উচ্চ মাধ্যমিকে কতখানি সাফল্য পেয়েছে দোহারের কলেজগুলো?

629

২০১২ থেকে ২০১৭ এই ছয় বছরের উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় উক্ত বছরগুলোতে দোহারের জয়পাড়া কলেজ থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করেছে এবং এর পরেই রয়েছে পদ্মা কলেজ ও মালিকান্দা মেঘুলা কলেজের নাম।

২০১২ সালের পর ২০১৩ থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে দোহারের প্রতিটি কলেজেই উচ্চ মাধ্যমিকে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালে দোহারের কলেজগুলো থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহন করলেও ২০১৭ এ এসে সেই সংখ্যা হঠাৎ অনেকখানি কমে প্রায় ২০১২ সালের কাছাকাছি চলে গিয়েছে।

তাহলে কি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীরা দোহার বিমুখ হচ্ছে? সে প্রশ্নের উত্তরে যাওয়ার আগে একবার দেখে আসা যাক দোহারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শতকরা পাশের হারের তালিকা। ২০১২ থেকে ২০১৭ সালে দোহারের জয়পাড়া কলেজ থেকে প্রতিবছর সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করলেও এর মধ্য থেকে সফলতার ছোঁয়া পেয়েছে খুব কমসংখ্যক পরীক্ষার্থী। প্রতিষ্ঠানটির শতকরা পাশের হারের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায় শুধুমাত্র ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটির শতকরা পাশের হার ছিল ৭৬.৯০ শতাংশ যা বিগত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। বাকী বছরগুলোতে যার অংক ৭০ ছুঁতে পারেনি তবে ২০১৭ সাল ব্যতীত প্রতিষ্ঠানটি থেকে শিক্ষার্থীদের জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তির হার ছিল ধারাবাহিক।

দোহারের উচ্চ মাধ্যমিক-ফলাফল ০১
২০১২ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত উচ্চমাধ্যমিকে পরীক্ষার্থী সংখ্যা ও শতকরা পাশের হার

শিক্ষার্থীদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনের পছন্দের তালিকায় দ্বিতীয় নাম পদ্মা কলেজ যা কিছুদিন আগেই সরকারীকরনের জন্য মনোনীত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির বিগত ছয় বছরের ফলাফল মূল্যায়ন করলে দেখা যায় ২০১২ সালে এ প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পাশের হার ছিল ৮১.৩৫ শতাংশ ও তা বেশ কয়েকবার ৭০ এর কোটা ছুঁয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তির হার ধারাবাহিক হলেও পাশের হার ধারাবাহিকভাবে এগুয়নি।

দোহারের মালিকান্দা মেঘুলা কলেজ থেকে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিলেও এই প্রতিষ্ঠানের ফলাফল বেশ আকর্ষনীয়। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির শতকরা পাশের হার বেশ কয়েকবার ৮০ এর কোটা পার করেছে। প্রতিষ্ঠানটির সর্বোচ্চ পাশের হার ছিল ২০১৪ সালে ৮৫.১৩ শতাংশ এছাড়াও ২০১৫ সাল ব্যতীত প্রতিষ্ঠানটির শতকরা পাশের হার ৭০ এর নিচে কখনোই নামেনি এবং তাদের ফলাফল ছিল বরবারই উপরের সারিতে। এখানে উল্লেখ্য যে ২০১৭ সালের ফলাফল বিপর্যয়েও প্রতিষ্ঠানটির শতকরা গড় পাশের হার ছিল ৭৫.৭৮ শতাংশ এবং প্রতিষ্ঠানটি থেকে জিপিএ ভাইভ প্রাপ্তির হারও চোখে পড়ার মতো।

অন্য খবর  রবিবার নবাবগঞ্জ কলেজ সরকারি ঘোষিত হলো
দোহারের উচ্চ মাধ্যমিক-ফলাফল ০২
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রাপ্ত জিপিএ ফাইভের তালিকা ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখার ফলাফল

২০১২ সালে দোহার থেকে সর্বোচ্চ ৩৫ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ প্রাপ্ত হন। ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত ৩৭টি জিপিএ ফাইভ নিয়ে দোহারের মধ্যে এগিয়ে আছে পদ্মা কলেজ। ২৭ টি ও ২০ টি জিপিএ ফাইভ নিয়ে এ তালিকার দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জয়পাড়া কলেজ ও মালিকান্দা মেঘুলা কলেজ।

দোহারের উচ্চ মাধ্যমিক-ফলাফল ০৩
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার ফলাফল

