নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার সদস্যদের তথ্যপ্রযুক্তি (আইটি) ও নিরাপত্তাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেয় আরেক জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলাম। এ বিষয়ে দুই জঙ্গি সংগঠনের মধ্যে গত বছর কিশোরগঞ্জে একটি চুক্তি হয়।
চুক্তিমতে, জামাতুল আনসার পার্বত্য অঞ্চলে আনসার আল ইসলাম সদস্যদের অস্ত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করবে। বিনিময়ে তারা জামাতুল আনসার সদস্যদের তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেবে। এর সঙ্গে জামাতুল আনসারকে ১৫ লাখ টাকাও দেয় আনসার আল ইসলাম।
জামাতুল আনসারের আমির আনিসুর রহমান ও তাঁর সহযোগী কাজী সরাজ উদ্দিন ও মাহফুজুর রহমানকে গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য জানিয়েছে । গতকাল সোমবার সকালে মুন্সিগঞ্জের লৌহজং এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানিয়েছে। পরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ বিষয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ওই তিন জঙ্গির কাছ থেকে দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা তৈরির সরঞ্জাম, উগ্রপন্থী বই ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
আনিসুর জামাতুল আনসার প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, মাদ্রাসা থেকে দাওরায়ে হাদিস পড়া শেষ করে আনিসুর কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানা এলাকার একটি সিএনজি পাম্পে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরি করতেন। তিনি আগে হরকাতুল জিহাদের (হুজি) সদস্য ছিলেন। চাকরি করার সময় কুমিল্লার একটি খাবারের দোকানে মাইনুল ইসলাম (রক্সি) ও ফেলানী নামে আনসার আল ইসলামের দুই সদস্যের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। তাঁরা ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে একটি বৈঠক করে নতুন জঙ্গি সংগঠন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেন। সে অনুযায়ী ২০১৬ সালের পর বিভিন্ন সময় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে দাওয়াতি কার্যক্রম চালান আনিসুর।
র্যাবের ভাষ্যমতে, ২০২০ সালে আনিসুর কুমিল্লার প্রতাপপুরে তাঁর বাড়িসহ জমি ৫০ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। তার কিছু টাকা সংগঠনের জন্য দেন। বাকি টাকায় নাইক্ষ্যংছড়িতে সাড়ে তিন বিঘা জমি কিনে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেখানে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি তিনি পোলট্রি ফার্ম, চাষাবাদ ও গবাদিপশুর খামার করেন।।
গত ২৩ আগস্ট কুমিল্লা সদর এলাকা থেকে আটজন তরুণ নিখোঁজের ঘটনা ঘটে। তাঁদের খুঁজতে গিয়ে নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসারের তথ্য পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র্যাব জানায়, গত সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পার্বত্য এলাকা ও সমতলের বিভিন্ন স্থান থেকে এই জঙ্গি সংগঠনের ৭৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে জামাতুল আনসারের শূরা সদস্য, সামরিক শাখা, অর্থ শাখা, মিডিয়া ও দাওয়াতি শাখার প্রধান রয়েছেন।
র্যাব জানায়, গ্রেপ্তার সরাজ একটি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ডিপ্লোমা শেষে পটুয়াখালীতে ব্যবসা করতেন। তিনি ২০০৪ সালে জঙ্গি সংগঠন হুজিতে যোগ দেন। হুজির কার্যক্রম স্তিমিত দেখে ২০১৪ সালে তিনি আনসার আল ইসলামে যোগ দেন। পরে ২০১৮ সালে তিনি জামাতুল আনসারে যোগ দেন। আর মাহফুজুর রহমান সিলেটের জগন্নাথপুরে একটি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তিনি ২০১৮ সালে এই জঙ্গি সংগঠনে যোগ দেন।