করোনা মহামারীতে বিপর্যস্ত সারা পৃথিবী। বাংলাদেশও তার বাইরে নেই। বাংলাদেশে ২৪ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ছাড়িয়েছে। এই পর্যন্ত মারা গেছে ১৫৮২ জন। প্রতি দিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। দোহারও তার বাইরে নেই। দোহারে ২৪ জুন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২১১ জন। এর মাঝে সুস্থ হয়েছেন ১০৮ জন। দোহারে আক্রান্তদের মাঝে আছেন দোহার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জসিম উদ্দিন। দোহারের এই করোনা পরিস্থিতি নিয়ে নিউজ৩৯ এর কথা হয় দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেনের সাথে। ফোনে তার সাথে কথা বলেন নিউজ৩৯ এর চিফ নিউজ রিপোর্টার আছিফুর রহমান সজল। আলমগীর হোসেনের সাথে কথায় উঠে আসে দোহারের করোনা পরিস্থিতির প্রথম থেকে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত।
দোহারের করোনা পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা নিয়ে আলমগীর হোসেন বলেন, দেখেন করোনা রোগী যখন বাংলাদেশে ১ম শনাক্ত হয় ঠিক তখন থেকেই সরকার করোনা প্রতিরোধে সর্বাত্তক ব্যবস্থা নিয়েছে। সরকার যখন পরিপূর্ন লকডাউনে গেলো তখন থেকেই সারা দেশের মতো আমরা দোহার উপজেলা প্রশাসনও দোহারকে লক ডাউন করি। দোহারের সবগুলো প্রবেশ মুখ আমরা বন্ধ করে দেই। দোহারের প্রবেশমুখ গুলোতে আমরা চেক পয়েন্টও বসাই। পুলিশ ও প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে আমরা এই কাজগুলো বাস্তবায়ন করতে সচেষ্ট হই। কিন্তু মানুষের অসচেতনতা এখন বড় সমস্যা। অসচেতনার কারনে মানুষকে দোহারে আশা ফেরানো যায় নি। আমরা যখন চেক পয়েন্ট বসাই তখন নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর ও ঢাকা থেকে মানুষের স্রোত আমরা শতচেষ্টা করেও ফেরাতে পারি নি। দোহারের মুল প্রবেশপথগুলো আমরা দিনে ও রাতে বন্ধ রাখার ফলে মানুষ দূর্গম পথগুলো ব্যবহার করে, পায়ে হেটে দোহারে এসে পৌছেছে। তারপর যারা এসে পরেছে জন প্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হলেও অনেকে সেই নির্দেশগুলো অনুসরন করেন নি। ফলে আমরা চাইলেও দোহারে করোনা সংক্রমন বন্ধ করতে পারিনি। তারপরও দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় দোহার এখনো করোনা পরিস্থিতি নিয়ে যথেষ্ট ভাল অবস্থানে আছে।
তিনি লকডাউনের সময়কার সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতা নিয়ে বলেন, দোহার ও নবাবগঞ্জে প্রচুর পরিমানে সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতা করা হয়েছে। সরকারি সাহায্য ও সহযোগিতা দোহারের প্রতিটি অভাবি মানুষের কাছে পৌছে গেছে। সরকারি সহায়তার পাশাপাশি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও ঢাকা-১ এর সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান নিজের ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ৬০ হাজার পরিবারকে সহায়তা করেছেন যা দোহার-নবাবগঞ্জের ইতিহাসে বিরল। শুধু সাহায্য ও সহযোগিতা নয়, তিনি সব সময় দোহার ও নবাবগঞ্জ নিয়ে চিন্তা করেন। চিন্তা করেন কি করে এই অঞ্চলের মানুষকে আরো সুখি ও সমৃদ্ধ করা যায়। তিনি প্রতিনিয়তই দোহারের খোক খবর নেন এবং এইখানে সরকারি সহায়তা ঠিক মতো পৌছাচ্ছে কি না সেটা নিশ্চিত করেন। তাছাড়া প্রশাসনের প্রতিটি পর্যায়ের কাজ কর্ম তিনি নিয়মিত মনেটরিং করেন।
করোনা টেস্টের রেজাল্ট পেতে কেনো দেরি হয় এই ব্যাপারে তিনি বলেন, দেখেন আমরা অত্যন্ত ছোট একটা দেশ। করোনা মহামারীর কারনে সারাদেশ থেকেই একযোগে পরীক্ষা আশা শুরু হওয়ায় আজ করোনা টেস্টের রেজাল্ট আসতে দেরি হয়। এটা তো উপজেলা পরিষদের করার কিছু নেই। বরং আমরা প্রতিটি স্যাম্পল সংগ্রহ করে সাথে সাথেই অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠিয়ে দেই। এখন তারা রেজাল্ট দিতে দেরি করলে আমাদের কি করার আছে।
তিনি আরো বলেন, করোনা এখন দোহারে যে অবস্থায় আছে তাতে আমরা মনে করি পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রনে আছে। আপনি যদি লক্ষ করেন আমাদের দোহারে কিন্তু সুস্থ্যতার হার অনেক বেশি। প্রশাসনের সকল স্তরের লোকের কাজের মাধ্যমে দোহারে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আছে। আমরা করোনা রোগী চিহ্নিত করন করার পর তার যাবতীয় স্বাস্থ্য সেবার দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছি। আমরা হাসপাতালের মাধ্যমে প্রতিটি করোনা রোগীর নিয়মিত খোজ খবর নিচ্ছি ও ঔষুধ পৌছে দিচ্ছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ও ঢাকা-১ এর সংসদ সদস্য সালমান এফ রহমান দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলার সকল করোনা রোগীর জন্য ঔষুধ ফ্রি করে দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি ফ্রি স্বাস্থ্য সেবাও নিশ্চিত করেছেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য।
সামনে আসছে কোরবানীর ইদ। এই ইদ উপলক্ষে উপজেলা পরিষদ কি অস্থায়ী হাটের অনুমদন দিবে কি না সেই ব্যাপারে আলমগীর হোসেন বলেন, দেখেন বর্তমানে আমরা একটা খারাপ সময় পাড় করছি। এই মুহুর্তে হাট হবে কি না সেটা বড় কোন প্রশ্ন নয়। বড় প্রশ্ন হচ্ছে মানুষের বর্তমান আর্থিক অবস্থা কিরুপ। দেখেন বর্তমানে যারা দোহারে বিভিন্ন হাট ইজারা নিয়েছেন তারা বেশিরভাগই ক্ষতির সম্মুখিন আছেন। এই করোনা মহামারী বাংলাদেশের অর্থনীতিকে দূর্বল করে দিয়েছে। এই দুর্বল হওয়ার কারনে অনেকেই এইবার কোরবানী চাইলেও দিতে পারবেন না। তাই কোরবানীর হাট যারা ইজারা নিয়েছেন তারাই এই ব্যাপারটা ভাল বলতে পারবেন। তবে আমি যেটা বলতে পারি সেটা হচ্ছে সরকারি নির্দেশনা মতোই আমরা সব কিছুর ব্যবস্থা করবো। হাটের ব্যাপারে এখনো আমরা কোন নির্দেশনা পাই নি। তবে হাট বসতে হলে অবশ্যই সামাজিক দুরত্ব মেনে বসতে হবে। উপজেলা প্রশাসন করোনা বিস্তার রোধে সরকারি নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।