গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে নৌকাবাইচ অত্যন্ত জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী একটি খেলা। যুগযুগ ধরে ২৫ আগষ্ট নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুরে ইছামতি নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। প্রতিবছর বাংলা ভাদ্র মাসে ৮ তারিখে দাউদপুরের ইছামতি নদীতে নৌকা বাইচের আয়োজন করা হয়।
জানা গেছে, প্রায় সত্তর বছর আগে নবাবগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর গ্রামের একটি হিন্দু জমিদার পরিবার প্রথম ইছামতি নদীতে নৌকা বাইচের প্রচলন শুরু করেন। ঢাকা দক্ষিনে সবচেয়ে বড় নৌকা বাইচ এটি। দাউদপুরের নৌকা বাইচ দেখতে দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন আসে। দর্শকদের আনন্দ দিতে বাইচের নৌকার বর্নিল সাজে সাজানো হয় ছোট ছোট অনেক নৌকাকে। ওইসব নৌকায় এ অঞ্চলের সংস্কৃতলে নানা ভাবে তুলে ধরা হয়।
এ বছর দাউদপুরের নৌকা বাইচে অংশগ্রহন করতে মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুর জেলা থেকে বড় বড় বাইচের নৌকা আসে। সোনার তরী, মাসুদ রানা, খান বাড়ি, সোনার চাঁন, আল্লাহর দান এন্টার প্রাইজ, হাজারী তরী, রিয়াদ এন্টার প্রাইজ, পরণ তরী, মোল্লা, রাজ, ফকির বাড়ি, বাংলা গৌরব, গয়োন, তরী, জিন্দশাহ ভক্ত প্রভৃতি নামে বাহারি নৌকা আসে ইছামতি নদীতে। প্রত্যেকটি নৌকা দুইবার করে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করার সুযোগ পায়।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ঘাষি ও চৈরা নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন। এদের মধ্য ৬টি ঘাষি নৌকা এবং ৭টি চৈরা নৌকা বাইচে অংশগ্রহণ করে। ৬টি ঘাষি নৌকার মধ্য চ্যাম্পিয়ন হয় মাসুদ রানা-১, রার্নাস-আপ হয় খান বাড়ি, চ্যাম্পিয়ন নৌকাকে ফ্রিজ ও রার্নাস-আপ নৌকাকে ২১” কালার রঙ্গিন টেলিভিশন প্রদান করা হয়। বাকি ৪টি নৌকাকে ২১” কালার রঙ্গিন টেলিভিশন এবং ৭টি চৈরা নৌকার মধ্য চ্যাম্পিয়ন হয় শুকচাঁন তরী ও রিয়াদ এন্টার প্রাইজ ২টি নৌকাকে ফ্রিজ ও রার্নাস-আপ ৫টি নৌকাকে ২১” কালার রঙ্গিন টেলিভিশন প্রদান করা হয়।
দাউদপুর নৌকা বাইচ কমিটির সভাপতি কাওছার আহমেদ আক্কু জানান, দাউদপুরের নৌকা বাইচ ঐতিহ্যে পরিনত হয়েছে। নৌকা বাইচকে কেন্দ্র করে এ এলাকার মানুষের মধ্যে সম্পীতি ও এক্য গড়ে উঠেছে। তিনি জানান, বাইচ উপলক্ষে আতœীয় স্বজনরা বেড়াতে আসে প্রতি বছর। এটা একটি রীতিতে পরিনত হয়েছে। দাউদপুরের নৌকা বাইচের কথা অত্র এলাকার সবারই জানা। দাউদপুরের নৌকা বাইচ আমাদের ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্যকে আমরা যুগ যুগ ধরে লালন পালন করে আসছি। বাইচ উপলক্ষে ইছামতি পাড়ে বসে গ্রাম্য মেলা নারী, পুরুষ, শিশুসহ সব বয়সী লোকজনের যেন ঢল নামে দাউদপুরের নৌকা বাইচে। ইছামতিপাড়ে আনন্দ উৎসবে পরিনত হয়।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, মোজাম্মেল হোসেন চৌধুরী বদির মিয়া, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোজাম্মেল হক টিপু বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী, আলীমুর রহমান খান পিয়ারা চেয়ারম্যান শিকারীপাড়া ইউনিয়ন, আব্দুল্লাহ আল মামুন খান চেয়ারম্যান বারুয়াখালী ইউনিয়ন, পলাশ চৌধুরী চেয়ারম্যান নয়নশ্রী ইউনিয়ন, নবাবগঞ্জ উপজেলার ভাইচ চেয়ারম্যান হান্নান, শেখ আব্দুস সালাম, নবাবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক আঃ মান্নান, মোসফিকুর রহমান, সন্তোষ প্রমুখ।