জাতীয় পার্টি, বিকল্পধারা ও ১৪ দলের শরিকদের জন্য নির্ধারিত আসন খালি রেখে ২৩২টিতে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি ৬৮টি আসনে দলীয় প্রার্থী তালিকা তৈরি করেনি সরকারি দল। দ্রুতই তিনশ’ আসনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল ও মহাজোটের প্রার্থী তালিকা ঘোষণার প্রস্তুতি রয়েছে। এর মাঝে বহুল আলোচিত ঢাকা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাচ্ছেন সালমান এফ রহমান। সালমান এফ রহমানের এই মনোনয়ন লাভের খবর নিশ্চিত করেছেন মনোনয়ন বোর্ডেরই একজন সদস্য।
আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলী ও সম্পাদকমণ্ডলীর কয়েকজন সদস্য গতকাল রোববার জানিয়েছেন, বেশিরভাগ আসনে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হলেও দলের কেন্দ্রীয় দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আবদুর রহমানের আসনে মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে, অর্থাৎ ঢাকা-১৩ ও ফরিদপুর-১ আসনে দলের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। এ দুই নেতা বর্তমান সংসদের সদস্য ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক।
তারা জানান, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ব্যবসায়ী সালমান এফ রহমানকে ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) আসনে মনোনয়ন দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি এরই মধ্যে তাঁকে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে দলের শীর্ষপর্যায় থেকে। ওই আসনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী আবদুল মান্নান খান। তবে ভোটযুদ্ধে জয়লাভ করেছিলেন জাতীয় পার্টির অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম।
ভাগ্য বিপর্যয় ঘটেছে দুই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। বর্তমান সংসদের সদস্য এ দুই নেতা দলের মনোনয়ন পাননি। শরীয়তপুর-১ আসনে বি এম মোজাম্মেল হকের পরিবর্তে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ইকবাল হোসেন অপু ও মাদারীপুর-৩ আসনে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের বদলে দলের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান সংসদের কমপক্ষে আরও ১১ এমপি এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় স্থান পাননি। তাদের বিভিন্নজনের বিরুদ্ধে নানা কারণে বিতর্কের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে। কারও কারও জনপ্রিয়তা তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব-বিবাদে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগও আছে কারও কারও বিরুদ্ধে। দুর্নীতি, মাদক ও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত এমপিদেরও দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়নি।
বাদ পড়া এমপিদের মধ্যে রয়েছেন- মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আবদুল ওয়াহহাব (মাগুরা-১), খন্দকার আসাদুজ্জামান (টাঙ্গাইল-২), আমানুর রহমান রানা (টাঙ্গাইল-৩), সোহরাব উদ্দিন (কিশোরগঞ্জ-২), সুকুমার রঞ্জন ঘোষ (মুন্সীগঞ্জ-১), ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু (নেত্রকোনা-৩), আবদুর রহমান বদি (কক্সবাজার-৪), আবদুল ওয়াদুদ দারা (রাজশাহী-৫), কর্নেল (অব.) শওকত আলী (শরীয়তপুর-২), অধ্যাপক ডা. আমান উল্লাহ (ময়মনসিংহ-১১) ও অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম মনির (যশোর-২)।
বেশ কয়েকজন নতুন মুখ রয়েছেন আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী তালিকায়। তাদের মধ্যে রয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম (শরীয়তপুর-২), কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল (নেত্রকোনা-৩), প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত ব্যক্তিগত সহকারী অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর (মাগুরা-১), পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ (কিশোরগঞ্জ-২) ও আবদুর রহমান বদি এমপির স্ত্রী শাহীন চৌধুরী (কক্সবাজার-৪)।
আওয়ামী লীগ সংসদীয় বোর্ডের কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, সর্বশেষ গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে দলের সংসদীয় বোর্ডের বৈঠকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, রংপুর, বরিশাল ও ময়মনসিংহ বিভাগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হলেও এতে পরিবর্তন ও সংযোজনের সুযোগ রয়েছে। সংসদীয় বোর্ডের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে এই ক্ষমতা দিয়েছেন। প্রার্থী তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংসদীয় বোর্ডের কোনো সদস্যই মুখ খুলতে চাননি। তবে গতকাল তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন, এমন কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে বিভিন্ন আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম জানা গেছে।