নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান পদ-প্রার্থী খন্দকার আবু আশফাকের সাক্ষাৎকার

1130

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী  কমিটির অন্যতম সদস্য, নবাবগঞ্জের বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান খন্দকার আবু আশফাক ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আবারও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। ২০০৯ সালে উপজেলা নির্বাচনে নিকটতম প্রর্থীর চেয়ে ২৫ হাজার বেশি ভোট পান তিনি। নবাবগঞ্জে যে সময় আওয়ামীলীগের জোয়ার সে সময় একাই ৬৫ হাজার ভোট পেয়ে আলোচনায় আসেন তিনি।
নিউজ৩৯-এর সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেছেন তার পারিবারিক, রাজনৈতিকসহ অনেক না বলা কথা। তার এই এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নিউজ৩৯-এর স্টাফ রির্পোটার আসিফ শেখ। নিউজ৩৯ এর পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হল:

নিউজ৩৯: কখন, কোন স্কুলে পড়ালেখা শুরু করেন?
আবু আশফাক: আমি কলাকোপা কোকিলপ্যারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলাম। তারপর ১৯৮০ সালে নবাবগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি, ১৯৮২ সালে তিতুমীর সরকারী কলেজ থেকে এইচএসসি, ১৯৮৩ সালে ঢাবিতে পরিসংখ্যানে অনার্স ভর্তি হই ১৯৮৯ সালে বিএসসি অনার্স , ১৯৯০ সালে এম.এস.সি পাশ করি। শহীদ জিয়ার আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ১৯৮১ সালে ছাত্র দলের সাথে সম্পৃক্ত হন। ১৯৮৬  সালে ছাত্র দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এবং ১৯৯০ সালে ডাকসু নির্বাচনে ফজলুল হক হল থেকে ভিপি নির্বাচিত হই।

নিউজ৩৯: আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে কিছু বলবেন কি?
আবু আশফাক: আমি ১৯৯৭ সালে তৎকালিন বগুড়া জেলা বর্তমান জয়পুরহাট জেলায় বিবাহ করি। আমার স্ত্রী আইন বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেছে। আমার দুই মেয়ে ও এক ছেলে। সবকিছু নিয়ে আমরা একটি সুখী পরিবার।

নিউজ৩৯: আপনার কর্মজীবন সর্ম্পকে বিছু বলুন?
আশফাক: আমার কর্ম জীবন ব্যবসা দিয়ে শুরু করি। আমার বিভিন্ন রকমের ব্যবসা রয়েছে। কর্ম জীবনে আমি একজন সফল ব্যবসায়ী।

নিউজ৩৯: কেন নির্বাচন করবেন?
আশফাক: নবাবগঞ্জের উন্নয়ন ও জনগনের সেবা করার জন্য সব সময় যেন জনগনের সুখে-দুঃখে পাশে থাকতে পারি মূলত এর জন্যই আমি নির্বাচনে আসছি।

নিউজ৩৯: বিগত ৫ বছরে নবাবগঞ্জ উপজেলায় কি কি উন্নয়ন করেছেন?
আশফাক: বিগত ৫ বছরে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে নবাবগঞ্জে তেমন কোন উন্নয়ন করতে পারি নি। কারন একটি উপজেলায় উন্নয়ন করার জন্য যে পরিমান ফান্ড থাকা উচিত তার অনেক কিছুই আমরা পাই নি আর নবাবগঞ্জ একটি অবহেলিত এলাকা এ এলাকার উন্নয়ন করতে প্রচুর ফান্ডের প্রয়োজন হয় সে তুলনায় আমরা কিছুই পাই নি। আমি যতটুকু ফান্ড পেয়েছি তার পুরোটাই ছোট ছোট রাস্তা-ঘাট কালভার্ট, বাজার নির্মান করেছি।  ১৪ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আর্সেনিক মুক্ত টিউবওয়েল স্থাপন করেছি। গত ৫ বছরে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে সম্মানী ভাতা এবং গাড়ির তেল বাবদ যে টাকা বরাদ্দ পেয়েছি তার সম্পূর্ণই মসজিদ, মাদ্রাসা, মন্দির ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানে ব্যায় করেছি। কাজ করেছি।

নিউজ৩৯: কাকে শক্ত প্রতিপক্ষ বলে মনে করেন?
আশফাক: আমি মনে করি আমার কোন প্রতিপক্ষ নেই আমি আমার মত কাজ করে যাচ্ছি জনগন বিচার করবে।

