একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ও ইংরেজি পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন আসছে। মাঠপর্যায়ে শিক্ষকদের সুপারিশের ভিত্তিতে এই পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দুই বইয়ে পরিবর্তনের বিষয়বস্তু নিয়ে এখন চলছে পর্যালোচনা।
বিষয়টি নিশ্চত করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান শিক্ষাবার্তা ডট কম কে বলেন, মাঠপর্যায়ে শিক্ষকদের সুপারিশের ভিত্তিতে এনসিটিবি অনুমোদিত একাদশ শ্রেণির ‘বাংলা সাহিত্য পাঠের’ (গদ্য ও কবিতা) ও ইরেজি বই পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে।
‘কী কী পরিবর্তন আনা হবে সেসব তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এরপর তা যাচাই-বাছাই করা হবে। যেসব পরিবর্তন যুগপোযোগী ও মানসম্মত সেগুলোকেই প্রাধান্য দেয়া হবে’- বলেন তিনি।
তিনি বলেন, চূড়ান্ত সুপারিশ পাওয়ার পর আমরা একটি বইয়ের জন্য একটি কমিটি তৈরি করে দেব। কী কী পরিবর্তন ও অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা কমিটির সদস্যরা নির্বাচন করে প্রতিবেদন দেবেন। পরিবর্তন করা বই চলতি বছর নাকি আগামী বছর দেয়া হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে ইংরেজি বই পরিবর্তনে একটু সময় লাগতে পারে। তা এ বছর নাও হতে পারে।
মাঠপর্যায় থেকে আসা শিক্ষকদের চারপৃষ্ঠার ওই সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, কবি জসীম উদদীন, সৈয়দ মুজতবা আলী, মীর মোশাররফ হোসেন, ফররুখ আহমদ ও প্রমথ চৌধুরীর লেখা গদ্য-পদ্য না থাকায় শিক্ষক ও অভিভাবকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
সুপারিশে বলা হয়েছে ‘সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত না থাকলেও পাঠ্যবইয়ে কতিপয় লেখকের রচনা অন্তর্ভুক্ত করা দরকার। তাদের মধ্যে, অন্নদাসশঙ্কর রায়, হুমায়ূন আহমেদ, বিহারীলাল চক্রবর্তী, যতীন্দ্রমোহন বাগচী, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে নারী লেখকদের মাত্র দুটি রচনা রয়েছে, এটি লিঙ্গবৈষম্য করা হয়েছে। তাই নারী লেখকের লেখা আরও যুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে সুপারিশে।
সিলেবাস প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির সিলেবাসকে অনেকে বৈচিত্রহীন বলে অভিহিত করেছে। এতে গদ্যে মননশীল ও সুচিন্তিত প্রবন্ধের অভাব আছে বলে তারা মনে করেন। ‘জীবন ও বৃক্ষ’ উৎকৃষ্ট প্রবন্ধ হলেও এই মানের আরও প্রবন্ধ থাকা উচিত। বিশেষ করে প্রথম চৌধুরী কিংবা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা অনেকে দেখতে চান শিক্ষকরা। নৈতিকতা, দেশাত্মবোধ, মুক্ত ও উদার মনন গঠনের উপযোগী রচনার সন্নিবেশ থাকার পক্ষে শিক্ষকরা জোরালো মত দিয়েছেন। কবিতার ক্ষেত্রে বৈচিত্রহীনতার বিষয়টি অনেক বেশি। সেই ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ কবিতা শিক্ষকদের তেমন টানে না বলে অভিযোগ তোলা হয়েছে।
শিক্ষকদের সুপারিশে বলা হয়েছে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেগম রোকেয়ার ‘চাষার দুক্ষু’ প্রবন্ধের উপযোগিতা প্রশ্নসাপেক্ষ। একালের ছেলেমেয়েদের কাছে এটা উদ্ভট মনে হতে পারে। তাছাড়া চাষা শব্দটি গালিবিশেষ। বেগম রোকেয়াকে বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত হিসেবে মানুষ মনে করা হয়। তাই তার অন্য রচনা অন্তর্ভুক্তির দাবি রাখে।
যৌতুকপ্রথাবিরোধী ‘অপরিচিতা’ পরিবর্তন করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হৈমন্তী’ ছোটগল্প অন্তর্ভুক্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাসি-পিসি গল্পের পরিবর্তে বায়ান্নর দিনগুলো, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছোটগল্প ‘রেইনকোট’ এর পরিবর্তে আবু জাফর শামসুদ্দীনের ‘কলিমদ্দি দফাদার’ যুক্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে।
বিজ্ঞানমনস্কতা তৈরিতে ‘মহাজাগতিক কিউরেটর’, ‘রেইনকোট’ ‘নেকলেস’ ‘লোক-লোকান্তর’ ‘যাদুঘরে কেন যাবো’ এবং ‘রক্তে আমার অনাদি অস্থি’ গল্পগুলো অনুপযোগী বলে সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ‘এসব গল্প ক্লাসে পড়িয়ে শিক্ষকরা ক্লান্তিকর মনে করেন। অনেকে হাস্যকর ও উদ্ভট গল্পের সঙ্গে তুলনা করেন’। তাই সুপারিশে উল্লিখিত গল্পগুলো পরিবর্তন করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে, একাদশ শ্রেণির বাংলা বইয়ের নাম ‘সাহিত্য পাঠের’ বদলে সাহিত্যপাঠ করার সুপারিশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সমাসবদ্ধ তৎসব শব্দ হিসেবে আলাদা শব্দ হবার সুযোগ নেই। হাইফেন দিয়ে যুক্ত করলে এর অর্থগত বিপত্তি সৃষ্টি হতে পারে।