অর্থ সচিব নিয়োগ পেলেন দোহারের সন্তান মো. খাইরুজ্জামান

484

শরিফ হাসান, নিউজ৩৯: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব মো. খায়রুজ্জামান মজুমদারকে অর্থসচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তিনি দোহারের কৃতি সন্তান। দোহার উপজেলার মুকসুদপুর ইউনিয়নের মইতপাড়া গ্রামে তার জন্ম। গ্রামের সাথে তার নিবিড় সম্পর্ক বিদ্যমান। দোহারের যে কোন সামাজিক ও মানবিক কাজে তিনি সম্পৃক্ত থাকতে সচেষ্ট । বর্তমান সাংসদ সালমান এফ রহমানের স্নেহধন্য একজন মানুষ তিনি। বুধবার ১১ বিসিএস ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তাকে অর্থসচিব নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

তিনি দেশের প্রথম নারী অর্থসচিব ফাতিমা ইয়াসমিনের স্থলাভিষিক্ত হলেন।

বর্তমানে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব ছিলেন ড. মোঃ খায়েরুজ্জামান মজুমদার একজন দক্ষ পেশাজীবী। তাঁর রয়েছে অর্থ, সামষ্টিক অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক অর্থনীতি, শুল্ক, বাণিজ্য ফ্যাসিলিটেশন সংক্রান্ত বিষয়াদি, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসহ বিবিধ বিষয়ে দীর্ঘ 30 বছরের অভিজ্ঞতা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে যোগদানের অব্যবহিত পূর্বে তিনি অর্থ বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামষ্টিক অর্থনীতি অনুবিভাগে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য, 1993 সালের এপ্রিল মাসে 11তম ব্যাচে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদানের মাধ্যমে ড. মজুমদার তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন । পরবর্তীতে তিনি বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) কর্মকর্তা হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এর বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন।

ড. মজুমদার যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সরকার (রাজনৈতিক অর্থনীতি) বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। এছাড়া তিনি কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনৈতিক অর্থনীতিতে এমএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। এর পূর্বে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে এমএসএস ডিগ্রী এবং প্রথম স্থান অর্জন করে একই বিষয়ে বিএসএস (সম্মান) ডিগ্রী অর্জন করেন। তিনি ফরাসি ভাষায় একটি এডভান্স সার্টিফিকেট কোর্সও সম্পন্ন করেছে। দীর্ঘ পেশাগত কর্মজীবনে তিনি রাজস্ব, অর্থ, বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সংক্রান্ত বিষয়ে দেশ-বিদেশে অসংখ্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন।

অন্য খবর  বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর আদর্শে ছাত্রলীগকে এগিয়ে নিতে চাই: শরীফ হাসান

ড. মজুমদার অর্থ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বান্দরবান জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ইউএসএআইডি প্রোগ্রাম (আইবিআই প্রকল্পের চীফ অফ পার্টি হিসাবে), বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল এবং বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউট -এ সরকারি ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অঙ্গনে বিভিন্ন পর্যায়ে কাজ করেছেন। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিআইজিএম) -এ adjunct ফ্যাকাল্টি হিসেবে ডব্লিউটিও ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, সামষ্টিক অর্থনীতি এবং আন্তর্জাতিক অর্থনীতি নামে মাস্টার্স পর্যায়ের তিনটি কোর্সে অধ্যাপনা করেছেন।

অর্থ বিভাগে তিনি সরকারের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কৌশল নির্ধারণ, রাজস্ব-নীতির পরিকল্পনা ও বিশ্লেষণ, মধ্যমেয়াদী সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি-বিবৃতি প্রণয়ন এবং বাজেট সহায়তাসহ দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক কাঠামো সংক্রান্ত বিষয়ে বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল এবং অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সাথে সমন্বয়ের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাথে সম্প্রতি গৃহীত ৪.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীর সাথে অনেক বাজেট সহায়তা কর্মসূচির সফল সমাপ্তিতে ভূমিকা পালন করেছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তিনি দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক বাণিজ্য আলোচনা পরিচালনা, বাণিজ্য-সুবিধা বিষয়ক কার্যসমূহ সম্পাদন এবং ডব্লিউটিও’র সাথে সংশ্লিষ্ট কাজ করেন। ড. মজুমদার বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিলের সমন্বয়কের দায়িত্বও পালন করেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তৈরি পোশাকের উপর অত্যধিক নির্ভরতা কমাতে দেশের রপ্তানি-পণ্যের ভিত্তি বহুমুখীকরণ সংক্রান্ত সরকারি নীতি বাস্তবায়নে কাজ করেন। এভাবে তিনি উৎপাদন খাতের সাপ্লাই সাইডের বাঁধাসমূহ অপসারণের মাধ্যমে বেসরকারী খাতের, বিশেষত: চামড়া, কৃষি পণ্য, আইসিটি, মৎস্য, হালকা প্রকৌশল এবং ঔষধি গাছ ও ভেষজ পণ্যের মতো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের বিকাশে ভূমিকা রাখেন।

অন্য খবর  সোহেল মিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে ঈদ বস্র বিতরণ

ইউএসএআইডি’র অর্থায়নে পরিচালিত ‘বাংলাদেশ ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন অ্যাক্টিভিটি (বিটিএফএ)’ প্রোগ্রামে তাঁর প্রায় পাঁচ বছর ব্যাপী কর্মকালে তিনি ডব্লিউটিও ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এগ্রিমেন্ট -এর অধীনে বেশ কয়েকটি বাণিজ্য সহজীকরণ উদ্যোগ বাস্তবায়নে জড়িত ছিলেন, যেমন- ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য প্রকাশ, ইনকোয়ারি পয়েন্ট, এডভান্স রুলিং, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা, পোস্ট ক্লিয়ারেন্স অডিট, অথরাইজড অপারেটর, এবং কুরিয়ার কার্গোর দ্রুত ছাড়পত্র প্রদান। ড. মজুমদার বিটিএফএ-এর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কর্মসূচির কার্যক্রম সফলভাবে পরিচালনার পাশাপাশি একটি শক্তিশালী এবং বৈচিত্র্যময় নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হন। ড. মজুমদার UNCTAD এবং OECD-এর মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিতে ন্যাশনাল কনসালটেন্ট হিসেবেও সংক্ষিপ্ত মেয়াদে কাজ করেন। এছাড়াও স্বল্প-আয়ের দেশগুলিতে বেসরকারী উদ্যোগের বিকাশে গৃহীত যুক্তরাজ্যের CEPR গবেষণা প্রোগ্রামের ‘প্রোগ্রাম ইভ্যালুয়েশন কমিটি’ এর সদস্য হিসেবে কাজ করেছেন।

ড. মজুমদারের বেশ কিছু আন্তর্জাতিক প্রকাশনা রয়েছে। পড়াশুনার প্রতি তাঁর চির-অতৃপ্ত নেশা রয়েছে এবং তিনি গান শুনতেও পছন্দ করেন।

ড. মজুমদার বিবাহিত এবং দুই কন্যা সন্তানের গর্বিত পিতা।

আপনার মতামত দিন