দুবাইপ্রবাসী বাংলাদেশী শ্যামলচন্দ্র বিশ্বাসকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত তারই সহকর্মী নবাবগঞ্জের গোল্লা গোবিন্দচর খলশি গ্রামের বীরেন যাদব বাড়ৈকে শারজাহের একটি আদালতের দেয়া মৃত্যুদণ্ড রহিত করতে সরকারি পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সে দেশের আইন অনুযায়ী রক্তঋণ পরিশোধের মাধ্যমে মৃত্যু থেকে রেহাই দিতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় দেশে স্থানীয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে নিহতের পরিবারের সাথে সমঝোতার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসী কর্মী মানিকগঞ্জের শ্যামলচন্দ্র বিশ্বাস একই কোম্পানিতে কর্মরত অপর বাংলাদেশী নবাবগঞ্জের বিরেন যাদব বাড়ৈর হাতে ২০০৩ সালের ২৫ নভেম্বর খুন হন। এ নিয়ে মামলা হলে গ্রেফতার হন যাদব। শারজাহ প্রাথমিক শরিয়াহ আদালতে দীর্ঘ এক যুগ মামলা চলার পর অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আদালত যাদবকে মৃত্যুদণ্ড দেন। পরবর্তীতে বীরেন যাদব রায়ের বিরুদ্ধে (৭১০/২০০৪ নম্বর) আপিল করেন এবং নিহতের পরিবারকে রক্তঋণ পরিশোধের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ডের রায় থেকে অব্যাহতি চান যা এখনো বিচারাধীন।
কিন্তু রক্তঋণ (ক্ষতিপূরণ) প্রদানের মাধ্যমে মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি বলে সূত্র জানিয়েছে। তা ছাড়া অভিযুক্ত যাদবের পরিবারও অসচ্ছলতার কারণে প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণের অর্থ জোগাতে পারেনি বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
এ দিকে শারজাহর কারাগারে দীর্ঘ এক যুগ ধরে আটক যাদব মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টিকে সহানুভূতির সাথে দেখে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে। তারা দূতাবাসের মাধ্যমে নিহতের স্বজনদের কাছ থেকে ক্ষমাপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাতে অনুরোধ জানিয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত, দুবাই শ্রম উইংয়ের প্রথম সচিব (শ্রম) এ কে এম মিজানুর রহমান গত মাসে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উল্লেখ করেছেন। তাতে বলা হয়, যত দ্রুত সম্ভব খুন হওয়া বাংলাদেশী শ্যামলচন্দ্র বিশ্বাসের পরিবার ও অভিযুক্তের পরিবারের সাথে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করতে।
জানা গেছে, শারজাহ আপিল আদালত এই মামলায় নিহতের বৈধ ওয়ারিশদের সাথে যোগাযোগ করে নিহতের পরিবার অভিযুক্তের পরিবার থেকে রক্তঋণ গ্রহণ করে ক্ষমা প্রদানে ইচ্ছুক কিনা অথবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে তা কার্যকর করা হবে কিনা সে বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আদেশ প্রদান করেন।
অভিযুক্ত ও নিহতের পরিবারের মধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ততার মাধ্যমে সমঝোতার উদ্যোগ গ্রহণ করে নিহতের পরিবারকর্তৃক স্পষ্ট ভাষায় লিখিত ক্ষমাপত্র ও মানি রিসিপ্ট, পৌরসভার বা ইউপি কাউন্সেলরকর্তৃক প্রদত্ত ওয়ারিশ সনদ এবং নোটারি পাবলিককর্তৃক প্রদত্ত ফারায়েজনামা যথাযথভাবে নোটারি করে বাংলাদেশের আইন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকাস্থ সংযুক্ত আরব আমিরাত দূতাবাস থেকে সত্যায়ন করে পাঠানোর জন্যও কন্স্যুলেট অফিস থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। অথবা এ বিষয়ে নিহতের পরিবারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দ্রুত কন্স্যুলেটকে অবহিত করার জন্য দুবাইয়ের প্রথম সচিব (শ্রম) এ কে এম মিজানুর রহমান তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য নিহত শ্যামলচন্দ্র বিশ্বাসের বাবা কালিপদ বিশ্বাস। তার পাসপোর্ট নম্বর পি-০২২৬৪৭৮। স্থায়ী ঠিকানা মানিকগঞ্জের বাজিতপুর গ্রাম। অপর দিকে অভিযুক্ত বীরেন যাদব বাড়ৈর বাবা যাদবচন্দ্র বাড়ৈ। ঢাকার নবাবগঞ্জ গোল্লা গোবিন্দচর খলশি গ্রামে তার বাড়ি।
অভিযুক্ত বীরেন যাদবের ভাই আনন্দচন্দ্র বাড়ৈ গতকাল বলেন, আমার ভাই ১৪-১৫ বছর আগে দুবাই গেছে। এরপর সেখানে তাদের মধ্যে কী হয়েছিল তা আজো জানতে পারিনি। একবার দূতাবাস থেকে একটি চিঠি এসেছিল। পরে ওই চিঠি পেয়ে আমরা নিহতের ভাইয়ের সাথে মানিকগঞ্জে গিয়ে যোগাযোগ করি। কিন্তু তারা মীমাংসা করতে রাজি হচ্ছে না। শুধু বলে, ঈশ্বরের কাছে কামনা করেন, আপনার ভাই ফিরে আসবে। আনন্দচন্দ্র বলেন, আমার ভাইকে মুক্ত করতে যে টাকা প্রয়োজন তা আমরা কোনো দিন দিতে পারব না। তবে জমিজমা বিক্রি করে বড়জোর ৭০-৮০ হাজার টাকা দিতে পারব।