নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিজেই অসুস্থ্য

1578

রাজধানী ঢাকার নিকটবর্তী ১৪ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত নবাবগঞ্জ উপজেলা। যেখানে প্রায় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৭ জন মানুষের বসবাস। আর এই বিপুল সংখ্যক মানুষের চিকিৎসা সেবার জন্য রয়েছে উপজেলা পর্যায়ে ৫০শয্যা বিশিষ্ট ১টি সরকারী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।

অপরিচ্ছন্ন পুরাতন ছেড়া চাদরের ভাংঙ্গা বেড , রোগীভর্তি ওয়ার্ড, নোংরা শৌচারগার, দালালদের উৎপাত, জনবলের সংকট ও ওষুধের স্বল্পতা যেখানে নিত্য দিনের চিত্র ।

রোগীদের জরুরি সেবার জন্য অ্যাম্বুলেন্স থাকলেও সচল নয় দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট হয়ে আছে। রোগ নির্ণয়ের দুটি যন্ত্র আছে, একটি নষ্ট, অন্যটি বহুদিনের পুরাতন প্রায় কাজ করতে সমস্যা হয়। দায়িত্ব পালন কালে কোন চিকিৎস কে সেবার বিষয় প্রশ্ন করলে অভিযোগের জবাবে উত্তর আসে লোকবলের সংকট।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক্স-রে (রঞ্জন রশ্মি) মেশিনটি ১৯৯১ সালে স্থাপন করা। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (রেডিও) কর্মকর্তা জানালেন, দীর্ঘদিনের পুরোনো হওয়ায় যন্ত্রটি ভালো কাজ করে না। বেশির ভাগ রোগীই বাইরে থেকে এক্স-রে করিয়ে আনেন।

হাসপাতাল সূত্র মতে, ১৮ জন চিকিৎসক কাজ করেন। সব মিলিয়ে হাসপাতালে জনবল প্রায় ৫৮ জন। বহির্বিভাগে গড়ে ২০০ থেকে ২৫০ জনের মতো রোগী চিকিৎসা নেন প্রতিদিন। রোগী ভর্তি থাকেন প্রায় ৮০ থেকে ১০০ জনের মতো।

অন্য খবর  আগাম জামিনের পরও আবু আশফাককে গ্রেফতারের চেষ্টাঃ পুলিশের  নাকচ

জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় রুপান্তর করা উচিত বলে মনে করেন সংশি¬ষ্ট ব্যক্তিরা।

হাসপাতালে ঢুকতেই প্রথমে ডান পাশে রয়েছে জরুরি বিভাগ। আয়তনে কক্ষটি খুব ছোট কিন্তু নোংরা আর এই পরিবেশে প্রতিদিন কাটা ছেড়া,

ভাঙা হাত ও পা, বিষ পানসহ ক্ষতস্থান পরিষ্কার করাতে অসংখ্য রোগীরা আসেন এদের চিকিৎসার কাজ শেষে নোংরা বেসিনে হাত ধুচ্ছেন চিকিৎসকরা প্রতিনিয়ত।

জরুরি বিভাগের সামনে কয়েকজন ব্যক্তিকে প্রতিদিন দেখাযায়। রোগীরা জানান, তাঁরা বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকের লোক। উন্নত সেবা ও চিকিৎসার কথা বলে রোগী ভাগিয়ে নেন তারা। এক্স-রে বা অন্য কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার যাদের প্রয়োজন তাদের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করেন।

ভর্তি হওয়া রোগীদের ওয়ার্ড দোতলায়। নারী ও পুরষদের দুই ওয়ার্ডে শয্যাসংখ্যা প্রায় ৩২ টির মতো। কিন্তু রোগী ভর্তি থাকে ৮০ থেকে ১০০ জন।

ফলে বারান্দায় ও থাকতে হচ্ছে অনেককে।ওয়ার্ড গুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয়না।ফলে প্রচুর ময়লা খাবার ও আর্বজনার দেখা যায়।শৌচাগারে ঢুকতে হয় নাক চেপে। কেও বিপদে না পরলে ব্যবহার করতে যায় না সাধারনত।

অন্য খবর  দোহার, নবাবগঞ্জ, শ্রীনগরে চলছে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান: সুখবর পাচ্ছে এই অঞ্চলের জনগন

হাসপাতালে পরিচ্ছন্নতাকর্মী আছেন চারজন । খাবার পানির মান খুব বাজে তাই কেউ পান করতে চায় না পানি।জরুরী চিকিৎসা জন্য, রোগী ঢাকায় নিয়ে যেতে ’বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করতে হয়। দুই হাজার টাকার কম যেতে রাজি হন না কেউ। ফলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করে ঢাকায় নিয়ে যেতে হয় বলেন কোমরগঞ্জ থেকে আসা এক আহত রোগীর স্বজন রাজিয়া বেগম।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, ‘অ্যাম্বুলেন্সটি ঠিক করতে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লাগবে। অ্যাম্বুলেন্স চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। দ্রুত পেয়ে যাবো।

উপজেলার বিভিন্ন প্রত্তান্ত এলাকা থেকে আসা রোগীদের অভিযোগ তাঁরা প্রয়োজনে তুলনায় চিকিৎসা পান না। খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ৫ থেকে ৯ জন চিকিৎসক ঢাকা থেকে এসে তাঁরা চিকিৎসক সেবা প্রদান করেন । বেলা ১২ টা থেকে ১টার পর হাসপাতালের বহির্বিভাগে কোনো চিকিৎসককে পাওয়া যায় না। এমন অভিযোগ বহুজনের। ঢাকা থেকে আসা-যাওয়ার কারণ হিসেবে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কামরুন নাহার আবাসন সমস্যার কথা জানান।

আপনার মতামত দিন