৩৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর কেটে গেছে ২৭ মাস। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে হয়ে গেছে মৌখিক পরীক্ষাও। মাঝে কয়েক দফা চূড়ান্ত ফল প্রকাশ নিয়ে গুঞ্জন চাউর হলেও বেড়েই চলেছে প্রত্যার্শীদের অপেক্ষার প্রহর। ফলে দীর্ঘসূত্রিতায় বাড়ছে অনিশ্চয়তা-উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। অনেকের শঙ্কা, আবার আগের মতো নিয়োগ প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রিতায় ফিরে যাচ্ছে সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি)।
তবে পিএসসি বলছে, নার্স নিয়োগসহ বেশ কয়েকটি বিসিএস নিয়ে কাজের চাপের কারণে ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশে দেরি হচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তি দেওয়া থেকে শুরু করে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত ১১টি বিসিএসের পরিসংখ্যান গবেষণা করে দেখেছে সারাবাংলা। তাতে দেখা যায়— ২৭তম বিসিএসে গেজেট প্রকাশ করতে সময় লেগেছে ৩৬ মাস। এরপর ৩২তম বিসিএস পর্যন্ত কমতে থাকে গেজেট প্রকাশের সময়। ২৮তম বিসিএসে ৩১ মাস, ২৯তম বিসিএসে ৩০ মাস, ৩০তম বিসিএসে ২৬ মাস, ৩১তম বিসিএসে ২৩ মাস এবং ৩২তম বিসিএসে মাত্র ১৪ মাসে গেজেট প্রকাশ হয়। তবে এরপরই আবার বদলে যেতে থাকে চিত্র। ৩৩তম বিসিএসে এসে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ২৯ মাস পর প্রকাশিত হয় গেজেট। আর ৩৪তম বিসিএসে এসে আগেরবারের চেয়ে সময় বেশি লাগে আরো ১১ মাস বেশি— সব মিলিয়ে পাক্কা ৪০ মাস! এরপর ৩৫তম বিসিএসেও নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর গেজেট হতে সময় লাগে ৩১ মাস।
সর্বশেষ ৩৬তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতে পিএসসি সময় নিয়েছে ২১ মাস। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ফলাফল প্রকাশ করার পর কেটে গেছে আরও ১৪ মাস। গেজেট প্রকাশ হয়নি এখনও। ৩৭তম বিসিএসেও একই পথে হাঁটছে ‘নবজাগরণের’ ডাক দেওয়া ড. মোহাম্মদ সাদিকের পিএসসি। গেজেট দূরের কথা, ২৭ মাসে চূড়ান্ত ফলই এখনো প্রকাশ হয়নি।
অথচ গেল বছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিসিএস কার্যক্রম শেষ করতে এক বছরের রোডম্যাপের আশ্বাস দিয়েছিল পিএসসি। কিন্তু কাজে তার কোনো প্রতিফলন নেই, বরং যেন উল্টো পথে হাঁটছে। ফলে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে প্রত্যাশীদের কপালে। অনিশ্চয়তায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা জানিয়েছেন অনেকেই।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ফারুক হোসেন অংশ নিয়েছেন ৩৬তম বিসিএসে। তিনি জানালেন তার উদ্বেগের কথা, ‘এপ্রিলের মধ্যে ফল দেওয়ার কথা ছিল। এত দেরি হওয়ায় অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এক বছরের মধ্যে প্রক্রিয়া শেষ করার আশ্বাস দিয়েছিল পিএসসি। কিন্তু রেজাল্টই হচ্ছে না। নির্দিষ্ট কোনো ডেটও আসছে না।’
পরীক্ষার্থীদের মধ্যে শঙ্কা— দীর্ঘসূত্রিতার অতীতেই কি ফিরে যাচ্ছে পিএসসি? চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক সারাবাংলাকে জানান, ‘ফল আমরা রেডি করছি। আমরা দিয়ে দিবো (ফল) দ্রুত।’
আগের বিসিএসগুলোতেও প্রায় একই সময় লেগেছে বলে জানান পিএসসি চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘তাছাড়া অনেকগুলো বিসিএস নিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করছি, তাই একটু সময় লাগছে। আমরা ৩৮তম বিসিএসের জন্য কাজ করছি, ৩৯তম বিসিএসের জন্য কাজ করছি। তাছাড়া চার হাজার নার্স নিয়োগের জন্য প্রতিদিন পরীক্ষা নিতে হচ্ছে। মূলত কাজের অনেক চাপে আমরা রয়েছি।’
৩৫ মাসেও ৩৬তম বিসিএসের গেজেট হয়নি। ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল আসতেও লেগে যাচ্ছে ২৭ মাস। মাঝে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। চলমান এই পরিস্থিতিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম সূর্য উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, ‘দুই বছর তিন মাস হয়ে গেছে। এত দেরি তো আগে হয়নি। কোটা সংস্কার বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি নিয়ে এই বিসিএসের দীর্ঘসূত্রিতা হচ্ছে কি না— সে বিষয়েও পরিষ্কার নির্দেশনা জানা দরকার। এতদিন বসে থাকা হতাশাজনক। প্রজ্ঞাপন জারি করার পর কোটা কার্যকর হবে কি না এ বিসিএসে— সেটাও নির্দিষ্ট করে জানানো উচিত। এভাবে তরুণদের সময় নষ্ট হচ্ছে।’
কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের অপেক্ষার কোনো প্রভাব প্রজ্ঞাপনের প্রভাব বিসিএসের ফল প্রকাশে পড়ছে কিনা— জানতে চাইলে ড. সাদিক বলেন, ‘কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। ৩৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি যখন হয়েছিল, তখন যে কোটা ছিল তাই কার্যকর থাকবে। প্রজ্ঞাপন দেওয়ার পর থেকে যেসব বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে, সেগুলোতে নতুন প্রজ্ঞাপন কার্যকর হবে।’
পিএসসির ১১তম এই চেয়ারম্যান ৩৭তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের নির্দিষ্ট কোনো তারিখ জানাননি। তবে আসন্ন ঈদুল ফিতরের আগেই কিংবা এর পরপরই এই ফল প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি।