করোনার ভয় মাকে সন্তান থেকে আলাদা করতে পারেনি

57
করোনার ভয় মাকে সন্তান থেকে আলাদা করতে পারেনি

নম্রতা হালদার। একটি নিষ্পাপ শিশু। আক্রান্ত হওয়ার মাত্র ৪৭ দিন আগে পৃথিবীতে আগমন ঘটে তার। আদর ভালবাসা আর হাসি খুশিতে পিতা রামানন্দ হালদার ও মাতা লিপি হালদারের দিন যাচ্ছিল। এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে পরিবারে সুখের কমতি ছিল না। সবাই আদর সোহাগ করতো মেয়ে নম্রতা হালদারকে। আত্বীয় স্বজন যে দেখে সেই দু’হাত বাড়িয়ে দেয়। মেয়েটিও কোলে উঠে।
মা লিপি বেগম মহামারি করোনার এই সময়ে বাইরের কারো কাছে মা সন্তানকে দিতেন না। কিন্তু কাছের আত্বীয় স্বজন, পরিবারের লোকজনকে তো কেউ বারণ করেনা। পরিবারের চাচা, চাচাতো বোন, চাচাতো ভাই যারাই সময় সুযোগ পেতো তারাই শিশুটিকে কোলে নিতো। এরই মধ্যে চাচা ঠেলা রাম হালদার ডায়বেটিকসের রোগী হওয়ায় অসুস্থ বোধ করেন। কারো সাহায্য ছাড়া বাইরে যেতে পারেন না। করোনা আতংক ভর করে তারমধ্যে। এরই মধ্যে একদিন তাদের এলাকায় করোনা টেস্ট করার জন্য নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে মেডিকেল টিম আসে। করোনার উপসর্গ না থাকা স্বত্ত্বেও চাচা ঠেলা রাম সরদার, শিশুটির পিতা, মাতা, ভাই, চাচাতো বোনসহ পরিবারের ১৩ জনকে করোনার টেস্ট করানো হয়। টেস্টে ৩ জনের করোনা পজিটিভ আসে। এরা হলো চাচা ঠেলা রাম হালদার (৬০), শিশুটির চাচাতো বোন সদ্য এসএসসি পাশ করা অথৈ হালদার (১৬) ও শিশু নম্রতা হালদার। এদের মধ্যে ঠেলা রাম হালদার যেহেতু আগে থেকেই ডায়বেটিকস ও বয়স্ক জনিত রোগ ছিল, তাই তাকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে তার অবস্থা কিছুটা ভালো বলে জানা গেছে। এছাড়া, শিশু নম্রতা ও অথৈ হালদার দু’জনেই ভালো আছেন। তাদের মধ্যে আগেও কোনো উপসর্গ ছিল না, এখনো কোনো উপসর্গ নেই। তারা দিব্যি সুস্থ্য আছেন, ভালো আছেন। আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে মা বাবা দু’জনের করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
পৃথিবীর সব ভালবাসায় খাদ থাকলেও মায়ের ভালবাসায় কোনো খাদ নেই। করোনার ভয়ে পুরো পৃথিবীর মানুষ যখন আতঙ্কিত, শরীরে করোনার উপসর্গও নেই, তারপরেও করোনা সন্দেহে অনেকের রাত কাটে মৃত্যু যন্ত্রনায়। এই যখন পুরো পৃথিবীর মানুষের অবস্থা, তখন ব্যতিক্রমী এক ঘটনা ঘটেছে নবাবগঞ্জ উপজেলা। গত কয়েকদিন আগে করোনায় আক্রান্ত হয় ৪৭ দিনের এই কন্যা শিশু নম্রতা হালদার। শিশুটির যখন করোনা টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে, তখন শিশুটিকে কীভাবে চিকিৎসা দেয়া যায়, তা ভাবতে শুরু করেন চিকিৎসকরা। পরে সিদ্ধান্ত হয় শিশুটিকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হবে। কিন্তু ৪৭ দিনের শিশুকে তো আর একা রাখা যায় না। চিকিৎসকদের সামনে এসে, শিশুটির মা দৃঢ় চিত্তে বলেন, কে থাকবে আবার? আমি থাকবো, আমার সন্তানের সঙ্গে। দীর্ঘ দশ মাস সন্তানকে গর্ভে ধারণ করেছি। আমার রক্ত পান করে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। এরপর আমার কলিজা ছেড়া ধনটি পৃথিবীতে ভূমিষ্ঠ হয়েছে। সন্তানই যদি না বাঁচে, তাহলে আমার বেঁচে থেকে লাভ কী? সন্তানকে আমার কাছে রেখেই চিকিৎসা করাবো। এতে যদি আমার করোনা হয়, হবে। সন্তানের জন্য মৃত্যুবরণ করা লাগলে, মৃত্যুবরণ করবো। মায়ের কথা মতো বাসায় মায়ের কাছে রেখেই চলছে শিশুটির চিকিৎসা। শিশুটি আক্রান্ত হলেও পিতা মাতা দুজনে সুস্থ্য থাকায় এলাকাবাসীর মধ্যে নানা কৌতূহল কাজ করছে।
এ ব্যাপারে নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের করোনা কন্ট্রোল কর্নারের ফোকাল পারর্সন ডা. হরগোবিন্দ্র সরকার অনুপ নিউজ৩৯ কে বলেন, বেশ কয়েকদিন আগে নতুন বান্দুরায় করোনা সন্দেহ ভাজনদের টেস্ট করার জন্য মেডিকেল ক্যাম্প করি। এ সময় ওই পরিবারের ১৩জনসহ এলাকার প্রায় ৪৫ জনের করোনা টেস্ট করা হয়। তিনদিন পর ঢাকা থেকে রিপোর্ট আসে শিশু, শিশুর চাচাতো বোন ও শিশুর চাচাসহ নতুন বান্দুরা এলাকার ২০ জন করোনা আক্রান্ত। শিশুটিকে বাসায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে বর্তমানে শিশুটির অবস্থা ভালো।

আপনার মতামত দিন