব্দ করা হয়েছে।

ফরিদপুর: ফরিদপুর জেলায় প্রশাসনের অভিযানে ২২৪ জন জেলেকে এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া ৯ হাজার ১৪৫ মিটার কারেন্ট জাল ১ দশমিক ৩ মেট্রিক টন ইলিশ মাছ জব্দ করা হয়। ইলিশ ধরায় ২৩০টি মামলা ও ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। সদরপর উপজেলা মৎস কর্মকর্তা বাতী কুমার দাস জানান, মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে দণ্ডিত জেলেদের বেশিরভাগই মৌসুমি জেলে যারা শুধু নিষিদ্ধকালীন সময় আইন অমান্য করে ইলিশ ধরে থাকে। প্রকৃত জেলেরা যেহেতু এই অভিযানের সুফল পাচ্ছেন তাই তারা এই সময় মাছ ধরেন না।

খুলনা: ডুমুরিয়ায় ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় দুই জেলেকে সাজা দেওয়া হয়েছে। ডুমুরিয়া মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি বিধান বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, ইলিশ শিকার বন্ধের মধ্যে সরকারি সহায়তা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছে কার্ডধারী পাঁচ হাজার জেলে। ছোট নদীতে মাছ শিকার করার অপরাধে স্থানীয় এক জেলেকে তিনদিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বটিয়াঘাটার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মনিরুল মামুন জানান, অবৈধভাবে মাছ ধরার কারণে গত ২৭ অক্টোবর শৈলমারী নদী থেকে এক জেলেকে জরিমানা করা হয়। এ সময় তার কাছে থাকা ৫০০ মিটার জাল পুড়িয়ে ফেলা হয়।

ভোলা: জেলার সাতটি উপজেলায় ৬১২টি অভিযান চালিয়ে ৫৭২ জনকে এক বছর করে কারাদণ্ড দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। তাদের কাছ থেকে জরিমানা আদায় হয় ১১ লাখ ২৩ হাজার টাকা। জেলা মৎস কর্মকর্তা এসএম আজহারুল ইসলাম জানান, জেলায় তালিকাভুক্ত জেলের সংখ্যা এক লাখ দুই হাজার ২৬০ জন। নিষেধাজ্ঞার ২২ দিনে ৮৮ হাজার ১১১ জন জেলের জন্য ২০ কেজি করে চাল বরাদ্দ হয়েছে।

আপনার মতামত দিন