২০১২ থেকে ২০১৭ সালে শিক্ষার্থীদের বিষয়ভিত্তিক পছন্দের তালিকা মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, দোহারের কলেজগুলোর ব্যবসায় শিক্ষা শাখা সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থীকে আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছে এবং এর পরেই রয়েছে মানবিক ও বিজ্ঞান শাখা। সারাদেশে বিজ্ঞান শিক্ষার যখন তোরজোড় চলছে তখন দোহারের পাশের নবাবগঞ্জ থানার কলেজগুলোর বিজ্ঞান শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও সেই সুবাতাস দোহারের কলেজগুলোর গায়ে লাগেনি। ফলাফলস্বরুপ প্রতি বছরই কমেছে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা।

দোহারের উচ্চ মাধ্যমিক-ফলাফল ০৪
২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিষয়ভিত্তিক শতকরা পাশের হারের তালিকা

দোহারের কলেজগুলোর মধ্যে সংখ্যার বিচারে ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় সবচেয়ে এগিয়ে আছে পদ্মা কলেজ। ২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে থেকে মোট ২৯ জন জিপিএ ফাইভ পেয়েছে। শতকরা পাশের হারের দিক থেকে মালিকান্দা মেঘুলা কলেজ কিছুটা এগিয়ে থাকলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় পদ্মা কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখাকেই সামনে রাখতে হচ্ছে। ১৯ টি জিপিএ ফাইভ নিয়ে জয়পাড়া কলেজের ব্যবসায় শিক্ষা শাখার অবস্থান দ্বিতীয়তে থাকার কথা থাকলেও শিক্ষার্থীদের পাশের হারের দিক থেকে এ কলেজটিকে দ্বিতীয়তে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটি থেকে সবচেয়ে বেশি শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিকে অংশ নিলেও তারা উত্তীর্ন হতে পারছে না তাই ১২ টি জিপিএ ফাইভ ও শতকরা পাশের হার বিবেচনায় মালিকান্দা মেঘুলা কলেজ দ্বিতীয় স্থানটি দখল করেছে।

২০১২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ টি জিপিএ ফাইভ ও ধারাবাহিক সাফল্য নিয়ে মানবিক শাখায় প্রথম স্থান নিশ্চিত করেছে মালিকান্দা মেঘুলা কলেজ। ২০১৪ সালে এই প্রতিষ্ঠানটির মানবিক শাখা থেকে শতকরা পাশের হার ছিল ৯২.৩৮ শতাংশ। কলেজটিতে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও পাশের হারটি চোখে পড়ার মতো। ১টি জিপিএ ভাইভ ও শতকরা পাশের হার বিবেচনায় পদ্মা কলেজের মানবিক শাখা দ্বিতীয় অবস্থান দখল করেছে। ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠানটির মানবিক শাখার ভরাডুবি কাটতে না কাটতেই ২০১৭ সালে কলেজটির মানবিক শাখা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি। ২ টি জিপিএ ভাইভ ও শতকরা পাশের হার বিবেচনায় পদ্মা কলেজ ও জয়পাড়া কলেজের অবস্থান খুব কাছাকাছি। ২০১৩ সালের পরে জয়পাড়া কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহনের সংখ্যা বাড়লেও ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত ১৫৫, ১২৯, সর্বশেষ ১৪২ জনের ফেলের বোঝা মাথায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান তৃতীয় স্থানে।

অন্য খবর  দোহারে ছাত্রলীগের জঙ্গীবাদ বিরোধী মিছিল

ধারাবাহিক সাফল্য, শতকরা পাশের হার ও জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তির অবস্থানের দিক থেকে দোহারের পদ্মা কলেজের বিজ্ঞান শাখা ইতিমধ্যেই একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করেছে। ২০১২ থেকে ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠানটির মোট জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তির সংখ্যা ৭ টি। তবে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান শাখা খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থীকেই টানতে পেরেছে। ৬ টি জিপিএ ফাইভ ও প্রায়শই ৮০ শতাংশের উপরে শতকরা পাশের হার নিয়ে মালিকান্দা মেঘুলা কলেজ যুগ্মভাবে পদ্মা কলেজের সাথে প্রথম স্থানেই অবস্থান করছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি থেকে খুব কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়ায় শতকরা পাশের হার ভাল থাকা পরও এককভাবে এই প্রতিষ্ঠানকে প্রথম স্থানে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লে এই দুইটি কলেজের বিজ্ঞান আরো আলো ছড়াবে। জয়পাড়া কলেজের বিজ্ঞান শাখার ফলাফল দেখলে কিছুটা হতাশই হতে হয়। ২০১২ সালে ৫ টি জিপিএ ফাইভ প্রাপ্তির পর এ প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান শাখার আলো দুপ করেই নিভে গিয়েছে। দোহারের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান শাখা থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দিলেও ফলাফল ভালো হচ্ছেনা। তবে আশার কথা হচ্ছে ২০১৭ সালে এসে প্রতিষ্ঠানটির বিজ্ঞান শাখার ফলাফল পদ্মা কলেজের চেয়ে ভালো হয়েছে।

আপনার মতামত দিন