স্টাফ রিপোর্টার, news39.net: সারাদেশে ক্রমবর্ধমান সিজারিয়ান ডেলিভারির মতো দোহার উপজেলাও ব্যতিক্রম ছিলোনা। কিন্ত দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিনামূল্যে নরমাল ডেলিভারির কারণে দিনদিন মানুষের ধারনা পাল্টে যাচ্ছে। যাদের ধারণা সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়া ডেলিভারি সম্ভব নয়, সেখানে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক ঝাঁক দক্ষ মিডওয়াইফ সেই ধারণাকে পাল্টে দিয়েছে। আর এই ডেলিভারি করতে কোন খরচ লাগে না। উল্টো চিকিৎসা সেবাসহ সকল ঐষুধপত্রের খরচ সরকারী খরচে দেইয়া হয়। দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই ভূমিকা সারাদেশে সকল স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স উৎসাহিত হবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, নভেম্বর মাসে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬০ টি নর্মাল ডেলিভারি ও ৬ টি সিজার করা হয়েছে। অক্টোবর মাসে প্রাইভেট ক্লিনিকে ২৯০ এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ০৫ টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অপরদিকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ৫৪টি এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫৮ টি নরমাল ডেলিভারি হয়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে ৪৫ টি সিজারিয়ান অপারেশন কমে যায় এবং ৪৫ টি নরমাল ডেলিভারি বৃদ্ধি পায়।
ইতঃমধ্যে দোহার উপজেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে, জাইকার অর্থায়নে ১১ লাখ টাকা ব্যয়ে দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারি রুম সংস্কার করা হয় । নরমাল ডেলিভারি উৎসাহিত করার জন্য ঢাকা মিডওয়াইফারি নার্সিং কলেজ থেকে ২৪ জন শেষ বর্ষের ছাত্রী ট্রেনিংয়ের জন্য এসেছে।
উল্ল্যেখ্য, গত সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ৩৪১টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অপরদিকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ২২টি এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৫ টি নরমাল ডেলিভারি হয়।
দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: মোঃ জসিম উদ্দিন নিউজ৩৯কে বলেন, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মাননীয় এমপি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন উপদেষ্টা জনাব সালমান ফজলুর রহমান, ঢাকা জেলার সম্মানিত সিভিল সার্জন ডা: আবু হোসেন মোঃ মঈনুল আহসান, উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব মোঃ আলমগীর হোসেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব এ এফ এম ফিরোজ মাহমুদ ডাক্তার-নার্স-মিডওয়াইফ সহ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সর্বস্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে এ ব্যাপারে উৎসাহ এবং নিরলস পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর তার প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও জানিয়েছে, অক্টোবর ২০২১-এ ঢাকা জেলায় নরমাল ডেলিভারিতে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছোট্ট এ উপজেলার জন্য একটা বড় ধরনের অর্জন। জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনি ও এনেসথেসিওলজি তাদের মেধা ও প্রজ্ঞা দিয়ে অনেক বড় ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দোহার উপজেলার জন্য চেষ্টা করছেন। এ অর্জনের জন্য ডা: মোঃ জসিম উদ্দিন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা দোহার, ঢাকার নেতৃত্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সর্বস্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীকে অভিনন্দন।
দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডেলিভারির দায়িত্ব থাকা ডাঃ দোলা আক্তার জানান, আমি ও আমার সাথে দুইজন সহকারী নূরী ও রাফাইয়া যখন আমরা তিনজন দোহার উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এ ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ১ তারিখে যোগদান করি। তখনও দোহারে সিজারের প্রচলন ছিল চোখে দেখার মত। আমরা অনেক চেষ্টা করি এবং জনগণকে বুঝাতে চেষ্টা করি; সিজার না করার জন্য। কিন্তু তারা শুরুতে তা শুনতে ছিলো নারাজ। ছিলো না। তবে ধীরে ধীরে এই সিজারের প্রচলনটা কমে আসতে থাকে। তখন আমরা একটু ভরসা পাই যে, আমরা নর্মাল ডেলিভারিতে প্রসব করাতে পারবো। আমার প্রথম পোস্টিং দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তাই, আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা এখন বর্তমানে নরমাল ডেলিভারিতে ১০০% সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে।
ডাঃ দোলা আক্তার আরও নিউজ৩৯কে জানান, আমরা অক্টোবর মাসের নর্মাল ডেলিভারির রিপোর্টের দিক দিয়ে ঢাকা জেলার মধ্যে শ্রেষ্ঠ উপজেলা হয়েছি। নভেম্বর মাসে আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬০ টি নর্মাল ডেলিভারি ও ৬ টি সিজার করা হয়েছে। অক্টোবর মাসে ৫৮টি নর্মাল ডেলিভারি হয়েছে ও ৫টি সিজার হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে ৩৪১টি সিজারিয়ান অপারেশন হয়। অপরদিকে প্রাইভেট ক্লিনিকে ২২টি এবং স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৪৫ টি নরমাল ডেলিভারি হয়।
তিনি আরও জানান, তবে আমরা এখনো দেখি অনেকে সিজার করাতে চায় কিন্তু আমরা তাদেরকে ভালকরে বুঝিয়ে নরমাল ডেলিভারি করাতে পারি। তবে আমরা এখন গর্ভবতী মায়েদের কাছে নর্মাল ও সিজার ডেলিভারির মধ্যে সুবিধা অসুবিধা দিক তুলে ধরায় এখন নর্মাল ডেলিভারি বেশী করাতে পারছি।