দেশে শনাক্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন: একক ব্যক্তি নয়, গোটা পরিবারই টার্গেট

110
দেশে শনাক্ত নতুন জঙ্গি সংগঠন: একক ব্যক্তি নয়, গোটা পরিবারই টার্গেট

একক ব্যক্তি বাদ দিয়ে এবার পুরো পরিবারকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করার টার্গেট নিয়ে মাঠে নেমেছে জঙ্গিরা। ইমাম মাহমুদের কাফেলা নামের নতুন একটি সংগঠনের অস্তিত্ব পাওয়া এবং মৌলভীবাজার থেকে সংগঠনের ১০ জন আটকের পর এমন আরও নানা তথ্য পাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। দেশের চলমান পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুনরূপে জঙ্গিবাদের উত্থানের আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, জঙ্গিদের শক্ত অবস্থানের কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু এটি পুরোপুরি বন্ধ হওয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
গত কয়েক সপ্তাহ থেকেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নিখোঁজ হচ্ছেন বিভিন্ন পরিবারের একাধিক সদস্য। এর মধ্যে মেহেরপুর শহরের শিশুবাগান পাড়ার অন্তত তিন পরিবারের নারীসহ ১৮ জন নিখোঁজ রয়েছেন কয়েকদিন ধরে। কেউ বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আবার কারোর দাবি, পুরো পরিবারসহ আত্মগোপনে চলে গেছেন তারা। আবার পরিবারগুলোর শিশুসহ কয়েক সদস্য ফিরেও এসেছেন নিখোঁজের দুইদিন পর।
অভিযান পরিচালনাকারী সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, মেহেরপুর থেকে নিখোঁজ ব্যক্তিদের কয়েকজনকে পাওয়া গেছে মৌলভীবাজারে ইমাম মাহমুদের কাফেলার আস্তানায়। উত্তর এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ছয়টি জেলার বেশ কয়েকটি পরিবারের সবাই উগ্রপন্থী গ্রুপটির সদস্য বলে প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।
এ নিয়ে ডিএমপির সিটিটিসি অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলেন, গোটা পরিবারসহ এই গ্রুপের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। পুরো একটি পরিবার ‘হিজরত’ করছে, যাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে কোনো তথ্য না আসে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, হলি আর্টিজানের পর জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বিত যে অভিযান ছিল, তা কমে এসেছে ধীরে ধীরে। আর সে সুযোগটিই উগ্রবাদীরা নিচ্ছে বলে মনে করেন অপারেশন থান্ডারবোল্টে নেতৃত্ব দেয়া সাবেক সামরিক কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) নাইম আশফাক চৌধুরী। তিনি বলেন, হলি আর্টিজানের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর যে সমন্বয় শক্ত অবস্থান ছিল, তা কিছুটা শিথিল হয়ে এসেছে। তবে যখনই এই অবস্থান শিথিল হয়ে আসবে, তখনই বিভিন্ন উগ্রপন্থীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে।
দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর উগ্রবাদের তৎপরতা নির্ভর করে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তবে এর সঙ্গে কিছুটা দ্বিমত আছে কাউন্টার টেররিজমের কর্মকর্তাদের। নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব) নাইম আশফাক চৌধুরীর মতে, বিভিন্ন পক্ষ নিজেদের স্বার্থের জন্য এই উগ্রপন্থীদের ব্যবহার করে। এর ফলে দেশে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয় তার সেখান থেকে তারা ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করে।
অন্যদিকে ডিএমপি অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান বলছেন, এটি একটি জটিল বিষয় আর এর মাত্রা ও দৃষ্টিকোণ প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হচ্ছে। এক সময় মনে করা হতো, দারিদ্র্যতা ও জঙ্গিবাদ একসাথে হাতধরাধরি করে চলে। কিন্তু এই ধারণাও এক সময় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এই জঙ্গিবাদের একক কোনো কারণ এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি এবং বাংলাদেশে এমন চরম উগ্রপন্থা তৈরি হওয়ার মতো পরিস্থিতিও নেই।
নতুন পাওয়া জঙ্গি সংগঠনটির সদস্যরা পুরনো কোনো সংগঠনের সদস্য নয় বলে নিশ্চিত করেছেন কর্মকর্তারা। এ নিয়ে আরও শক্ত অবস্থানে যাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনটিই আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

আপনার মতামত দিন