অক্টোবরে দোহারে শুরু হচ্ছে জাতীয় অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘গোর’ এর শ্যুটিং

    765

    তারেক রাজীব/গাজী নাদিম,নিউজ৩৯ঃ ১লা অক্টোবর থেকে দোহারে শুরু হচ্ছে জাতীয় অনুদানপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘গোর’ এর শ্যুটিং। দোহারের মুকসুদপুরের বেথুয়া’তে সাবেক মন্ত্রী ব্যাঃ নাজমুল হুদার বাড়ী সংলগ্ন একটি বাড়ী ইতঃমধ্যে ভাড়া নেয়া হয়েছে। দোহারের কৃতি সন্তান চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক গাজী রাকায়েত এই ছবির পরিচালনা করবেন। ইতঃমধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই সিনেমা নির্মাণে ৬০লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছেন। এর নায়ক চরিতে অভিনয় করবেন ইরেশ যাকের।

    গাজী রাকায়েত টিভির জন্য ‘গোর’ নাটকটি তৈরি করেছিলেন ১৯৯৮ সালে। ওই সময় মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারে সমালোচকদের রায়ে শ্রেষ্ঠ পরিচালক (সালাহউদ্দিন লাভলু) ও শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী (বিপাশা হায়াত) বিভাগে পুরস্কার পেয়েছিল নাটকটি। এত বছর পর নাটকটির নাট্যকার ও অভিনয়শিল্পী গাজী রাকায়েত একই গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছেন। শুরুতে ভেবেছিলেন পরিচালনার পাশাপাশি এই ছবিতে অভিনয় করবেন তিনি। আর এর প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য বছর দুয়েক চুল-দাড়ি কাটা থেকে বিরত থেকেছেন। তবে এখন এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন। বলেন, তিনি এখন ‘গোর’ ছবির পরিচালনার দিকটিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তাঁর আরেকটি খবর হলো, তিনি এবার শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রে অভিনয় করবেন। আর এই চরিত্রের জন্য নিজের চুল-দাড়ি কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গাজী রাকায়েত।

    গাজী রাকায়েতের জন্ম ১৯৬৬ সালের ১৫ জুন বাংলাদেশের ঢাকায়। তার পৈত্রিক বাড়ি দোহারের মুকসুদপুরের শাইনপুকুরে। তার পিতা আবদুল আউয়াল গাজী এবং মাতা বিলকিস বেগম। তার পড়াশুনার পাঠ শুরু হয় গেন্ডারিয়ায়ায়। তিনি ১৯৮৩ সালে গেন্ডারিয়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক এবং ১৯৮৫ সালে নটরডেম কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

    গাজী রাকায়েত ১৯৯৩ সালে খ ম হারুনের পরিচালিত সংগীত পদযাত্রা নাটকের মাধ্যমে অভিনয় শুরু করেন। এরপর তিনি অসংখ্য নাটকে অভিনয় করেছেন এবং নাটক পরিচালনা করেছেন। তার অভিনীত নাটকগুলোর মধ্যে একজন আয়নাল লস্কর, সাকিন, জন্মসূত্র, চিঠি, বৃষ্টি রাতের গল্প, অনিরুদ্ধ, সাম্প্রতিক একটি আত্মহত্যার কথা উল্লেখযোগ্য। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথম তানভীর মোকাম্মেলের পরিচালিত নদীর নাম মধুমতী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০০৬ সালে মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত খেলাঘর এবং ২০০৭ সালে এনামুল করিম নির্ঝর পরিচালিত আহা! চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। এরপর তিনি মুরাদ পারভেজ পরিচালিত চন্দ্রগ্রহণ (২০০৮), সাদিক আহমেদ পরিচালিত দ্য লাস্ট ঠাকুর (২০০৮), মোরশেদুল ইসলাম পরিচালিত প্রিয়তমেষু (২০০৯) ও আমার বন্ধু রাশেদ (২০১১), নাসির উদ্দীন ইউসুফ পরিচালিত গেরিলা (২০১১) ছায়াছবিতে অভিনয় করেছেন।এছাড়া ২০১৪ সালে খালিদ মাহমুদ মিঠু পরিচালিত জোনাকির আলো চলচ্চিত্রে চিত্রকর এস এম সুলতানের চরিত্রে অভিনয় করেন।

    অন্য খবর  অবিশ্বাস্য, অবিস্মরণীয়, অচিন্তনীয়: অসাধ্য সাধন করে ‘নায়ক’ সেই মাহমুদউল্লাহই