অন্য খবর  বঙ্গমাতার জন্মবার্ষির্কীতে বানভাসীদের মাঝে পনিরুজ্জামান তরুন

নিউজ৩৯: আবার নির্বাচিত হলে নবাবগঞ্জের উন্নয়নের জন্য কি কি কাজ করবেন?
আশফাক: রাতারাতি নবাবগঞ্জ কে পারির্বতন করে দিবো যদি বলি তা মিথ্যা বলা হবে। আমাদের নবাবগঞ্জের মানুষ খুবই শান্তি প্রিয়। এরা কারো কাছে ২ টাকার জন্য বসে থাকে না। নবাবগঞ্জের মানুষ চায় সন্ত্রাস, মাদক মুক্ত এলাকা ও রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন। এ উপজেলার জনগনের দীর্ঘ দিনের স্বপ্ন  গ্যাস সংযোগ স্থাপন করা যা আজ পর্যন্তা পাওয়া সম্ভব হয় নি। ঢাকা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করেও কোন সরকারই গ্যাস আনতে পারেনি। এ উপজেলায় অনেক বড় বড় মন্ত্রী-এমপি ছিলেন কিন্তু তারা কখনই গ্যাস সংযোগ স্থাপনের আগ্রহ করেননি। আল্লাহ যদি আমাকে সুযোগ দেয় তা হলে নবাবগঞ্জে গ্যাস সংযোগ স্থাপন করার জন্য আমি চেষ্টা করবো।

নিউজ৩৯: জনগন কেন আপনাকে ভোট দিবে বলে মনে করেন?
আশফাক: জনগন চায় নিরাপত্তা বিগত ৫ বছরে আমি নবাপবগঞ্জে মাদক মুক্ত, সন্ত্রাস নির্মুল এবং দুর্নীতি মুক্ত রাখার চেষ্টা করেছি এবং জনগনের দ্বারে দ্বারে পৌঁছাবার চেষ্টা করেছি। কিছুটা হলেও সক্ষম হয়েছি এ কারনে জনগন আমাকে পছন্দ করে এবং আমাকে ভোট দিয়ে পুনরায় নির্বাচিত করবে।

নিউজ৩৯: কেন্দ্রীয় সরকার আওয়ামীলীগ, স্থানীয় এমপি জাতীয় পার্টি, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে কতটা সহযোগীতা পাবেন বলে মনে করেন?

আশফাক: এখানে আমি সরকারের একটা ব্যার্থতা তুলে ধরবো। কারন স্থানীয় প্রতিনিধিকে সরকার যে ভাবে সাজাবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল বা নিয়ম নীতি ছিল সেটা সরকার রাখেনি। কেন্দ্রীয় সরকার আওয়ামীলীগ, স্থানীয় এমপি জাতীয় পার্টি, আমি যদি বিএনপি হয়ে আসি তাহলে মনে হয় এর কোন প্রভাব আমার উপর পড়বে না কারন কেন্দ্রীয় সরকার আওয়ামীলীগ ও স্থানীয় এমপি আওয়ামীলীগ হতেন তা হলে হয় তো আমার ওপর একটু প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করতেন সুতরাং আমি নির্বাচিত হলে এদের রোষানলে পড়বো এটা আমি মনে করিনা।

নিউজ৩৯: নিউজ৩৯’র মাধ্যমে আপনার নির্বাচনী এলাকাবাসীর উদ্দেশে কিছু বলতে চান?
আশফাক: নিউজ৩৯’র মাধ্যমে আমি আমার নির্বাচনি এলাকার জনগন উদ্দ্যেশে বলতে চাই বিগত ৫ বছরে পূর্বে আপনাদের কাছে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলাম তার অনেক কিছুই আমি পূরর্ণ করতে পারেনি অনেক কিছু পূরর্ণ করতে পেরেছি যে গুলো পূরর্ণ করতে পারেনি এ জন্য আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখিত কারন এটা আমার কাজে কোন অবহেলা ছিল না। এটা সরকারের ফান্ডডের অভাবে আমি করতে পারে নি। আশা করি জনগন যদি আমাকে পুনোরায় উপজেলা চেয়ারম্যান হিসাবে বেছে নেয় তা হলে অসমাপ্ত কাজগুলো সমাপ্ত করতে পাবো ইনশাল্লাহ।

নিউজ৩৯: সত্যিকারের জননেতা হওয়ার জন্য কি করা উচিত?
আশফাক: একজন জনপ্রতিনিধির সত্যিকারের জননেতা হওয়ার জন্য সততা, একনিষ্ঠা, আন্তরিকতা থাকা প্রযোজন এবং মানুষের সুখে, দুখে পাশে থাকার মাধ্যমেই সত্যিকারের জননেতা হওয়া যায়।

