আজ ১৮ মার্চ,১৯৭১ এর এই দিনে একদিকে সংগ্রামের প্রস্তুতি, অন্যদিকে চলছিল বঙ্গবন্ধু ও ইয়াহিয়া খানের আলোচনা। একপর্যায়ে সবাই বুঝতে পারে, আলোচনার নামে চলছে সময়ক্ষেপণ। বঙ্গবন্ধু আলোচনাতেই শাসকশ্রেণির বিরুদ্ধে আলোচনার নামে প্রহসনের অভিযোগ আনেন। তিনি স্বাধীনতার দাবিতে অটল থেকে আলোচনায় অংশ গ্রহণ করছিলেন। এ দিনই বিমানবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত বাঙালি সৈনিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কর্মীরা বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত সৈনিকদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সঙ্গে একাত্ম করতে বিভিন্ন স্থানে মতবিনিময় চালিয়ে যেতে থাকেন। দেশের বিভিন্ন স্থানে সাধারণ মানুষ সামরিক প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। মহিলা পরিষদের মেয়েরাও পিছিয়ে ছিলেন না। তাদের ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যরা তেজগাঁও-মহাখালীতে শ্রমিকদের ট্রাকে হামলা চালায়। আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম সংবাদপত্রে প্রদত্ত এক বিবৃতিতে বলেন, এ ধরনের উসকানি আর সহ্য করা হবে না। অসহযোগ আন্দোলনের সপ্তদশ দিবস ছিল ১৮ মার্চ। এ দিনও সরকারি-বেসরকারি ভবনে কালো পতাকা উড়িয়ে, অফিস-আদালতে অনুপস্থিত থেকে সব শ্রেণির কর্মচারী বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সংগ্রামের কর্মসূচি সফল করে তোলেন। জনগণের কণ্ঠে উচ্চারিত স্লোগান ছিল- বীর বাঙালি অস্ত্র ধর- বাংলাদেশ স্বাধীন কর। মিছিলকারীদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, তোমরা ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। জনগণের রক্তের সঙ্গে আমি বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারি না।
স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে আমেরিকা, ব্রিটেন, রাশিয়া, চীন প্রভৃতি শক্তির প্রতি তাদের সরবরাহ করা অস্ত্র দ্বারা বাঙালি হত্যার অপচেষ্টা বন্ধ করার আবেদন জানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির নেতারা অপর এক বিবৃতিতে বিভিন্ন দেশের সরকার, বিশ্ববিদ্যালয় এবং বুদ্ধিজীবীদের কাছে তারবার্তা প্রেরণ করে আসন্ন গণহত্যা ও যুদ্ধ থেকে পশ্চিম পাকিস্তানিদের নিবৃত্ত করার অনুরোধ জানান।