ঘুরে আসলাম কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদ

474
ঘুরে আসলাম কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদ

আমি যখনই কিশোরগঞ্জ শহরে কোন কাজে আসি তখনই প্রথম মনে হয় শহীদি মসজিদের কথা। যতবার এখানে এসেছি এই মসজিদে নামাজ আদায় করার চেষ্টা করেছি। আজ আপনাদের এই ঐতিহাসিক মসজিদ সম্পর্কে অবহিত করতে চেষ্টা করছি।

শহীদী মসজিদ (আরবি: شهيدي مسجد‎‎) কিশোরগঞ্জ জেলার এক ঐতিহাসিক আধুনিক স্থাপত্য। দেশ বিখ্যাত পাগলা মসজিদের পর জেলাটিতে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় মসজিদ হলো শহীদী মসজিদ। ঐতিহাসিক মসজিদটি জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। তাছাড়া দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দান – ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান এই মসজিদের কাছেই অবস্থিত। তিন তলা ভবন বিশিষ্ট মসজিদটির উপরে রয়েছে ৫ তলা সমান সুউচ্চ বিশাল এক মিনার। পাগলা মসজিদ এর পর সবচেয়ে বেশি মুসল্লি হয় এই মসজিদে। প্রতি সপ্তাহে জুমার দিন শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লোকজন জুমার নামাজ আদায় করতে ছুটে আসে। শোলাকিয়া ঈদগাহর‌‌‌‌‌‌‌ মত অনেক সময় মুসল্লিদের রাস্তার পাশে নামাজ পড়তে দেখা যায়।

কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত আধুনিক স্থাপত্যের এক ঐতিহাসিক নিদনিদর্শন ‘শহীদী মসজিদ’। এ মসজিদটি এ অঞ্চলের ইতিহাসের এক বিরল নিদর্শন। মসজিদটির নাম ‘শহীদী মসজিদ’ এ নামকরণ নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহলের অন্ত নেই। মূল শহরের প্রাণকেন্দ্রে মসজিদটির অবস্থান। শহীদী মসজিদের ইতিহাস খুব পুরনো না হলেও এটি অত্যন্ত আকর্ষণীয়।

অন্য খবর  মহাকবি কায়কোবাদের ১৫৮তম জন্মবার্ষিকী আজ

ঘুরে আসলাম কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদ

মসজিদটিকে আধুনিকরূপে নির্মাণের ক্ষেত্রে যিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন তিনি হলেন হযরত মাওলানা আতাহার আলী (রহঃ)। মাওলানা আতাহার আলী পুরান থানার এ মসজিদে আসেন ১৯৩৮ সালে। মসজিদের নির্মাণ সমাপ্তির পর তিনি ১৩৬৪ বাংলা সনের ৮ই কার্তিক মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে এক অভূতপূর্ব বিশাল সুউচ্চ পাঁচতলা মিনারের ভিত্তি স্থাপন করেন। এরপরই মসজিদটি ঐতিহাসিক মসজিদে রূপান্তরিত হয় এবং নামকরণ করা হয় ‘শহীদী মসজিদ’ নামে।

শহীদী মসজিদের প্রতিষ্ঠার পেছনে একটি রক্তস্নাত ঘটনা এতদ্‌ঞ্চলের মুসলিম সমপ্রদায়কে এখনো আলোড়িত এবং উদ্বেলিত করে তুলে। খুব একটা বেশি দিন আগের কথা নয়।

১৯৪০ সালের ঘটনা। প্রখ্যাত আলেম হযরত মাওলানা আতহার আলীর হাতে সবে মসজিদটির সংস্কার শুরু হয়েছে। প্রথানুযায়ী হিন্দু সমপ্রদায় প্রতিবছরের মতো সে বছরও এ মসজিদের সামনের সদর রাস্তা দিয়ে দূর্গাপূজা শেষে তাদের বিগ্রহ মিছিল বাজনা বাজিয়ে নিতে চায়। মুসলিম সম্প্রদায় এতে বাদ সাধে। তাদের দাবি, অন্তত এ পথে বিগ্রহ নেয়া হলেও মসজিদের সামনে এসে বাদ্য-বাজনা বাজানো চলবে না। কিন্ত উভয়ই নিজস্ব অবস্থানে অটল থাকে। কোন ছাড় দিতে নারাজ। নির্দিষ্ট সময় যতোই এগিয়ে আসতে থাকলো ততোই উত্তেজনা বৃদ্ধি পেতে থাকে। বৃটিশ সরকার এলাকায় গুর্খা সৈন্য মোতায়েন করে। রাত ৮টায় চরম মুহুর্ত ঘনিয়ে আসে এবং সৈন্যদের গুলিতে লুটিয়ে পড়েন ৪ জন মসজিদের মুসল্লি এ বিয়োগান্ত ঘটনার খবর সারাদেশে মুহুর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন মুসলিম ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ইসলামের জন্য নিহত হলে তাদের বলা হয় শহীদ।

অন্য খবর  এনথনি মাসকারেনহাসের যে প্রতিবেদনে মুক্তিযুদ্ধে পাল্টে যায় ইতিহাস

সেই থেকে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পুরানথানার এ মসজিদটি শহীদী মসজিদ নামে প্রতিষ্ঠা পায়। এই ঘটনায় যারা শহীদ হন তারা হলেন- আছির উদ্দিন, মানিক মিয়া, কালার বাপ ও নেহাল মিয়া। শহীদী মসজিদটি ক্রমশই প্রসারতা, খ্যাতি ও মর্যাদা লাভ করছে।

ঘুরে আসলাম কিশোরগঞ্জের শহীদি মসজিদ

মসজিদটি বাহির থেকে দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি এর ভিতরটা আরো মনোমুগ্ধকর। চমৎকার সাজানো গুছানো এই শহীদি মসজিদ। প্রতিটি পিলারে সাজানো আছে পাঠাকদের জন্য কুরআন হাদিসের বই। মসজিদের বাইরের অংশটি সব সময় সকরের জন্য উন্মুক্ত থাকে। অনেকে সেখানে নামাজ পরে আড্ডায় বসে পরেন। অনেকে বিশ্রাম নেয়। যদি কখনো কিশোরগঞ্জ আসতে হয় অবশ্যই এই মসজিদ আপনাকে কাছে ডাকবে। স্মরণ থাকবে আজীবন।

লেখকঃ মুস্তাক আহমেদ

শিকারিপাড়া, নবাবগঞ্জ

আপনার মতামত দিন