কাতারে শত শত কর্মী কফিল খুঁজে না পেয়ে পথে পথে ঘুরছেন

582

মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ ধনী দেশ কাতারের রাজধানী দোহায় বৈধভাবে পাড়ি জমানোর পরও বাংলাদেশী শ্রমিকদের দিন কাটছে মানবেতরভাবে। লাখ লাখ টাকা খরচ করে যাওয়ার পর তাদের ভাগ্যে জুটছে না চাকরি। খুঁজে পাচ্ছেন না কোম্পানি। বাধ্য হয়ে আরবিদের দয়ায় এখন তাদের রাত কাটাতে হচ্ছে গাড়ির ভেতর অথবা কোনো মজলিসে। এসব অভিযোগ জানাতে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশ দূতাবাসে গেলে সেখান থেকেও শ্রমিকদের সহযোগিতা না করে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। কাতারের পথে পথে বেকার ঘুরে বেড়ানো এসব নিঃস্ব ও প্রতারিত কর্মী দ্রুত তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

কাতারের দোহা থেকে লিখিত ও অডিও বার্তায় পাঠানো অভিযোগে আব্দুল মালেক উল্লেখ করেন, চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজধানীর উত্তরার লিননাস ওয়ার্ল্ড সার্ভিস নামক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাতারে গিয়েছেন। এর জন্য তার খরচ হয়েছে তিন লাখ ৭২ হাজার টাকা। চুক্তি মোতাবেক কোম্পানির ভিসা দেয়ার কথা বলা হয়। কাজ করতে হবে ৮ ঘণ্টা। থাকা মালিকের। খাওয়ার জন্য ৩০০ রিয়াল দেয়া হবে। আর মাসিক বেতন হবে ১৫০০ রিয়াল। দুই বছর পর দেশে যাওয়ার জন্য কোম্পানি থেকে আসা যাওয়ার বিমান টিকিট দেয়া হবে। কিন্তু কাতারে যাওয়ার পর থেকে আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তার ভাগ্যে কাজ জুটেনি। খুঁজে পাননি চুক্তি মোতাবেক কোম্পানি। যে কফিলের কথা বলে দালাল নিয়ে এসেছে এখন পর্যন্ত তারও দেখা পাননি তিনি। এখন দালালকে ফোন দিলে ফোনও ধরছে না। কখনো ফোনে পেলেও উল্টো হুমকি দেয়া হচ্ছে। এসব কারণে তার দিন কাটছে মানবেতরভাবে। তিনি বলেন, দিন কাটে যেমন তেমন, রাত কাটাতে হচ্ছে কখনো গাড়িতে অথবা আরবিদের কোনো মজলিসের অনুষ্ঠানে। মালেক লিখেছেন, এমন দুর্দশা তার একার নয়, শত শত প্রবাসী বাংলাদেশী তার মতো ফ্রি ভিসার নামে কোম্পানির কাজ না পেয়ে বেকার পথে পথে ঘুরছেন।

অন্য খবর  অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা শের-ই-বাংলা এ কে ফজলুল হক

লিখিত এবং অডিও বার্তায় আব্দুল মালেক আরো অভিযোগ করেন, এসব অভিযোগ জানাতে তিনিসহ কয়েকজন প্রতারিত শ্রমিক অনেক কষ্ট করে খুঁজে বের করে বাংলাদেশ দূতাবাসে গেলে সেখান থেকেও তাদের সাহায্য সহযোগিতা না করে তাড়িয়ে দেয়া হয়।

দূতাবাসের কর্মকর্তারা তাদের বলেছেন, ‘তোমরা এখানে কেন এসেছো? তোমাদের ভিসা আমরা দিয়েছি? এমন কথা শুনে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দূতাবাস থেকে তারা বের হয়ে যান। তাদের মতো সমস্যা নিয়ে দূতাবাসে শত শত শ্রমিক অপেক্ষা করছে জানিয়ে আব্দুল মালেক উল্লেখ করেন, রাতে আমরা কোথায় থাকব? অনুরোধ করলে আরবিরা আমাদের কোনো দিন তাদের গাড়িতে রাখে। আবার কখনো কোনো মজলিসে নিয়ে রাখে। এভাবেই আড়াই মাস পার করেছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধারে কেউ-ই এগিয়ে আসছে না। তার মতে, সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা না দেয়া হলে বিদেশে হাজার হাজার রেমিট্যান্স যোদ্ধারা নিঃস্ব হয়ে যাবে।

এর আগে টেলিফোনে আব্দুল মালেক এসব অভিযোগ করে বলেন, আমরা যখন কাতারে আসি তার আগে দেশে বিএমইটি থেকে ট্রেনিং দিয়ে আমাদের হাতে স্মার্ট কার্ড দেয়া হয়। তখন বলা হয়েছিল বিদেশে স্মার্ট কার্ড দিয়ে তোমরা সব ধরনের সহযোগিতা পাবে। এ তথ্য দূতাবাস কর্মকর্তাদের কাছে বললে তারা বলছেন, ‘এসব স্মার্ট কার্ড-মার্ড এই দেশে চলে না? এরপর দূতাবাস থেকে জানিয়ে দেয়া হয় ‘তোমাদের জন্য দূতাবাসের কিছুই করণীয় নাই’। তবে তিনি ওই কর্মকর্তার নাম জানাতে পারেননি।

অন্য খবর  কাতার বিশ্বকাপের নিরাপত্তায় পাকিস্তান

গতকাল শনিবার সন্ধ্যার পর এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আসুদ আহমদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর প্রতারিত শ্রমিক আব্দুল মালেকের দেয়া অভিযোগের ভিত্তিতে উত্তরার লিননাস ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের মালিক এবং পাঞ্জেরী হজ অ্যান্ড ওমরাহ সার্ভিসের চেয়ারম্যান আলহাজ মো: আরজু আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি শুধু বলেন, আব্দুল মালেকের নামে কাতার থেকে একটি ভিসা পাঠিয়েছিল আব্দুর রব নামের এক ব্যক্তি। তার রেফারেন্সে মালেক আমার অফিসে এসেছিল। আমার অফিস থেকে শুধু বিমানের টিকিট ইস্যু করা হয়েছিল। তবে তাকে বিদেশে পাঠাতে প্রসেসিং কেনো এজেন্সির নামে হয়েছে তা তিনি বলতে পারেননি।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব রৌনক জাহানের সাথে এ সমস্যার বিষয়ে গত রাতে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর বহির্গমন শাখার একজন কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে নাম না জানিয়ে বলেন, কাতারগামী কর্মীদের সত্যায়ন পদ্ধতি এখন উঠে গেছে। গত দুই মাস থেকে সত্যায়ন ছাড়াই কাতারগামী কর্মীরা যেতে পারছে। তবে সেখানে তারা কোন অবস্থায় আছে সেই প্রতিবেদন আমাদের হাতে আসেনি। অবশ্য ব্যুরোর একজন কর্মকর্তা দূতাবাসের সত্যায়ন পদ্ধতি তুলে দেয়ায় শ্রমিকদের কোম্পানির সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি ঝুঁকির মধ্যে থেকে যাবে বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন। এখন তার ওই বক্তব্যই সত্য হতে চলেছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সত্যায়ন ছাড়া কাতারে পাড়ি জমানো শ্রমিকেরা কেমন আছেন সেটি সরেজমিন জানতে প্রতিনিধিদল পাঠানোর কোনো বিকল্প নেই।

আপনার মতামত দিন