    অভিনয় ও নাট্য নির্মাণের পাশাপাশি গাজী রাকায়েত স্বল্পদৈর্ঘ্য ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। তার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো হল ঘুণ (২০০৪) এবং জীবনমৃত (২০০৫)। ২০১৩ সালে তার নিজের রচনায় নির্মাণ করেন তার প্রথম ছায়াছবি মৃত্তিকা মায়া। চলচ্চিত্রটি ২০১৫ সালে প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ রেকর্ড ১৭টি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসের এই প্রথম কোন চলচ্চিত্র ১৭টি শাখায় পুরস্কৃত হয়। এছাড়াও ২০১৪ সালে প্রদত্ত বাচসাস পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ পরিচালকসহ সাতটি বিভাগে পুরস্কার অর্জন করে। গাজী রাকায়েত তার দ্বিতীয় চলচ্চিত্র গোর-এর চিত্রনাট্যের কাজ করছেন।

    মৃত্তিকা মায়া বাংলাদেশের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি চলচ্চিত্র। ২০১২ সালের সরকারি অনুদানে নির্মিত এই চলচ্চিত্রটির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপ এবং পরিচালনা করেন গাজী রাকায়েত হোসেন। চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে প্রযোজনা করে চারুনিড়ম অডিও ভিজ্যুয়াল ও ইমপ্রেস টেলিফিল্ম।

    ২০১৩ সালের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে এই চলচ্চিত্রটি ১৭টি বিভাগে পুরস্কার লাভ করে। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে মৃত্তিকা মায়া যেসব বিভাগে পুরস্কার জিতেছে সেগুলো হচ্ছে— সেরা ছবি, সেরা পরিচালক, সেরা গল্প, সেরা সংলাপ, সেরা চিত্রনাট্য, সেরা অভিনেতা (তিতাস জিয়া), সেরা অভিনেত্রী (শর্মীমালা), সেরা পার্শ্ব অভিনেতা (রাইসুল ইসলাম আসাদ), সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রী (অপর্ণা ঘোষ), খল চরিত্রে সেরা অভিনেতা (মামুনুর রশীদ), সেরা আবহ সংগীত (এ কে আজাদ), সেরা চিত্রগ্রাহক (সাইফুল ইসলাম বাদল), সেরা সম্পাদনা (শরীফুল ইসলাম রাসেল), সেরা শিল্প নির্দেশক (উত্তম গুহ), সেরা পোশাক পরিকল্পনা (ওয়াহিদা মল্লিক জলি), সেরা শব্দগ্রহণ (কাজী সেলিম) এবং সেরা রূপসজ্জা (মোহাম্মদ আলী বাবুল)

    অন্য খবর  দোহারে স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

    তিনি দীর্ঘ দিন নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়-এর সদস্য হিসেবে মঞ্চে কাজ করেছেন। গাজী রাকায়েত “চারুনিড়ম অভিনয় স্কুল”-এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক। প্রতিষ্ঠানটি এখন নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করছে। ২০১৬ সালে গাজী রাকায়েত প্রথম ডিরেক্টরস গিল্ড নির্বাচনে সভাপতি নির্বাচিত হন।

    শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জনপ্রিয় চরিত্রগুলো নিয়ে চলচ্চিত্র তৈরি করবেন আরিফুর জামান। ছবির নাম ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’। গাজী রাকায়েত বলেন, এই দিনটি উপলক্ষে ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবির ঘোষণার অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। ছবিতে থাকছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘শ্রীকান্ত’, ‘রাজলক্ষ্মী’, ‘দেবদাস’, ‘বড়দি’, ‘মহেশ’সহ আরও কিছু জনপ্রিয় চরিত্র। এ পর্যন্ত গাজী রাকায়েতকে চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া অন্যান্য চরিত্রের জন্য পূর্ণিমা, পপি, ফেরদৌসসহ আরও অনেককে ভাবা হচ্ছে।

    গাজী রাকায়েত বলেন, ‘এ ধরনের চরিত্র পর্দায় যথাযথভাবে উপস্থাপন করা ভীষণ চ্যালেঞ্জের কাজ। শরৎচন্দ্রের হাঁটা, চলা, খাবার খাওয়া, শারীরিক গড়ন, পোশাক, কথা বলার ধরন—সবকিছু রপ্ত করতে হবে। এরই মধ্যে সেই চেষ্টা শুরু করেছি। প্রাথমিক চিত্রনাট্য পড়েছি। ভালো লেগেছে। চূড়ান্ত চিত্রনাট্য হাতে পাওয়ার পর পুরোদমে মহড়া শুরু করব।’

    গাজী রাকায়েত এর আগে ‘জোনাকির আলো’ ছবিতে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। এ ছাড়া তিনি শাহ আবদুল করিমের চরিত্রেও অভিনয়ের প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু এই চরিত্রে অভিনয় করেননি। বললেন, ‘এমন একজন মানুষের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়া সহজ ব্যাপার না।’

    ‘কাঠগড়ায় শরৎচন্দ্র’ ছবিটি প্রযোজনা করছে ইভেন্ট প্লাস ও এম আর ফিল্মস। ছবির শুটিং হবে আগামী এপ্রিল-মে মাসে। গাজী রাকায়েত বলেন, এর আগে তিনি চুল-দাড়ি কেটে ফেলবেন।

    আপনার মতামত দিন