অন্য খবর  নবাবগঞ্জ-ঢাকার রাস্তায় রাজত্ব দুই পরিবহনের

নিউজ৩৯: বিগত ৫ বছরে নবাবগঞ্জে মাদকমুক্ত করার ক্ষেত্রে কি কি ভূমিকা পালন করেছেন?
আশফাক: বিভিন্ন উপজেলার মত এক সময় নবাবগঞ্জ উপজেলায়  মাদক ও সন্ত্রাসে ভরে গিয়ে ছিল আমরা প্রতিটি পরিষদ মিটিং এ, আইনশৃঙ্খলা মিটিং এ এগুলো নিয়ে আলোচনা করতাম। উপজেলা নির্বাহি অফিসার, থানার নির্বাহি অফিসার কে আমরা অনুরোধ করতাম আপনা মাঠে থেকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে যে কোন মুল্যে এগুলো নির্মূল করবেন। সে অনুযায়ী বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল কোর্ট বসিয়ে যারা মাদক ব্যবসা করে তাদের কে গ্রেফতার করা হয়েছে অনেককে ভ্রাম্যমান আদালতে জেল জরিমানা করা হয়েছে। তার ফলশ্রুতিতে  আমাদের এখানে নেশা ও মাদক অনেকটা কমে গিয়েছে।

নিউজ৩৯: রাজনৈতিক জীবনে আপনার সফলতা কতটুকু?
আশফাক: রাজনৈতিক জীবনে এশটি বিশাল অঙ্গ এর শেষ বলতে কিছু নেই। তবে আমি রাজনৈতিক জীবনে যতটুকু জনগনের ভালোবাসা পেয়েছি এজন্য আমি নিজেকে ধন্য বলে মনে করি।

নিউজ৩৯: কোন জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে পরাজিত হলে সে জনগনের সাথে আর সর্ম্পক রাখে না, সে ক্ষেত্রে আপনি জনগনের সাথে থাকবেন কি’না?
আশফাক: আমি এসেছি জনগনের সেবা করার জন্য এখানে নির্বাচন টা মূখ্য বিষয় নয়। আমি ছোটবেলা থেকেই সমাজ বিভিন্ন সেবা মুলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহন করে থাকতাম। আমার জীবনের বাকি অংশটুকু জনগনের পাশে থেকে সেবা করে যেতে চাই।

নিউজ৩৯: নবাবগঞ্জের অবহেলিত গ্রামগেুলোর জন্য কি কি উন্নয়ন করেছেন।
আশফাক: নবাবগঞ্জের রুপার চর একটি প্রত্যন্ত গ্রাম সেখানে একটি  মসজিদের কাজে সহযোগীতা করেছি। একটি বাজার করে দিয়েছি এবং ছোট খাট রাস্তা করেছি। উপজেলার আরেকটি প্রত্যন্ত  গ্রাম চক পারাগ্রাম সেখানে রাস্তা ঘাট ও একটি মসজিদের উন্নয়ন কাজ করেছি। বিগত এমপি মন্ত্রী কেউ অবহেলিত গ্রামে উন্নয়ন করেনি। যদি আল্লাহ আমাকে কোদিন সুযোগ দেয় তাহলে সর্বপ্রথম নবাবগঞ্জের অবহেলিত পশ্চিম এলাকাসহ প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোকে উন্নয়ন করার চেষ্টা করবো।

নিউজ৩৯: পুনোরায় বিজয়ী হওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু আশাবাদী।
আশফাক: জনগনের ভালাবাসায় আমি মোটামুটি শতভাগ আশাবাদি।

নিউজ৩৯: সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়কে কি প্রতিশ্রুতি দিতে চান?
আশফাক: নবাবগঞ্জে রাজনীতিতে হানাহানি নেই। সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়ের উপর অত্যাচার কিন্তু আওয়ামীলীগের আমলে এবং আওয়ামীলীগের লোকজন দ্বারাই হয়ে থাকে। আমরা যারা বিএনপি করি সংখ্যালঘু সম্প্রাদায়কে সেভ করার জন্য তাদের পাশে সবসময় ছায়ার মত থাকি। আমি তাদের পাশে বিগত দিনে ছিলাম এখনও আছি ভবিষ্যতেও  থাকব।

নিউজ৩৯: ইভটিজিং ও বাল্যবিবাহের ক্ষেত্র আপনার কি ধরনের প্রতশ্রুতি থাকবে?
আশফাক: ইভটিজিং এর ক্ষেএে আমরা বিভিন্ন স্কুলের-কলেজের সামনে সিভিলে পুলিশ টহল দিয়েছি এবং গ্রেফতার করে কতাদের সাজা দেওয়া হয়েছে। বাল্যবিবাহ একটি সামাজিত ব্যাধি এটি বন্ধ করার জন্য আমরা বিভিন্ন প্রদক্ষেপ প্রহন করেছি।

নিউজ৩৯: আপনার ব্যাস্ততার মাঝে নিউজ৩৯ কে সময় দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ?
আশফাক: নিউজ৩৯ কে সততা ও নিষ্ঠার সাথে মানব কল্যানে কাজ করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

আপনার মতামত দিন