জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন হুসাইনকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বাদশাহর সৎ ভাই ও দেশটির সাবেক যুবরাজ হামজা বিন হুসাইনকে গৃহবন্দী করার দাবি করা হয়েছে। এছাড়া ষড়যন্ত্রে যুক্ত থাকায় রাজ পরিবারের সদস্য শরিফ হাসান বিন জায়েদ ও জর্ডানের সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী বাসেম ইবরাহীম আওয়াদাল্লাহসহ অন্তত ২০ জনকে শনিবার আটক করা হয়েছে।
শনিবার জর্ডানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা পেট্রায় শনিবার প্রকাশিত এক সংবাদে জানানো হয়, ‘নিরাপত্তাজনিত কারণে’ হাসান বিন জায়েদ ও বাসেম ইবরাহীম আওয়াদাল্লাহসহ অন্যদের আটক করা হয়। তবে ওই সংবাদে সাবেক যুবরাজকে গৃহবন্দী বা আটক করার দাবিকে অস্বীকার করা হয়।
নিরাপত্তা বাহিনীর বরাত দিয়ে পেট্রার সংবাদে জানানো হয়, কিছু সংবাদমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী শাহজাদা হামজা বিন হুসেইনকে গৃহবন্দী বা আটক কিছুই করা হয়নি। তবে জর্ডানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতায় আঘাত করতে পারে, এমন পদক্ষেপ ও কার্যক্রম বন্ধের জন্য শাহজাদা হামজাকে অনুরোধ করা হয়।
এদিকে শনিবার প্রকাশিত এক ভিডিও বার্তায় নিজেকে গৃহবন্দী বলে দাবি করেছেন জর্ডানের সাবেক যুবরাজ শাহজাদা হামজা বিন হুসেইন।
ব্রিটেনভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসির কাছে শাহজাদা হামজা বিন হুসেইনের আইনজীবীর হস্তান্তর করা এই ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, বাড়ির বাইরে যাওয়া, অন্য লোকের সাথে যোগাযোগ বা সাক্ষাত করায় তাকে নিষেধ করা হয়েছে।
কোনো প্রকার বিদেশী ষড়যন্ত্রে তার সংযোগ না থাকার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, এক বৈঠকে অংশ গ্রহণের জন্য তাকে শাস্তি দেয়া হচ্ছে যেখানে বাদশাহর সমালোচনা করা হয়েছে। যদিও তার বিরুদ্ধে সমালোচনায় যোগ দেয়ার অভিযোগ আনা হয়নি জানান শাহজাদা হামজা।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘(জর্দানবাসীর) কল্যাণকে এমন শাসনব্যবস্থার অধীনে দ্বিতীয় পর্যায়ে রাখা হয়েছে যেখানে তার ব্যক্তিগত স্বার্থ, অর্থনৈতিক স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়, এই ভূখণ্ডে বাস করা এক কোটি মানুষের জীবন, সম্মান ও ভবিষ্যতের চেয়ে তার দুর্নীতিকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।’
ভিডিও বার্তায় তিনি জানান, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান, পুলিশ প্রধান ও নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান তাকে সতর্ক করে যে, তিনি তার ঘর ছেড়ে বের হতে পারবেন না। তিনি শুধু তার পরিবারের সাথে সাক্ষাত করতে পারবেন, কোনো টুইট করতে পারবেন না এবং অন্য কারো সাথে কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারবেন না।
সাবেক যুবরাজ ভিডিও বার্তায় জানান, তিনি সশস্ত্র বাহিনী প্রধানকে বলেছেন, ‘শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য দায়ী ব্যক্তি আমি নই, তার জন্য (দায়ী নই) যে গত ১৫-২০ বছরে যে দুর্নীতি ও অচলাবস্থা আমাদের শাসন কাঠামোকে গ্রাস করছে এবং বছরে-বছরে যা শোচনীয় হচ্ছে। তাদের প্রতিষ্ঠানের ওপর মানুষের আস্থাহীনতার জন্যও আমি দায়ী নই। তারাই দায়ী।’
এদিকে বাদশাহ আবদুল্লাহকে ক্ষমতাচ্যুত করার ষড়যন্ত্রের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। জর্ডানের সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মেজর জেনারেল ইউসুফ হুনেইতি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্ত শেষ হেই আমরা ফলাফল ঘোষণা করবো। আইন অনুসারেই সব প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। সকলেই আইনের অধীন। জর্ডানের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা সবার আগে গুরুত্ব দেয়া হবে।’
জর্ডানের সাবেক বাদশাহ হুসেইন বিন তালাল ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ক্যান্সারে দীর্ঘদিন রোগভোগের পর ইন্তেকাল করলে বর্তমান বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন হুসেইন সিংহাসনে বসেন। এই সময় তিনি তার সৎভাই হামজা বিন হুসেইনকে যুবরাজ হিসেবে নিয়োগ দেন। পরে ২০০৪ সালে এই মর্যাদা শাহজাদা হামজার কাছ থেকে কেড়ে নেয়া হয়। ওই সময় বাদশাহ আবদুল্লাহ বিবৃতিতে জানান, তিনি শাহজাদা হামজাকে দায়িত্ব মুক্তি দিচ্ছেন যাতে তিনি (শাহজাদা হামজা) কাজের স্বাধীনতা পান এবং বাদশাহর দেয়া যেকোনো মিশন বা দায়িত্ব স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে তিনি পালন করতে পারেন।
বর্তমানে জর্ডানের যুবরাজ হিসেবে বাদশাহ আবদুল্লাহর বড়ছেলে, ২৬ বছর বয়সী তরুণ শাহজাদা হুসেইন বিন আবদুল্লাহ দায়িত্ব পালন করছেন।
এদিকে জর্ডানের উদ্ভুত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ইয়েমেনের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার, ফিলিস্তিন, ইরাক, লেবানন, মিসর এবং উপসাগরীয় সহযোগিতা কাউন্সিল (জিসিসি), আরব লীগ দেশটির পাশে থাকার কথা জানিয়েছে।