ব্রাজিলকে কোপা আমেরিকার ফাইনালে হারিয়ে প্রথম শিরোপা নিয়েছেন মেসি। অপেক্ষা করছে এখন বিশ্বকাপ জেতা। এজন্যেই মেসি বলেছেন, এটি আমার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। পরশু রাতে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে সেমিফইনাল নিশ্চিত করার পর ১৮ ডিসেম্বরের ফাইনাল ঘিরে এ মন্তব্য করেছেন লিওনেল মেসি।
বিশ্বাকাপ কী হাতে নিতে পারবেন এই ফুটবলের মহা তারকা? সে উত্তরই মেলবে লুসাইল স্টেডিয়ামে।
মেসির বয়স ৩৫। ২০২৬ সালের যুক্তরাস্ট্র-কানাডা-মেক্সিকো বিশ্বকাপে যদি তাকে দলে রাখাও হয় তাহলে ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, ব্রাজিলের দানি আলভেজের মতো উপেক্ষিতই থাকতে হবে দলে। তাই চার বছর পর বুড়ো বয়সে আর বিশ্বকাপ খেলতে চান না এই আর্জেন্টনাই অধিনায়ক। যার অর্থ কাতারেই তিন দিন পর শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলতে নামছেন এই গ্রেট ফুটবলার।
তার নেতৃত্বে এবং নৈপূণ্যে আর্জেন্টিনা এখন ফাইনালে। ক্লাব ফুটবলে সব অর্জনই মেসির দখলে। বাকি ছিল জাতীয় দলের হয়ে টুর্নামেন্ট জেতা। সেটারও অবসান হয়েছে গত বছর মারাকানা স্টেডিয়ামে। বেশ কয়েকটি রেকর্ড অর্জনের মিশন নিয়েই মেসির কাতার আসা। ক্যারিয়ারে এক হাজার তম ম্যাচ খেলা। বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করা, বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা। সবই হয়েছে তার।
পরশু রাতে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেই স্পর্শ করেছেন জার্মানির লোথার ম্যাথিউজের খেলা ২৫ বিশ্বকাপ ম্যাচ। ফাইনালে নামলেও তিনি হবেন সবচেয়ে বেশি ২৬ ম্যাচ খেলা ফুটবলার। আর পেনাল্টিতে গোল করে টপকে গেছেন আর্জেন্টিনার বাতিস্তুতার ১০ গোলকে।
২০২২ বিশ্বকাপে পাঁচ গোল দিয়ে মেসি এখন সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার গোল্ডেন বুট জেতার লড়াইয়ে। ছয় ম্যাচের চারটিতে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। গোলও করিয়েছেন। সব মিলিয়ে গোল্ডেন বল যে তিনি জিততে যাচ্ছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। অবশ্য এই ক্ষেত্রে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে পাওয়া হলুদ কার্ড অন্তরায় হতে পারে। তবে গোল্ডেন বুট বা গোল্ডেন বল যাই জেতা হোক না কেনো বিশ্বকাপ জেতা না হলে সবই পানসে হয়ে যাবে।
২০১৪ সালের ব্রাজিল বিশ্বকাপের গোল্ডেন বল মেসিই জিতেছিলেন। কিন্তু আনন্দ তিনি উপভোগই করতে পারেননি ফাইনালে জার্মানির কাছে হারের কারণে। এখন পর্যন্ত কাতার বিশ্বকাপটা মেসির একক আসরই। তার ফর্ম দিয়েই। এখন সবকিছুরই পূর্ণতা মেলবে বিশ্বকাপটা জিততে পারলে। তাহলে দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনার সমতুল্য হতে পারবেন। চার বিশ্বকাপে খেলে ম্যারাডোনা ১৯৮৬ সালে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করিয়েছেন। ১৯৯০ সালে ফাইনালে তুলেছেন। ম্যারাডোনার মতোই মেসি দ্বিতীয় বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলতে যাচ্ছেন। ২০১৪ সালে তার নেতৃত্বে আর্জেন্টিনা শিরোপার বদলে রানার্সআপের কষ্ট নিয়ে ব্রাজিল ছেড়েছিল। এবার সাবেক বার্সেলোনার এই তারকা ফুটবলারের শেষ সুযোগ বিশ্বকাপ জিতে সবার প্রত্যাশা পূরণ করা।
আর্জেন্টিনা দলের কাতার বিশ্বকাপে সব কিছুই পাওয়া হয়েছে। হারের লজ্জ্বা। নক আউটে উঠতে না পারার শঙ্কা, ২ গোলে লিড নিয়েও শেষ পর্যন্ত ড্র করতে বাধ্য হওয়া। পরে টাইব্রেকারে জেতা। সেমিফাইনালে অপরাজিত থাকার রেকর্ড অক্ষুণ্ন রাখা। এখন মেসি যদি দেশকে তৃতীয় বিশ্বকাপ এনে দেন তাহলে তা হবে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পাওয়া। পারবেন কি ড্যানিয়েল প্যাসারেলা, দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো নিজেও আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে সফল অধিনায়ক হতে।
উল্লেখ্য, ১৯৭৮ সালের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক ছিলেন প্যাসারেল। যিনি ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার কোচ ছিলেন। রাশিয়া বা ব্রাজিল বিশ্বকাপেও মেসিকে এই রূপে দেখা যায়নি, যা দেখা যাচ্ছে কাতারের মাঠে। যেন দশ বছর আগের বা ২০ থেকে ২২ বছরের টগবগে যুবকের মাঠ দাবড়িয়ে বেড়ানোটা। তাকে যেন আটকাতেই পারছেন না কোনো ফুটবলার। তাকে রুখতে যতো কৌশলই বিপক্ষ কোচ এবং ফুটবলাররা নেন না কেনো ঠিকই তা ছিন্নভিন্ন করে ফেলেন তিনি। যার সর্বশেষ উদাহারণ ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে দলের তৃতীয় গোলে তার ভূমিকা। মাঝ মাঠে বল পেয়ে গায়ে গায়ে লেগে থাকা বিপক্ষ ডিফেন্ডারকে ডজে একে বারেই আউট প্লে করেন মেসি। এরপর গতিতে বক্সে ঢুকে ডান পায়ের নিখুঁত কাট ব্যাক জুলিয়ান আলভারেজকে। আর তাতেই আর্জেন্টিনার জয় নিশ্চিত হওয়া তৃতীয় গেল। এখন এই পিএসজির স্টার যদি ফাইনালেও স্বরূপে আবিভূত হতে পারেন তাহলে বিশ্বকাপ হাতে নিতে পারবেন।