বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে বিএনপি ভুল করেছে। আশা করি সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা আগামী নির্বাচনে অংশ নেবে। তবে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনও একদিন। সেই পর্যন্ত বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে। রবিবার (৮ জানুয়ারি) ঢাকার নবাবগঞ্জের বকসনগর উচ্চবিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
রবিবার দুপুরে নবাবগঞ্জের ছোট রাজপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সৈয়দ হোসেনের স্মৃতিফলক উন্মোচন করে শ্রদ্ধা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। এরপর তিনি যোগ দেন বকসনগর উচ্চবিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে। সেখানে তিনি বলেন, ‘দেশ উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। কিন্তু খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে যে সন্ত্রাস ও নৈরাজ্য হয়েছে তাতে অনেক মায়ের কোল খালি হয়েছে।’
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিএনপি ৫ জানুয়ারি নির্বাচন না করে ভুল করেছে। নারায়ণগঞ্জে একটি চমৎকার নির্বাচন হয়েছে। এই নির্বাচনকে বিএনপির অনেক নেতাও সাধুবাদ জানালো। অথচ কয়েকদিন পর খালেদা জিয়া এ নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন। আশা করি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে।’
আগামী নির্বাচনের প্রসঙ্গে তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে যেকোনও দিন নির্বাচন হবে। সেই পর্যন্ত বিএনপিকে অপেক্ষা করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। আমাদের পেছনে ফিরে তাকানোর কোনও সুযোগ নেই। খাদ্য ঘাটতির দেশ আজ খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত হয়েছে। এমনকি চাহিদা মিটিয়ে আজ আমরা খাদ্য রফতানি করছি। এমন দেশই বঙ্গবন্ধু চেয়ছিলেন।’
নবাবগঞ্জের স্মৃতি উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নবাবগঞ্জ নিয়ে আমার অনেক স্মৃতি আছে। ১৯৬৯ সালে একবার এসেছিলাম এখানে। তবে সেদিনের নবাবগঞ্জ আর আজকের নবাবগঞ্জের মধ্যে পার্থক্য অনেক। ওই সময়ের চেয়ে নবাবগঞ্জ অনেক উন্নত হয়েছে। তবে আরও উন্নতি দরকার।’
তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘গুলশান থেকে নবাবগঞ্জ আসতে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় লাগে। হোন্ডার (মোটর সাইকেল) বহর না থাকলে আরও কম সময় লাগত। হোন্ডার মিছিল আমার ভালো লাগে না। ভোলায় আমার বহরে কেউ যদি হোন্ডার মিছিলে থাকে, তাহলে আমি অন্য রাস্তা দিয়ে যাই।’
মোটর সাইকেল প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী স্মরণ করেন ১৯৭০ সালের নির্বাচনের কথা। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু আমাকে ভোলা থেকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। তিনি এক হাজার ৭৫০ টাকা দামের ৫০ সিসির একটি মোটর সাইকেল দিয়েছিলেন আমাকে। কিন্তু ওইটা চালানোর রাস্তা ভোলায় ছিল না। আজ ভোলার চেহারাও বদলেছে। আমি যখন ভোলায় যাই তখন আমার সঙ্গে অনেক গাড়ি বহর থাকে। বঙ্গবন্ধু এমন সুন্দর দেশই চেয়েছিলেন।’
এসময় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘সমুদ্রের গভীরতা মাপা যায়। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর প্রতি বাঙালির ভালোবাসার গভীরতা মাপা যায় না। বঙ্গবন্ধুর দু’টি স্বপ্ন ছিল— দেশের স্বাধীনতা এবং সোনার বাংলাদেশ গড়া। তিনি স্বাধীনতা দিতে পেরেছিলেন, সোনার বাংলাদেশ গড়ে যেতে পারেননি। আমরা তার সুযোগ্য কন্যার নেতৃত্বে সেই সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণ করছি।’
বকসনগর উচ্চবিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুল বাতেন মিয়া। শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেন ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠান উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আশীষ কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন, ঢাকা জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, দোহার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন, নবাবগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা পনিরুজ্জামান তরুণ, নবাবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মরিয়ম জালাল শিমু প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন সোনালী ব্যাংকের এমডি ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ।