প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সরকারি বাসভবন গণভবনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সম্মানে এক ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা অংশ নেন। এসময় বিএনএফ সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন এমন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত দলটির প্রতিষ্ঠাতা নেতাদের একজন নাজমুল হুদা। তবে এই প্রথম তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গেল।
দল পাল্টানো, ভোল পাল্টানো কখনোবা দুর্নীতির কারণে আলোচনায় এসেছেন বিএনপি আমলের যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। দুর্নীতি অভিযোগ ছাড়েনি তার স্ত্রী সিগমা হুদাকেও। স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীরও সাজা হয়েছে দুর্নীতির দায়ে। হুদার বিরুদ্ধে চলা দুর্নীতি মামলার সাজা কমিয়ে চার বছর করেছেন উচ্চ আদালত।
প্রসঙ্গত, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের জন্য ২০১০ সালে তৎকালীন ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাকে বহিষ্কার করেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট (বিএনএফ)। পরবর্তী সময়ে তাকে বিএনএফ থেকেও বহিষ্কার করা হন।
পরে গত মে মাসে তিনি গঠন করেন বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স-বিএনএ। তবে তাতেও তেমন সাড়া পাননি।
তিনি সর্বশেষ আলোচনায় আসেন গত ১৮ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া উপলক্ষে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশে উপস্থিত হয়ে। সেখানে তাকে বসে থাকতে এবং কথা বলতে দেখা যায় ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রীদের সাথে।
এনিয়ে ওই সময় ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বলেছিলেন, ‘ডিগবাজি খাওয়ার ইতিহাস আমার নেই। আমি চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত আরও শক্ত করতে।’
‘আমি দল পরিবর্তন করছি না। শুধু জোট পরিবর্তন করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে কথা দিয়েছেন, আমি মনোনয়ন পাবো। তবে দোহার থেকে নয়, আমি এবার লড়বো গুলশান থেকে। আমি বিশ্বাস করি তার (প্রধানমন্ত্রী) দেয়া কথা ভঙ্গ হবে না’ বলেছিলেন তিনি।
বিএনপির প্রতিও ক্ষোভ ঝাড়েন নাজমুল হুদা। তিনি বলেন, ‘২০দলীয় জোটের সাথে থেকে আমি যে সম্মান পাইনি, তা ১৪ দলে থেকে পাবো।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহাজোটে যুক্ত হবার সাথে আমার বিরুদ্ধে দেয়া দুর্নীতি মামলার রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই। ওটা আইনি বিষয়। আর এটা রাজনৈতিক। এই রায় তো এস কে সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি) স্বৈরাচারী কায়দায় দিয়েছিলেন আমার বিরুদ্ধে আক্রোশ মেটাতে।’
প্রধানমন্ত্রী ইফতারের আগে বিভিন্ন টেবিল ঘুরে আগত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। অন্যান্য ইফতার মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী কোনো বক্তব্য না রাখলেও এদিন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মানে তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
এতে উপস্থিত ছিলেন, স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
ক্ষমতাসীন জোট ও সমমনা দলের নেতাদের মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, সংসদের বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ, জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) চেয়ারম্যান পানিসম্পদমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া ।